লর্ড ক্লাইভ ছিলেন একজন ইংরেজ। ১৭২৫ সালে তিনি ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি চাকরিতে যোগদান করেন মাদ্রাজে। তার কোম্পানির নাম ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। প্রথম চাকরি হিসেবে পেয়ে ছিলেন কেরানির পদ। পরে তিনি এই কোম্পানির সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৭৫১ সালে ক্যাপ্টেন পদ লাভ করেন। তিনি ফরাসিদের একাধিকবার যুদ্ধে পরাজিত করেন। আনুমানিক ১৭৫০ সালে তিনি কলকাতায় আসেন। তখনই তিনি বাংলার স্বাধীনতা চিরতরে ছিনিয়ে নেয়ার কথা ভাবতে শুরু করেন। ১৭৫৬ সালে বাংলা, বিহার এবং উরিষ্যার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলকাতায় বৃটিশদের এক যুদ্ধে পরাজিত করলে ক্লাইভ মাদ্রাস থেকে সৈন্যবাহিনীসহ কলকাতায় ছুটে আসেন এবং কলকাতা ও হুগলী দখল করেন যা ছিল নবাব সিরাজের রাজ্যভুক্ত। পরবর্তীতে ক্লাইভ ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশী প্রান্তরে নবাব সিরাজকে এক প্রতারণায় যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং মীরজাফরকে বাংলার সিংহাসনে বসান। ক্লাইভ যা বলতেন মীরজাফর সেভাবেই চলতেন। তাকে বলা হত ক্লাইভের গাধা। ১৭৬৪ সালে বক্সার যুদ্ধে ক্লাইভ জয়ী হয়ে বাংলা, বিহার এবং উরিষ্যার দেওয়ানি পদ লাভ করেন। এই পদটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমেই ইংরেজ কোম্পানি বাংলা, বিহার এবং উরিষ্যার প্রধান ক্ষমতায় অধিকারী হন। নবাবের শক্তি এতে দুর্বল হয়ে পড়ে। ক্লাইভ নিজেই স্বীকার করেছেন- ‘দেওয়ানির মাধ্যমে কোম্পানি বাংলার সকল ক্ষমতার উৎসে পরিণত হয়।’ ক্লাইভ ছিলেন সাহসী, অত্যন্ত চতুর ও অর্থলোভী। এ জন্য ইতিহাসে তিনি একজন ঘৃনিত ব্যক্তি। ক্লাইভের শক্তি এত বেশি ছিল যে ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের আগেই তিনি নবাব সিরাজের কাছ থেকে বিনা পয়সায় বাংলায় ব্যবসা করার সুযোগ লাভ করেন এবং প্রচুর অর্থ উপার্জন করে ধনী হয়ে উঠেন। তোমরা বড় হলে ক্লাইভ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে।
দৌলতগঞ্জে লর্ড ক্লাইভের স্মৃতি
চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগরে দৌলতগঞ্জে আজও লর্ড ক্লাইভের স্মৃতি হিসেবে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি ভাঙা বিল্ডিং রয়েছে। জানা যায়, ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধের আগেই দৌলতগঞ্জের ভৈরব নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম তীরে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। এটা প্রথমে ছিল দোতলা এবং ছয় রুমবিশিষ্ট। এখানে ছিল ক্লাইভের কাপড়ের ব্যবসা। পরবর্তীতে বৃটিশ আমলে এটি অতি পুরনো হয়ে গেলে দোতলা ভেঙে একতলা করা হয় এবং ছাদের বদলে লাল টালি ব্যবহার করা হয়। ছবিতে যা ত্রিকোণ আকারে দেখা যায়। পরবর্তীতে টালির বদলে টিনের ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে উত্তর অংশে যে ভাঙা দেয়ালের চিহ্ন রয়েছে এটি ছিল এই তিনতলা বিল্ডিংয়ের একটি ঘর। ১৭৩৫-৪০ সালের আগে ইংরেজরা এখানে বসে কফি খেত। তখন থেকে নাম হয়ে যায় ‘কফি ঘর’। এলাকার দু’একজন অতি বয়স্ক মানুষ এই ভাঙা ঘর ও দেয়ালকে লর্ড ক্লাইভের কাপড়ের দোকান বলে থাকে। এ এলাকাটি ছিল পলাশী থেকে আনুমানিক ৫০ কিলোমিটার দূরে।
ক্লাইভ ছিলেন অত্যন্ত সাহসী। এদেশের ইটের আকৃতি ব্যবহার না করে তিনি ইংরেজ রীতিতে বড় ইট দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেন। আজও এই ইট দেখে মানুষ অবাক হয়- বাবা এতবড় ইট! লম্বায় সাড়ে দশ এবং পাশে ৬ ইঞ্চি। জানা যায় ১৭৫৫ সালে ক্লাইভ দৌলতগঞ্জে এসেছিলেন এবং দুই দিন ছিলেন। শেষে নিজ দেশে তিনি আত্মহত্যা করেন। দৌলতগঞ্জ ছিল এত দিন দেশের প্রখ্যাত একটি এলাকা। লর্ড ক্লাইভের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান যে স্থানে এখানে ছিল ক্লাইভের বহু আগে অন্যদের পাকা ব্যবসা স্থান, সেনা ক্যাম্প এবং ইটের ঘরবাড়ি। জায়গা উঁচু। দেখলে মনে হয় এর নিচে বিল্ডিং চাপা পড়ে আছে। কিছু দিন আগে হাবীবুর নামে এক অতিলোভী লোক অত্যন্ত অন্যায়ভাবে এর ভিটি খোড়তে গেলে পুলিশ এবং এলাকার তরুণরা বাধা দেয়।
বন্ধুরা মনে রাখতে হবে অজানা দৌলতগঞ্জের এই উঁচু ভিটি আমাদের জাতীয় সম্পদ। এখানে মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে আমাদের জাতির অনেক অজানা ইতিহাস। সম্প্রতি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সরকার এটি খনন করবে। এ নিয়ে দৌলতগঞ্জবাসীর আনন্দের সীমা নেই। ছবিগুলো পাঠিয়েছে তোমাদের ভাইয়া আতিকুজ্জামান চঞ্চল।
ষ দুলাল চৌধুরী
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন