বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

দিল্লি গণধর্ষণের অপরাধীদের ফাঁসিতে দেরি হচ্ছে কেন?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

২০১২ সালের দিল্লি বাসে গণধর্ষণের অপরাধী মুকেশ কুমার সিং, পবন গুপ্তা, বিনয় শর্মা ও অক্ষয় কুমার সিংকে ২০ মার্চ ভোর সাড়ে পাঁচটায় ফাঁসি দেয়া হবে। বুধবার পবনের ক্ষমাপ্রার্থনার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজের দিন থেকে ফাঁসির নির্দেশের মধ্যে ১৪ দিনের ফারাক রাখতে হয়।

জানুয়ারি মাস থেকে এই নিয়ে ফাঁসির চতুর্থ তারিখ স্থির হল। এই পর্যায়ে বহু আবেদন করা হয়েছে এবং সেগুলি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, একাধিকবার মৃত্যুদন্ড স্থির হয়েছে এবং তা পিছিয়েও গিয়েছে। তার কারণ মৃত্যুদন্ডের আইনি পদ্ধতিগুলির মধ্যে বহুরকম নিয়ন্ত্রণপদ্ধতি চালু রয়েছে, এবং পূর্ববর্তী ব্যর্থতাগুলির সাপেক্ষে মৃত্যুদন্ডাজ্ঞাপ্রাপ্তদের সুরক্ষার জন্য একটি অতিরিক্ত বলয় তৈরি করা হয়েছে।

আইনি পদ্ধতি : ফৌজদারি আইনের নীতি হল একজন নিরপরাধকে শাস্তি দানের চেয়ে ১০ জন অপরাধীকে মুক্তি দিয়ে দেওয়া শ্রেয়। একজন অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড দেবার প্রক্রিয়াটি জটিল, এবং বিভিন্ন সুরক্ষাবলী দ্বারা আবৃত। ফলে নিম্ন আদালত মৃত্যুদন্ড দিতে পারে কেবলমাত্র বিরলের মধ্যে বিরলতম মামলায়- এবং সে নির্দেশ স্বয়ংক্রিয় উপায়েই হাইকোর্টে যায় নিশ্চয়তার জন্য। মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয় কেবলমাত্র হাইকোর্টের সম্মতি পেলে, তবেই।

এরপর দন্ডিতরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের পর, অপরাধী রিভিউ পিটিশন দিতে পারেন, আলাদা করে কিউরেটিভ পিটিশনও দিতে পারেন। এগুলি স্বাভাবিক আইনি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে রায়ের ভুল সংশোধন করা যেতে পারে। এর পর প্রেসিডেন্টর কাছে ক্ষমাভিক্ষার আবেদন জানানো যেতে পারে। এ ধরনের পিটিশন দেয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র প্রয়োজন।

এরপর সুপ্রিম কোর্টে অপরাধীরা প্রাণভিক্ষা নিয়ে প্রেসিডেন্টর সিদ্ধান্তের যাথার্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করতে পারেন। এই পিটিশনের পর আর কোনও আইনি পদ্ধতি থাকে না। এ আবেদন নাকচের পর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়।
অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টে দন্ডাজ্ঞা বলবৎ থাকার পরেও চারদফা পিটিশন করা যেতে পারে। ফলে হাইকোর্ট মৃত্যুদন্ডে সম্মতি দিলেও যতক্ষণ না এই সমস্ত পদ্ধতিগুলি নিঃশেষিত হছে, ততক্ষণ মৃত্যুদন্ড কার্যকর না-ও হতে পারে।

অতিরিক্ত জটিলতা : ১৯৭৫ সালে, তিনজন ব্যক্তিকে একই অপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সকলের এক শাস্তি হয়নি। একই অপরাধের জন্য একজনের মৃত্যুদন্ড ও একজনের দন্ড লঘু হবার ঘটনায় সকলেই সচকিত হন এবং এমন যাতে আর না ঘটে, সে কারণে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় একই অপরাধের জন্য অপরাধের সাজা হবে একসঙ্গে।

এর অর্থ একজন দোষীর পিটিশন কোনও ফোরামের সামনে বিচারাধীন থাকলে, সমস্ত সহ অপরাধীরাও তার দ্বারা সুরক্ষিত। দিল্লি গণধর্ষণের মামলায় চার অপরাধী চারবার করে, মোট ১৬ বার এক এক করে দন্ড মওকুফের বা দন্ড কমানোর আবেদন করতে পারবেন।
বর্তমান মামলার হাল : প্রথম মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় সুপ্রিম কোর্ট শাস্তির বিষয়ে সম্মতি দেবার ২ বছর ৮ মাস পর, গত ৭ জানুয়ারি। এর পর প্রত্যেক অপরাধী আলাদা করে পিটিশন ফাইল করতে থাকেন, শাস্তিপ্রদানের তারিখের ঠিক আগে, এবং তার পর পিটিশন বিচারাধীন রয়েছে বলে তারিখ পিছোনোর আবেদন করেন। মঙ্গলবার ফাঁসির তারিখ স্থির হয়েছিল, সোমবার প্রাণভিক্ষার আবেদন করে পবন।

এখনও পর্যন্ত চার অপরাধীরই প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছে। মুকোশ ও বিনয় প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হবার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যে আবেদন করেছিল, খারিজ হয়ে গিয়েছে তাও। তবে পবন ও অক্ষয়ের দিক থেকে এখনও সেই আবেদন দাখিল করা হয়নি।

অপরাধীদের আইনজীবী এপি সিং ইঙ্গিত দিয়েছেন পবনের নাবালকত্ব খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে তার বিরুদ্ধে তিনি কিউরেটিভ পিটিশন দাখিল করবেন। পবন ও অক্ষয়ের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হবার বিরুদ্ধেও তিনি সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দেবেন, এমনটাও মনে করা হছে।

এই মামলার যা গতিপ্রকৃতি, তাতে বলাই যায় এই সব আবেদনও খারিজ হয়ে যাবে শিগগিরই। মুকেশ ২৮ জানুয়ারি তার প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হবার পরে সে নিয়ে আবেদন করেছিল ২৮ জানুয়ারি। সুপ্রিম কোর্ট পরদিনই সে আবেদন খারিজ করে দেয়। ১ ফেব্রæয়ারি তাদের ফাঁসি হয়েই যেত, যদি না বিনয় ২৯ জানুয়ারি বিনয় প্রাণভিক্ষার আবেদন করত। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন