সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে প্রবল সংঘর্ষের পর তুরস্ক ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সমাধানসূত্রের আশায় বৈঠকে বসেছেন। এরদোগান রাশিয়া ও ইউরোপের উপর চাপ সৃষ্টির বদলে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসতে পারেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান
দুই নেতাই যে যার দেশে ‘লৌহ পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত। তাদের মধ্যে কখনো চরম সংঘাত, কখনো নিবিড় বন্ধুত্ব দেখা যায়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের মধ্যে এমন জটিল সম্পর্ক সিরিয়ার পরিস্থিতির উপর বার বার প্রভাব ফেলে। পুতিন বাশার আল আসাদের ক্ষমতা জোরালো করতে বদ্ধপরিকর। অন্যদিকে এরদোগান কুর্দিদের দমন করতে ও আসাদকে দুর্বল করার ব্রত নিয়েছেন। সম্প্রতি দুই নেতার মধ্যে সংঘাতের জের ধরে সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে মারাত্মক হিংসার শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ। গত সপ্তাহে সিরিয়ায় তুরস্কের সৈন্যদের উপর বিমান হামলার পর এরদোগান ও পুতিনের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে।
জটিল এই সংকট মেটাতে পুতিন বৃহস্পতিবার মস্কোয় এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক করবেন। দুই নেতাই আলোচনার মাধ্যমে সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে সংঘাত বন্ধ করার আশা প্রকাশ করেছেন। পুতিন দুই দেশের কিছু যৌথ পদক্ষেপ সম্পর্কে ঐকমত্যের উপর জোর দিচ্ছেন। তিনি চান, বাশার আল আসাদের বাহিনী গোটা দেশের উপর আবার নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার যে উদ্যোগ নিচ্ছে, এরদোগান যেন তাতে বাধা না দেন। অন্যদিকে এরদোগান সেই অঞ্চলে আবার অস্ত্রবিরতির উপর জোর দিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, অতীতে এমন অস্ত্রবিরতি সম্পর্কে সমঝোতা শেষ পর্যন্ত কার্যকর করা সম্ভব হয় নি। দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে বোঝাপড়ার শর্ত অমান্য করার অভিযোগ এনেছে। এবার তিনি আসাদের বাহিনীকে ২০১৮ সালের সীমানায় পিছিয়ে যাবার জন্য চাপ দিচ্ছেন।
সিরিয়াকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে সংঘাতে ইউরোপও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ছে। এরদোগান তার নীতি কার্যকর করতে ইউরোপের সমর্থন ও সহায়তার দাবি করেছেন। কিন্তু ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে তিনি গ্রিসের সীমান্ত খুলে দিয়ে শরণার্থীদের ইউরোপে প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছেন। তবে এভাবে চাপ সৃষ্টি করেও এরদোগান ইউরোপের সহায়তা পাচ্ছেন না। গ্রিস সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ায় শরণার্থীদের অবস্থা কঠিন হয়ে উঠেছে। তুরস্কের কর্তৃপক্ষকেই সীমান্তে শরণার্থীদের ভিড় সামলাতে হচ্ছে।
তর্জনগর্জন ও চাপ সত্ত্বেও এরদোগান শেষ পর্যন্ত রাশিয়া ও ইউরোপের সামনে নতি শিকার করতে বাধ্য হবেন, এমন সম্ভাবনাই উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। পুতিন আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্রবিরতি মেনে নিলেও আসাদ বাহিনীর উপর সম্ভবত কোনো চাপ সৃষ্টি করবেন না। বরং সিরিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক শক্তি হিসেবে তিনি রাশিয়ার প্রভাব আরও জোরদার করছেন।
২০১৫ সালের শরণার্থী সংকটের পর ইউরোপও বহির্সীমানা আরও মজবুত করে তুলেছে। একাধিক পদক্ষেপের মাধ্যমে শরণার্থীদের অবৈধ প্রবেশের পথে নানা বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। মানবিক বিপর্যয় এড়াতে কিছু শরণার্থীকে আশ্রয় দিলেও বিশাল সংখ্যক শরণার্থীদের ঢল নামার সম্ভাবনা এবার প্রায় নেই বললেই চলে। সূত্র: এএফপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন