সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মুজিববর্ষে বাড়তি ব্যয় না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

মন্ত্রিসভার বৈঠক, কর্মসূচি সমন্বয় করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

মুজিববর্ষে বড় বড় বাজেট না দিয়ে জাতীয় কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি নিতে সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এছাড়া অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়গুলোকে বাড়তি ব্যয় না করা এবং বিদ্যমান বাজেটে চলমান কর্মসূচিগুলোর মধ্যে একটি চোখে পড়ার মতো কর্মসূচিকে মুজিববর্ষে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এ নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এর আগে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে নির্দেশ দিয়েছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন যে আমরা প্রিসাইজলি বলে দিয়েছি মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়-বিভাগ তাদের একটা নোটেবল প্রোগ্রামকে মুজিববর্ষের প্রোগ্রাম হিসেবে ডিক্লিয়ার করবে। তবে যদি ব্যতিক্রমী কোনো কাজ থাকে তার জন্য তারা চিন্তা করতে পারে। কিন্তু বড় বড় বাজেট দিয়ে নতুন কোনো কাজ করার দরকার নেই।

উদাহরণ হিসেবে এসেছে- মুজিববর্ষ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে অর্থ বিভাগ প্রোগ্রাম নিল যে ডিসেম্বরের মধ্যে ছয় লাখ পেনশনারকে বাড়িতে বসে পেনশন দিয়ে দেবে। এ রকম ভালো একটা প্রোগ্রামকে মুজিববর্ষের প্রোগ্রাম হিসেবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনো কোনো প্রোগ্রাম করতে গিয়ে ফান্ড লাগে, যেমন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পী আনবেন- এটা তো পেমেন্ট করতে হবে। ওখানে যে স্টেজ হবে সেজন্য বাড়তি টাকা দেওয়া হবে না, সেটা পিডবিøউডি করে দেবে। শুধু বাজেট না, উনি বলেছেন যে নতুন নতুন কিছু দরকার নেই। আমার যে প্রোগ্রামটা আছে, সেটার মাধ্যমে যদি মানুষ ও দেশের কল্যাণে অবদান রাখতে পারি- সেটা মুজিববর্ষের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে করা। নরমালি যে প্রোগ্রাম আছে সেটাই যেন আরো ইফেকটিভ করে দেন।

মন্ত্রণালয়গুলো কি বেশি বাজেট দাবি করেছে, সে কারণে বাড়াবাড়ি না করতে বলেছে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব বলেন, না। অনেকেই হয়তো বুঝতে পারেনি। অনেকেই ভাবছে হয়তো নতুন প্রোগ্রাম দিতে হবে। বাজেট তো আগে থেকেই নেওয়া হয়, বাজেটের পেরিফেরিতে যে প্রোগ্রাম আছে সেগুলোর মধ্যে একটা নোটেবল প্রোগ্রামকে এ বছরের প্রোগ্রাম হিসেবে ট্যাগ করে দেন।

সেতু বিভাগ থেকে আমরা মুজিববর্ষের প্রোগ্রাম হিসেবে ঘোষণা করেছিলাম যে, ২০২১ সালের ১৭ মার্চের আগেই পদ্মাসেতুর ফিজিক্যাল শেষ করে দেবো। এজন্য তো অনেক টাকা লাগবে, ওই টাকা সরকারের কাছ থেকে চাচ্ছি না। কারণ, প্রজেক্টে তো ওই টাকা দেওয়া আছে। একটু বেশি ইফোর্ট দিয়ে কাজটাকে এগিয়ে নিয়ে এসে মার্চের মধ্যে করার চেষ্টা করবো। এগুলো ইনফরমালি আলোচনা হয়েছে, কেবিনেটের পর।

দলীয়ভাবে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি করে প্রোগ্রাম করছে এমন অপর একটি প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বলা হয়েছে যে সেন্ট্রাল কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে প্রোগ্রাম করবেন। মুজিববর্ষের অর্থ ছাড় করার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি কি আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সেটা না। এতো বড় একটা প্রোগ্রামের বাজেটের জন্য একটা বাজেট কমিটি তো থাকতে হবে। একটা বাজেট কমিটি করে দেওয়া হয়েছে যাতে কোথায় টাকা দেবো, কত টাকা দেবো সেটা নজরে থাকে।

কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো বাজেট আছে কিনা? এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, সবারই আছে। সংসদ থেকে যেমন বলেছে যে টাকা দিতে হবে না, নিজেদের বাজেট থেকেই করবো। দু’একটা সেশন হবে, বিদেশিরা এসে ভাষণ দেবেন। তারা বলেছে আলাদা বাজেট দিতে হবে না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জাতীয় কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে প্রোগ্রামে করতে হবে।

জাতীয় কৃষি স¤প্রসারণ নীতি-অনুমোদন
সমবায় ভিত্তিতে জমি চাষাবাদ ও ফসল উৎপাদন বাজারজাতকরণের সুযোগ রেখে জাতীয় কৃষি স¤প্রসারণ নীতি-২০২০ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০২০ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এই নীতিতে সমবায় ভিত্তিক চাষ পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনেক ইক্যুইপমেন্ট আছে, যেগুলোর দাম ২০/২২ লাখ টাকা। কয়েকজন কৃষক তিন মাসের জন্য একটা কিনলে তাদের জন্য লাভজনক হয় না। সেজন্য সমবায়ভিত্তিতে সবাই মিলে যদি এটা কেনা যায়, তাহলে সবাই সেটা ব্যবহার করতে পারবে। ওইভাবে বাজার জাতকরণটাও যদি সমবায় ভিত্তিতে হয়, বিশেষ করে চাষের বিষয়টি আজকে বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ধরুন ১০০ একর জায়গা নেওয়া হল, এর মধ্যে সবার জমি থাকল। সবাই যদি একই টাইপের ফসলে যায়, তাহলে কম্বাইন্ড পদ্ধতিতে চাষ করে, একসঙ্গে ফসল কাটা হবে, একসঙ্গে তুলে নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে মার্কেটিংয়ে সুবিধা হবে। যারা পণ্য কেনে তাদের এক জায়গায় নিয়ে আসলে একসঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে। তখন জমির পরিমাণ অনুযায়ী ব্যয় ও লাভ বিশ্লেষণ করে প্রত্যেক কৃষককে টাকা দিয়ে দেওয়া যাবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সমবায় ভিত্তিক চাষে প্রোডাকটিভিটি (উৎপাদনশীলতা) বৃদ্ধি পাবে। এ বিষয়ে একটি পাইলট প্রজেক্টের বিষয়ে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এটায় দুইগুণ, আড়াইগুণ পর্যন্ত বেশি লাভ হয়। ছোট জায়গায় হঠাৎ করে ভিন্ন একটি ফসল বাজারজাতকরণে খুব অসুবিধা হয়।এক সঙ্গে বড় একটি জায়গায় সমবায় ভিত্তিতে চাষ থেকে শুরু করে বাজার জাতকরণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। নীতিমালায় এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ নীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে সব শ্রেণির কৃষক ও উদ্যোক্তাদের চাহিদাভিত্তিক প্রযুক্তি ও তথ্য সেবা প্রদানের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সহনশীল, পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ, টেকসই ও পুষ্টিসমৃদ্ধ লাভজনক ফসল উৎপাদন নিশ্চিত করা।

ফসল খাতের মূল প্রতিবন্ধকতা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, কৃষি স¤প্রসারণের ধারণা ও বৈশিষ্ট্য, কৌশলগত স¤প্রসারণ পরিকল্পনা, কৃষি স¤প্রসারণ সেবার বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা গুলো নীতিমালায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমে এ নীতিটি বাস্তবায়ন করা গেলে কৃষকের চাহিদা অনুয়ায়ী সম্প্রসারণ সেবা প্রদানের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন ও উপাদনকে আরও ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, সমবায় ভিত্তিতে বড় জায়গায় একসঙ্গে চাষাবাদ, ফসল উৎপাদন ও বিপণনের ব্যবস্থা কীভাবে করা যায় সেজন্যই এ নীতিমালা করা হয়েছে। এর আগে ১৯৯৬ সালে প্রথম কৃষি সম্প্রসারণ নীতিমালা করা হয়। সেটি এখন পুরনো হয়ে গেছে। এটি আপডেট করেই ২০২০ সালে নতুন নীতিমালা করা হলো।

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার বলেন, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০২০ এর খসড়ার চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর আগে এ আইনের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ওই আইনের বড় কোনও পরিবর্তন না করেই চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলো। সুনামগঞ্জে দেশের ৪৭তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে।

তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ হাওরবেষ্টিত এলাকা। শিক্ষার প্রসারের জন্য সরকার সে এলাকায়ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় করছে। অন্যান্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম, নীতিমাল ও আইন মেনেই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন করা হয়েছে। এ আইনে ৫৫টি ধারা আছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সুনামগঞ্জের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ধরলে দেশের মোট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা হবে ৪৭টি। এর মধ্যে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় ১৭টি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ৬টি, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ৪টি এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০টি। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি হচ্ছে ২০তম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Anwarul Kabir ৩ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৯ এএম says : 0
শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ।
Total Reply(0)
ইমতিয়াজ কবির বিপু ৩ মার্চ, ২০২০, ১২:৪৯ এএম says : 0
Great & Joy Bangla, Joy Bangabandhu
Total Reply(0)
Jesmin Nahar ৩ মার্চ, ২০২০, ১২:৫০ এএম says : 0
তিনিই মহান যিনি অন্য সকলের জন্য ত্যাগ করেন, যা তাঁকে অমর করে রাখে।
Total Reply(0)
রিদওয়ান বিবেক ৩ মার্চ, ২০২০, ১২:৫৩ এএম says : 0
ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। খুবই ভালো একটা পরামর্শ দিয়েছেন। বাড়তি ব্যয় কমাতে পারলে দেশ এমনিই এগিয়ে যাবে।
Total Reply(0)
সত্য বলবো ৩ মার্চ, ২০২০, ১২:৫৩ এএম says : 0
মুজববর্ষ সফল ও স্বার্থক হোক, সেই কামনা করছি।
Total Reply(0)
জোহেব শাহরিয়ার ৩ মার্চ, ২০২০, ১২:৫৪ এএম says : 0
শুধু মুজিববর্ষে নয় প্রতিটি বর্ষেই হিসাব নিকেশ করে টাকা খরচ করতে হবে।
Total Reply(0)
চাদের আলো ৩ মার্চ, ২০২০, ১২:৫৪ এএম says : 0
ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। শুকরিয়া আপনার
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন