শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সচেতনতার বিকল্প নেই

| প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

চীনের উহান থেকে প্রাণঘাতী যে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি তা ক্রমেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। ভয়াবহ এই ভাইরাসের যথাযথ প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। কেবল সর্দি-কাশি বা শ্বাসকষ্টের চিকিৎসাই বিশ্বব্যাপী দেয়া হচ্ছে। একমাত্র প্রতিষেধক হিসেবে সতর্কতা, সচেতনতা ও সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ ভাইরাস চীনসহ বিশ্বের প্রায় ৮৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সারাবিশ্বে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজারের উপরে। এর মধ্যে শুধু চীনেই মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় তিন হাজার। বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হয়েছে ৯৫ হাজারের বেশি এবং চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হজারের উপরে। ভয়াবহ এ ভাইরাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকেও ধাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায়ও পাওয়া গেছে। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এটি দক্ষিণ এশিয়ায়ও ছড়িয়ে পড়তে পারে। আলহামদুলিল্লাহ! বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া কাউকে পাওয়া যায়নি। সন্দেহভাজন রোগীদের আইসোলেশনে রেখে নিশ্চিত হয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সকল স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দরগুলোতে বিশেষ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া এবং এর আশঙ্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। ইতোমধ্যে ১৩টি দেশ স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ইটালি, দক্ষিণ কোরিয়া শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। ফ্রান্সে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ১২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভারতের দিল্লীতেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে সারাবিশ্বে ২৯ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাকার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু শিক্ষাকার্যক্রমই নয়, করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা চলছে। আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমনকি ভ্রমনের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচকতা দেখা দিলেও আল্লাহর রহমতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়নি। তবে বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ২০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ঘনবসতিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়াতে করোনা সংক্রমিত হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। যেখানে উন্নত বিশ্ব অত্যাধুনিক চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এ ভাইরাস মোকাবেলায় সক্ষম হচ্ছে না, সেখানে দুর্বল চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে তা মোকাবেলা করা অত্যন্ত কঠিন। এক্ষেত্রে আগাম সতর্ককতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। ইতোমধ্যে বিদেশ থেকে যারা আসছেন, তাদের পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যাদের সন্দেহ হচ্ছে, তাদেরকে আইসোলেশন বা আলাদাভাবে হেফাজতে নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মোংলা বন্দরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে তিনজন অসুস্থ বিদেশি নাবিককে আইসোলেশনে নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, গত দুই দিনে ১০৫ জন সন্দেহভাজনের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে এ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যেহেতু প্রতিবেশী ভারত-শ্রীলঙ্কায় এ ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা গেছে, তাই আমাদের দেশে দেখা যাবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এজন্য অত্যন্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ রোগ মোকাবেলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। রাজধানীর দুটি হাসপাতাল পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেডসহ পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায়। তারা মানুষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, কাশি দেয়ার সময় লালা যাতে অন্যের শরীরে না লাগে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে এবং সাবান দিয়ে নিয়মিত হাত ধুতে হবে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যেহেতু কোনো প্রতিষেধক নাই, তাই এ থেকে মুক্ত থাকার উপায় সতর্কতা অবলম্বন করা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার সাধ্যমতো প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এক্ষেত্রে শুধু এ মন্ত্রণালয়ই নয়, সরকারের সকল মন্ত্রণালয়কেই উদ্যোগী হতে হবে। সমন্বিতভাবে প্রতিকার ব্যবস্থায় শামিল হতে হবে। দেশে অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে, তাদেরও এ ব্যাপারে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের সেনাবাহিনীকেও এক্ষেত্রে তার উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে প্রস্তুত থাকা উচিৎ। জনসাধারণকে সতর্ক ও সচেতন করতে সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানকে প্রচারণামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। যেহেতু এ ভাইরাসের প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি, তাই এ ব্যাপারে আমাদের প্রত্যেককে প্রতিনিয়ত মহান আল্লাহ’র সাহায্য কামনা করতে হবে। এ রোগের হাত থেকে বেঁচে থাকার জন্য তাঁর দরবারে দোয়া করতে হবে। একমাত্র তাঁর দয়া, অনুগ্রহ এবং ক্ষমা ছাড়া এ রোগ কেন কোনো রোগ থেকেই মুক্ত থাকা সম্ভব নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন