বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

ইসলামে নারীর অধিকার, নিরাপত্তা ও সম্মান

মোহাম্মদ আবদুল অদুদ | প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০২০, ৬:১০ পিএম

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আমাদের প্রিয় ধর্ম ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নারীকে উপস্থাপন করার প্রয়াসে এ লেখা।প্রশ্ন হলো, অধিকার আর মর্যাদা কি কাগজে কলমে আর শ্লোগানে সম্ভব? হৃদয় যদি মেনে না নেয়, তখন ছিড়ে যায় কাগজ, ভেঙে যায় কলম, থেমে যায় শ্লোগান। আমাদের সমাজের অবস্থা যখন এমন, তখন দেখি ইসলাম কি বলে?
নারী ও পুরুষের যথাযথ অধিকার নিশ্চিত করেছে ইসলাম। আর এভাবে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করেছে। জানমাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা এবং সর্বোচ্চ সম্মান ইসলামই নারীদেরকে প্রদান করেছে। মহান আল্লাহ নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে মানবসমাজের পূর্ণতা দান করেছেন। মহান আল্লাহর বাণী, হে মানবগণ! তোমরা তোমাদের সেই রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে একটি প্রাণ থেকে সৃষ্টি করে আবার তা থেকে অসংখ্য নারী ও পুরুষ করেছেন। (সূরা নিসা : ১)। সুতরাং নারীকে উপেক্ষা করে মানবতার জন্য যে কর্মসূচি তৈরি হবে তা হবে অসম্পূর্ণ।
মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ‘নিসা’ অর্থাৎ ‘মহিলা’ শব্দটি ৫৭ বার এবং ‘ইমরাআহ’ অর্থাৎ ‘নারী’ শব্দটি ২৬ বার উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ‘নিসা’ নামে নারীর অধিকার ও কর্তব্যসংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র বৃহৎ সূরাও রয়েছে। এতদ্ব্যতিত কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে নারীর অধিকার, নিরাপত্তা, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে।
নারীর মর্যাদায় ইসলামের স্থায়ী নীতি : জাহেলী যুগে যেখানে কন্যাশিশু জন্মগ্রহণ করলে তাকে জীবন্ত কবর দিতো, নারীদের ভোগের সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হতো, দাসী হিসেবে হাট-বাজারে পশুর মতো বিক্রি করা হতো, কন্যাসন্তানের জন্মের সংবাদে পিতা মানহানিকর মনে করে বিমর্ষ হতো, সেখানে মহান আল্লাহ সূরা হুজরাতের ১৩ নং আয়াতে ঘোষণা করেন- হে মানবজাতি! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হও। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত, যে সর্বাধিক পরহেজগার। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।
নারীর শিক্ষালাভের অধিকার : নারীদের শিক্ষালাভের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যার রয়েছে কন্যাসন্তান, সে যদি তাকে (শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে) অবজ্ঞা ও অবহেলা না করে এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয়; আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘ইলম শিক্ষা করা (জ্ঞানার্জন করা) প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর প্রতি ফরজ (কর্তব্য)।’ (উম্মুস সহিহাঈন-ইবনে মাজাহ শরিফ)। তাই হাদিস গ্রন্থসমূহের মধ্যে হযরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২ হাজার ২১০, যা সব সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
মা হিসেবে নারীর সম্মান: মা হিসেবে ইসলাম নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে । রাসুল (সা.) বলেন, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত’। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। (বুখারি)।
কন্যা হিসেবে নারীর সম্মান: আল্লাহ তায়ালা বলেন, তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের ‘সুসংবাদ’ দেয়া হয়, তখন তার চেহারা মলিন হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। সে এ সুসংবাদকে খারাপ মনে করে নিজ সম্প্রদায় থেকে লুকিয়ে বেড়ায় (এবং চিন্তা করে ) হীনতা স্বীকার করে তাকে নিজের কাছে রেখে দেবে, নাকি মাটিতে পুঁতে ফেলবে। কত নিকৃষ্ট ছিল তাদের সিদ্ধান্ত। (সূরা নাহল, আয়াত : ৫৮-৫৯)।
কন্যা সন্তানের জন্মকে বলা হচ্ছে ‘সুসংবাদ’। আধুনিক জাহেলী যুগে আজ কিন্তু নারীর জন্ম কখনো কখনো ‘সুসংবাদ’ নয়।তখন নারীকে পুঁতে ফেলা হতো জন্মের পর। আর এখন পুঁতে ফেলা হয় জন্মের আগেই (বিজ্ঞানের কল্যাণে যখন জানতে পারে আগত শিশু নারী)। অথচ ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে কন্যাশিশু বরকত ও কল্যাণের প্রতীক। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মেয়েশিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক।’ হাদিসে আরও রয়েছে, ‘যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তান থাকবে; আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।’
বোন হিসেবে নারীর সম্মান : মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কারও যদি কন্যাসন্তান ও পুত্রসন্তান থাকে আর তিনি যদি সন্তানদের জন্য কোনো কিছু নিয়ে আসেন, তবে প্রথমে তা মেয়ের হাতে দেবেন এবং মেয়ে বেছে নিয়ে তারপর তার ভাইকে দেবে।’ পবিত্র হাদিসে আছে, বোনকে সেবাযত্ন করলে আল্লাহ প্রাচুর্য দান করেন।
স্ত্রী হিসেবে নারীর সম্মান: ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন, নারীদের তেমন ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের। (সূরা বাকারা : ২২৮)। স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক। (মুসলিম শরিফ)। তিনি আরও বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম (তিরমিজি)। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।(সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)। কোরআনে বলা হয়েছে, নারীদের ওপর যেমন অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর অধিকার (সূরা-২ বাকারা, আয়াত ২২৮)।
নারীর প্রতি সম্মান পুরুষের ব্যক্তিত্বের প্রমাণ : রাসুল সা. এর একটি হাদিসে এসেছে, নারীকে সম্মান করার পরিমাপের ওপর ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদার বিষয়টি নির্ভর করে। তিনটি বিষয় নবী করিম (সা.)-এর জীবনে লক্ষণীয় ছিল- এক. নামাজের প্রতি অনুরাগ; দুই. ফুলের প্রতি ভালোবাসা; তিন. নারীর প্রতি সম্মান। (বুখারি ও মুসলিম)।
নারী ও পুরুষের সহযোগী হিসেবে নারী : ইসলামে নারী ও পুরুষ মানুষ হিসেবেও সমান, মুসলমান হিসেবেও সমান। ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা উভয়ের জন্য ফরয। উভয়ের জন্য হালাল-হারামের সীমানা নির্দিষ্ট রয়েছে। উভয়ের মতামত দেয়া ও সমালোচনার অধিকার সমান। সম্পত্তির মালিকানার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন : তাদের পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের রেখে যাওয়া ধন-সম্পদের পুরুষদের যেমন অংশ রয়েছে, (একইভাবে) নারীদের জন্যও (সে সম্পদে) অংশ রয়েছে । (সূরা আন-নিসা : ৭)।
ঈমান ও আমল-ই নারী ও পুরুষের মর্যাদা নির্ণয়ের মাপকাঠি : মহান আল্লাহ বলেন, পুরুষ ও নারীর মধ্য থেকে যে-ই ভালো কাজ করলো, সে ঈমানদার হলে আমি তাকে একটি পবিত্র জীবনযাপন করার সুযোগ দিবো এবং তারা যে কাজ করছিল, আমি তাদেরকে তার উত্তম পারিশ্রমিক দান করবো। (সূরা আন-নহল : ৯৭)
নারী তাঁর নারীত্বের মর্যাদা বজায় রেখেই সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন ও রাখছেন। নারী ছাড়া অন্য কেউই মাতৃত্বের সেবা ও সহধর্মিণীর গঠনমূলক সহযোগী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম নয়। মায়েদের ত্যাগ ও ভালোবাসা ছাড়া মানবীয় প্রতিভার বিকাশ ও সমাজের স্থায়িত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। মায়েরাই সমাজের প্রধান ভিত্তি তথা পরিবারের প্রশান্তির উৎস।
নারী ও পুরুষের মৌলিক পার্থক্য: উভয়ের জন্মগত যোগ্যতা, ক্ষমতা, দৈহিক গঠন ও দায়িত্বের দিক দিয়ে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। প্রথম পার্থক্য হলো, মানবজীবনের দুটি অংশ, ঘর ও বাহির। নারী ঘরে, পুরুষ বাইরে। গৃহবহির্ভূত যাবতীয় কষ্টকর ও গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজ পুরুষের উপর অর্পিত। আর নারীর মৌলিক দায়িত্ব সন্তানের লালন-পালন ও ঘরোয়া পরিবেশকে সুসজ্জিত করা। সেইসাথে তার কোমল স্বভাবের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সহজ ও অপেক্ষাকৃত হালকা কাজও তারা করতে পারেন। কোনো কোনো অপরিহার্য সামাজিক প্রয়োজনে তারা ঘরের বাইরেও যেতে পারেন। যেমন: শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি। দ্বিতীয় পার্থক্য হলো, যেহেতু জন্মগতভাবে নারী আকর্ষণীয় ও কোমল স্বভাবের সেহেতু নারী ও পুরুষের স্বতন্ত্র অবস্থান ও কর্মক্ষেত্র অত্যাবশ্যক। নারীকে শালীন পোশাক ও পর্দার বিধান মেনে চলার হুকুম দেয়া হয়েছে। এটি অলঙ্ঘনীয় বিধান। মহান আল্লাহ বলেন, হে নবী, আপনি মুমিন মহিলাদের জানিয়ে দিন যে, তারা যেন দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান-সমূহের হিফাজত করে এবং তারা যেন তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে। তবে যা এমনি বের হয়ে যায়, সেটা ভিন্ন কথা। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- ওহে নারী! তোমরা তোমাদের বাড়িতেই থাকবে, আর খবরদার! জাহেলী যুগের মেয়েদের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’
জাহেলী যুগ ও আধুনিক যুগে নারী ও ইসলাম :
সেযুগে নারী ছিল অবহেলিত, নির্যাতিত, নারীর প্রতি পুরুষের হীন মানসিকতার কারণে। ইসলাম সে মানসিকতারই সংশোধন করেছে। নারী ছিল পুরুষের কাছে অন্যান্য ভোগ্য পণ্যের মত। ইসলাম নারীকে বানাল পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী।
যেখানে নারী নিজেই ছিল পুরুষের সম্পদ, যা ভোগ দখল করা যেতো, ইসলাম নারীকে দিল সম্পদের অধিকার। কারো অধিকার নেই তার সম্পদে। কিন্তু তার আছে অধিকার পিতার সম্পদে, স্বামীর সম্পদে, সন্তানের সম্পদে। তার ভরণ পোষণের দায়িত্ব হয় পিতার, নয় স্বামীর, না হয় সন্তানের। কেউ নেই তো রাষ্ট্রের। নারী অভিভাবকহীন নয়; জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত।
কিন্তু একজন পুরুষ এই অধিকার ভোগ করার অধিকার রাখে কেবল বালেগ হওয়া পর্যন্ত। পশ্চিমে অবশ্য নারীর বেলায়ও তাই। ফলে তাকে পড়তে হয় বিপদে। আর এটাই হয়তো ‘সমঅধিকার’ দাবিদারদের ইনসাফ(!)
মত প্রকাশের কোনো স্বাধীনতা নারীর ছিল না। ইসলাম বলল, না; তার মতামত ছাড়া হবে না। স্বামী গ্রহণে নারীর মতই চূড়ান্ত। যদি সে ন্যায়ের উপর থাকে।
জাহেলী যুগের নির্যাতিতা, অবহেলিতা নারী নবীর দরবারে এসে বলার অধিকার পেলো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্বামী আমার প্রাপ্য হক দেয়নি। বলতে পারলো নিজের পছন্দ-অপছন্দের কথা; ‘না, অমুক আমার পছন্দ নয়।’
নারীর ভরণ পোষণে যেমন তার অভিভাবক দায়িত্বশীল, যেন ভরণ পোষণের পিছে ছুটতে গিয়ে সে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় (যেমনটি ঘটে পশ্চিমা নারীর বেলায়, জীবিকা অর্জনে সবকিছু বিসর্জন দিতে হয়), তেমনি নারী যাতে বৈবাহিক জীবনেও ক্ষতির সম্মুখীন না হয়, এ ব্যাপারেও নারীর অভিভাবক দায়িত্বশীল। জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই নারীকে নিরাপত্তাহীন ছেড়ে দেয়নি ইসলাম। দিয়েছে মত প্রকাশের অধিকার। অভিভাবক যদি তার প্রতি অবিচার করে, সে বলতে পারবে।
অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে নারীকে স্বাধীনতার দাওয়াত দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এ স্বাধীনতা বা অধীনতামুক্ত হওয়ার অর্থ কী? পিতা ও স্বামীর অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে স্বার্থান্বেষী, কপট শত পুরুষের অধীন হওয়া। অধীনতামুক্ত বলে কোনো বিষয় নেই। (একমাত্র আল্লাহই অধীনতামুক্ত) নারীকে আহবান জানানো হচ্ছে স্বনির্ভর হতে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে। কিন্তু পায়ের তলের ঐ মাটিই যদি নারীকে গ্রাস করতে উন্মুখ হয় তখন?
ইসলাম দিলো নারীর নিরাপত্তা : নারীর প্রতি চোখ তুলে তাকানোও নিষেধ। পুরুষকে বলে দিল, হে পুরুষ! তোমার দৃষ্টি অবনত রাখ, আর লজ্জাস্থানের হেফাজত করো। আরো বললো, কোনো পুরুষ যেন কোনো বেগানা নারীর সাথে নির্জনে মিলিত না হয়। কারণ, তা নারীর বিপদের কারণ হতে পারে। নারীর প্রতি সকল প্রকারের অন্যায়কে ঘোষণা করলো মহাপাপ, কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে।
আজকের ‘পুরুষতান্ত্রিক’ সমাজ নারী মুক্তির মেকি শ্লোগান দিয়ে কী পেতে চায়? আর নারীকেই বা কী দিতে চায়? নইলে নারীকে কেন হতে হয়; নতুন মডেলের গাড়ির ‘মডেল’,পণ্যের এ্যাডে ‘নারীপণ্য’? অর্থের বিনিময়ে কেন কেনা যায় নারীর রূপ-যৌবনের চিত্র? নারীকে রক্ষা না করে, কেন তাকে ধোকা দেয়া হয় এই বলে, ‘তুমি যৌনকর্মী (তুমি কর্ম করে খাচ্ছ)? নারী কেন আজ ওয়েটার? কেন সে রূপ-যৌবন নিলামকারী বিমানবালা, সেল্সম্যান? কেন ইডেন, জাহাঙ্গীরনগর ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে নারী কেলেঙ্কারীর ঘটনাবলী নারীবাদী সংগঠনগুলোর আন্দোলনের বিষয় হয় না ?
ওরা যদি নারীর মর্যাদা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাই চাইত, তাহলে নারীর মর্যাদা আর নিরাপত্তা রক্ষা হয়, এমন পথই বেছে নিতো, যেটা করেছে ইসলাম। ইসলাম কি নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে প্রতিষ্ঠিত করেনি? তাহলে দেন মোহর, মিরাস এবং মর্যাদা ও নিরাপত্তা ঠিক রেখে অর্থ উপার্জনের অধিকার কেন দিয়েছে? (তার উপর তো কারো ভরণ পোষণের দায়িত্ব নেই)। নারী শুধু ভাবে, নারীর জন্য এত শর্ত কেন ইসলামে? অথচ এসব তারই নিরাপত্তার জন্য, মর্যাদা রক্ষার জন্য। ইসলাম কি শিক্ষার অধিকার দেয়নি নারীকে? দিয়েছে। কিন্তু শিক্ষার নামে নিরাপত্তাহীন পরিবেশে ছেড়ে দেয়নি। তাই আজ ভাবতে হবে, কে নারীর প্রকৃত কল্যাণকামী?
সব শ্লোগান যখন থেমে যায়, নারীর যখন চোখ খোলে (সবকিছু হারানোর পর) তখন সবকিছুর দায় ও বোঝা কাকে বহন করতে হয়? এমনকি পশ্চিমেও? আর আইন? সেও যেনো আজ অবলা হয়ে গেছে!
যে পুরুষের কাছে নারীর কোনো মর্যাদা ছিল না, তার চরিত্রের ভালো মন্দের বিচারক বানানো হল নারীকে। ঘোষণা হল, তোমাদের মধ্যে সেই পুরুষ সবচেয়ে ভালো যে তার স্ত্রীর কাছে ভালো।
নারী নাম উচ্চারণ ছিল অপমানের, সেখানে আল কুরআনের সূরার নাম হল ‘নারী’ (সূরা নিসা) । যে ‘রব’ নারীকে অবহেলা আর জুলুমের আঁস্তাকুড় থেকে তুলে এনে এত অধিকার আর মর্যাদা দিলেন, তিনি কি তাঁর অকল্যাণ চান? নারীর কল্যাণ ও মুক্তি তাঁর নির্দেশনায় নাকি চতুর স্বার্থান্বেষী ভোগবাদীদের মেকি শ্লোগানে? ভেবে দেখবেন।
সে যুগের কবিরা নারীর রূপ যৌবন, যৌবনের আবেদন নিয়ে আলোচনা করতেন কবিতায়। আর আজ তার রূপ-যৌবন ফেরি করা হয় টিভি পর্দায়। আর কত বলবো, ইতিহাসের পাতা ভারাক্রান্ত হয়ে আছে এ অন্যায় বিবরণে; গ্রীক সভ্যতায, রোম সভ্যতা, ভারতীয় সভ্যতা, চৈনিক সভ্যতা ও বিভিন্ন ধর্মে অমর্যাদা, অবহেলা আর জুলুমের যুপকাষ্ঠে বলি হয়েছিল যে নারী ও নারীত্ব, ইসলাম তাকে সেখান থেকে রক্ষা করে সমাসীন করেছে মর্যাদার সুউচ্চ শিখরে।
লেখক : সাংবাদিক

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
sheikh sabbir ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ১:০৮ পিএম says : 0
apnader ai post er lekha gulo amr onnk valo lagese ami youtube video make kori islam er somporke amr channel er name real time ummah ami kih apnader lekha contect gulo kih vebohar korte pari .amr video te ...are ha amntei hobe apnader writing gulo khub valo laglo ..Thanks
Total Reply(0)
md asif ৮ মে, ২০২১, ৯:১২ পিএম says : 0
onk vlo legece
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন