বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

‘ধন্যবাদ অধিনায়ক’

ক্যাপ্টেন ম্যাশের রঙিন বিদায়

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

হুট করে শেষ হয়ে গেল জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ৩৮তম ওভারে পরপর দুই বলে সিকান্দার রাজা ও চার্লটন সুমাকে ফিরিয়ে দিলেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। আর তাতে যেন অবসান ঘটলো বহুল প্রতীক্ষিত এক উপলক্ষের। তামিম তো ছিলেনই, সাইডবেঞ্চ থেকে একে একে মাঠের ভেতর যেন উড়ে এলেন মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ থেকে শুরু করে নবাগত নাঈম, আফিফরাও। উচ্ছ¡াস যতটা সিরিজ জয়ের তার চাইতে বেশি মাশরাফি বিন মুর্তজাকে সেই উৎসবের আমেজে বিদায় জানাবার।

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আগের দুই ওয়ানডেতে তেমন দর্শক দেখা যায়নি। গতকাল তৃতীয় ওয়ানডেতে দৃশ্যটা কিছুটা হলেও পাল্টেছে। বেশ ভালোসংখ্যক দর্শকের উপস্থিতি। প্রচুর ব্যানার। এর মধ্যে বেশির ভাগ ব্যানারেই একটি নাম- মাশরাফি! জয়ের পর এ নামটিই মাথায় করে রাখলেন তামিম-লিটনরা। অধিনায়ক মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচ বলে কথা। জিম্বাবুয়েকে ১২৩ রানে হারিয়ে তার শেষটা যেমন রাঙিয়েছেন ক্রিকেটারেরা তেমনি মাশরাফিকে কাঁধে তুলে মাঠও ঘুরেছেন তামিমরা। খেলা শেষে ক্রিকেটারেরা সবাই পড়েছিলেন মাশরাফির ২ নম্বর জার্সি- যেখানে বুকের ওপর বড় করে লেখা ‘ধন্যবাদ অধিনায়ক।’
অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির গতকাল শেষ ম্যাচটি ছুটির দিনে। এ দুটি উপলক্ষ মিলিয়ে গ্যালারিতে দর্শক সমাগম হবে এবং তাদের ব্যানার-ফেস্টুনে যে মাশরাফির প্রাধান্য থাকবে সেটি অনুমিতই ছিল। বৃষ্টিবিঘিœত এ ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৪৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৩২২ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টি আইনে এ লক্ষ্যটাই জিম্বাবুয়ের জন্য বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ ওভারে ৩৪২। এই পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৭.৫ ওভারে জিম্বাবুয়ের ইনিংস ৬ উইকেটে ১৬৪ রানে পরিণত হলে ম্যাচের আর কী থাকে!

যেটুকু বাকি থাকে তা শুধুই আনুষ্ঠানিকতা আর অধিনায়ক মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচকে যতটুকু সম্ভব রাঙানো। ব্যাটিংয়ে তামিম ইকবাল-লিটন দাসের পর বোলিংয়ে ‘যৌথ প্রযোজনা’য় সে কাজটিই করেছেন সাইফউদ্দিন-তাইজুলরা। উইকেট উদযাপনের শুরুটা করে দিয়েছিলেন ‘ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাসটিক’ নিজে। তাতে তৃতীয় ওয়ানডেতে ১২৩ রানের জয়ে জিম্বাবুয়েকে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করল বাংলাদেশ। আর অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি তার শেষ ম্যাচে দেখা পেলেন ৫০তম জয়ের। ৩৭.৩ ওভারে ২১৩ রানেই অলআউট জিম্বাবুয়ে। আর তাতে নিজেদের ১৩টি হোয়াইটওয়াশের মধ্যে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ধবল ধোলাইয়ের উৎসবে মেতেছে বাংলাদেশ ৫ বার।

ম্যাচ শেষ হতে না হতেই মাশরাফিকে কাঁধে তুলে নিলেন তামিম। ল্যাপ অব অনার দিলেন গোটা স্টেডিয়ামজুড়ে। নামার পরই একে একে উষ্ণ অভিনন্দনে লাক্কাতুরার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছিল। তাতে বাধ সাধলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। ক্রিকেটে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিসিবির পক্ষ থেকে হাতে তুলে দিলেন সম্মাননা ক্রেস্ট। এই সময়ের মধ্যেই একটি জার্সিতে অটোগ্রাফ দিয়ে নিয়ে এলেন সতীর্থরা। হলো ফটোসেশন। মাশরাফিকে ঘিরে বয়ে গেল আবেগের জোয়ার। সতীর্থদের এই আয়োজনে চমকে গেলেন মাশরাফিও। তার কণ্ঠে ফুটে উঠল কৃতজ্ঞতা, ‘অনেক বড় সম্মান আমার জন্য। সম্ভবত মাঠেই সবচেয়ে সেরা উপহার পেয়েছি (দলের জয়)। ক্রিকেট বোর্ড, আমাদের ছেলেরা, সবাই ছিল দারুণ। সবাইকে ধন্যবাদ।’

ম্যাচ শেষে এই ম্যাচেরই উপলক্ষ রঙিন করার দুই কারিগর ক্যাপ্টেন ম্যাশকে নিয়ে জানালেন নিজেদের অনুভুতি। ওপেনার তামিম ইকবাল বলেছেন, ‘জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে আমাদের অধিনায়কের বিদায়কে রাঙিয়ে তুলবো- কথাটি আগের দিন বলেছিলাম আমি। আজ (গতকাল) কাজটা করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য উনি যা করেছেন তা কোনো ক্রিকেটার, ক্রিকেট বোর্ড, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সমর্থক কারো কোনোদিন ভোলা উচিত নয়। ২০১৫ সালে আমরা একটি জায়গায় ছিলাম, ২০১৯ সালে একটা অবস্থায় এসেছি। উনার হাত ধরেই। ওয়ানডেতে বিশেষ করে গোটা ক্রিকেটবিশ্ব আমাদের এখন যেভাবে মূল্যায়ন করে, এটা মাশরাফি ভাইয়ের জন্যই সম্ভব হয়েছে। আমার জন্য, আমাদের জন্য তিনি যা করেছেন, তা কখনোই ভোলার নয়। অধিনায়ক হিসেবে না পেলেও খেলোয়াড় হিসেবে আশাকরি আরো অনেক দিন তাকে পাব আমরা।’ লিটন দাস বলেন, ‘আমার সৌভাগ্য আমি তার অধিনায়কত্বেই আমার ক্যারিয়ার শুরু করতে পেরেছি। তখন থেকেই মাশরাফি ভাই আমাকে সাপোর্ট করে আসছেন। এখনো তিনি তাই করেন। মাঠে উনি যে ক্যাপ্টেন তা তার আচরণে বোঝার উপায় নেই। আমরা মাশরাফি ভাইয়ের অবদান কখনো ভুলব না। তার জন্য শুভ কামনা রইল।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন