শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

বিনোদন প্রতিদিন

জনগণ কোথায় যাবে কার কাছে যাবে?

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

সরকারের মূল কাজ জনগণের সেবা করা। জনগণকে কীভাবে সুখ-শান্তি ও স্বস্তিতে রাখা যায়, তা নিশ্চিত করা। তাদের জীবনযাপন যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে, এ ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা। আমাদের দেশে জনগণের প্রতি এমন দরদী সরকার দেখা যায় না। জনগণকে চাপে রাখা, তাদের পকেট থেকে টাকা বের করে আনাই সরকারের কাজ। সরকার তার ব্যয় মিটানো এবং তার স্বস্তির জন্য জনগণের অর্থের দিকেই হাত বাড়ায়। জনগণ কোত্থেকে এ অর্থ দেবে, তা নিয়ে ভাবে না। এ যেন সামন্তযুগের জমিদারদের মানসিকতা। সামন্তযুগে জমিদাররা যেমন খাজনা আদায়ের জন্য প্রজাদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালাত, সরকারের আচরণে তাই ফুটে উঠছে। সাধারণ মানুষকে চিড়েচ্যাপ্টা করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকার চালাতে অর্থের প্রয়োজন, এ অর্থ ট্যাক্সের মাধ্যমে সরকার আদায় করবে, এটা স্বাভাবিক। তবে তা যদি সামন্তযুগের জমিদারদের মতো ‘খাজনা কোত্থেকে দেবে, আমি জানি না, খাজনা তোমাদের দিতে হবে’ এমন হয়ে পড়ে, তখন জনগণের আর কথা বলার কোনো জো থাকে না। সরকারের সাথে তো আর যুদ্ধ করে তারা পারবে না। সরকার হচ্ছে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তার সাথে রাষ্ট্রের অন্য কোনো শক্তিই পারে না। জনগণ যদি সরকারের অন্যায্য আচরণের প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ পায়, তবে সরকারের পতন হওয়ার মতো পরিস্থিতি বা জনগণের দাবী মেনে নিতে বাধ্য হয়। আমাদের দেশে এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। সরকার যেমন খুশি-তেমন আচরণ করলেও জনগণের প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ নেই। মুখ বুঝেই তাদের সব মেনে নিতে হচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা ছাড়া তাদের উপায় নেই। বিদ্যুৎ ও পানির দাম যে বৃদ্ধি করা হলো, তাতে সরকারের লাভ হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েও পিডিবি বছরে ৫০০ কোটি টাকা লাভ করছে, যা আইন অনুযায়ী করতে পারে না। অর্থাৎ পিডিবি জনগণের সেবার পরিবর্তে তাদের সাথে ব্যবসা করছে। যেখানে সরকার বা তার প্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে, জনসাধারণকে স্বস্তিতে রাখা, তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে জীবনযাপন সহনীয় করে দেয়া, সেখানে তারা কীভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করে লাভবান হবে, এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে চলেছে। জনদরদী সরকারের এমন মনোভাব হয় না। এই যে বিদ্যুৎ ও পানির দাম এ মাস থেকে বাড়ানো হলো, মাস শেষে যখন সাধারণ মানুষকে বাড়তি অর্থ গুণতে হবে, এ অর্থ তারা কোথা থেকে দেবে? তাদের আয় কি এ মাস থেকে বেড়েছে? তাদের আয় কি কমে গেল না? হ্যাঁ, এতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, উচ্চবিত্ত, শিল্প-কারখানার মালিকদের কোনো সমস্যা হবে না। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা সরকারের অংশ। তাদের পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কিছু যায় আসে না। উচ্চবিত্ত বা কোটিপতিদের আর্থিক অবস্থা সবসময়ই ভাল থাকে। খারাপ হলে খুব একটা হয় না। কোটিপতির ভিত ঠিকই থেকে যায়। সাগর থেকে দুয়েক চামচ পানি তুলে নিলে যেমন সাগরের ক্ষতি হয় না, তেমনি জিনিস পত্রের দাম আকাশচুম্বীও হলেও তাদের কিছু আসে যায় না। তার কেনার সামর্থ্য অটুট থেকে যায়। শিল্পকারখানার মালিকদেরও কিছু যায় আসে না। কারণ তারা বাড়তি বিদ্যুত ও পানির দাম উৎপাদিত পণ্যের সাথে যুক্ত করে দেবে। আর যে মানুষগুলোর আয় নির্দিষ্ট তাকেই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। সামর্থ্যরে মধ্য থেকে তিনি যেভাবে জীবনযাপন করেন, হঠাৎ করে যদি তা সামর্থ্যে টান ধরে, তবে তার হুশ থাকার কথা নয়। পাঁচ টাকার জিনিস এক লাফে দশ টাকা হয়ে গেলে তাদের বেহুশ ও বেদিশা হওয়ার কথা। এখন এই বর্তমান দিন বা বর্তমান সরকারের আমলে সাধারণ মানুষকে বহুবার বেহুশ হতে হয়েছে। বিশেষ করে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে তাদের জীবনযাপনকে বারবার পরিবর্তন করতে হয়েছে। চাপের মধ্যে পড়তে হয়েছে এবং এই চাপ নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে। তাদের পক্ষ হয়ে যে কেউ কথা বলবে, তেমন উপযুক্ত কাউকেই তারা দেখছে না। ফলে সরকার তার খেয়াল খুশি মতো যেভাবে তাদের রাখতে চাচ্ছে, সেভাবেই থাকতে হচ্ছে।

দুই.
মগের মুল্লুক বলে একটা কথা আছে, যেখানে মগরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছামতো যা খুশি তাই করে বেড়াত। অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করত। নিয়ম-কানুনের কোনো বালাই ছিল না। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষেরও অনেকটা এ অবস্থার মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে। তাদের সুখ-দুঃখ দেখার যেন কেউ নেই। সরকার আছে, তবে সরকারের কিছু সিদ্ধান্তের দ্বারাই তাদের একের পর এক বিপদে পড়তে হচ্ছে। অথচ সংসদে বিরোধী দল আছে, রাজপথের বড় বড় রাজনৈতিক বিরোধী দল আছে। তবে তাদের অস্তিত্ব আছে, সাধারণ মানুষের এ বিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সবকিছু ছাপিয়ে তাদের সামনে কেবল সরকার। এ সরকারই কিনা তাদের জীবনযাপনকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। সরকারের এমন আচরণের বিরোধিতা করার কোনো শক্তি নেই। ফলে সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয়ে সরকারের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি মেনে নিতে হচ্ছে। সরকারের দায়িত্ব যে জনগণকে আরাম ও স্বস্তিতে রাখা, ব্যবসা করা নয়-এটা সরকার মোটেই ভাবছে না। বিদ্যুৎ ও পানির দাম বৃদ্ধি নিয়ে ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা এক বাক্যে বলেছেন, এই মূল্য বৃদ্ধি পুরোপুরি অযৌক্তিক। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গোটা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারকে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চলমান ঊর্ধ্বগতিকে আরও ঊর্ধ্বে নিয়ে যাবে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে আরও কোনঠাসা হয়ে পড়বে। সরকার বিদ্যুতের রেকর্ড উৎপাদন এবং ৯৬ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে বলে গর্ববোধ করে। যদি তাই হয়, তবে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করার কি প্রয়োজন? বরং স্বাভাবিকভাবে পণ্যের উৎপাদন উদ্বৃত্ত হলে তার দাম কমে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিগত ১০ বছরে চারগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। অথচ এর সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। উৎপাদন বাড়লে এবং সংকট না থাকলে দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এর পরিবর্তে গত ১০ বছরে ৯ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে এর দামও বাড়ানো হচ্ছে। এটা সরকারের ব্যবসায়িক মনোভাব ছাড়া আর কি হতে পারে? সরকারের মধ্যে ব্যবসা করার লোভ প্রবল হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের সেবার পরিবর্তে নিজের আরাম-আয়েশকে নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগ বেশি। যদি তা না হতো, তবে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির চিন্তা করতো না। চিন্তা করতো চাহিদা পূরণ করে এবং সাধারণ মানুষকে সস্তায় বিদ্যুৎ দিয়ে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ কিভাবে রপ্তানি করা যায়। জনদরদী সরকার হলে তাই করতো। আমরা যদি দিল্লীর দিকে তাকাই তাহলে দেখব, এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালা মানুষকে স্বস্তিতে রাখার জন্য নির্বাচনের আগে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করে দিয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে অন্যান্য সেবা সাশ্রয়ী করে দিয়েছে। এতে রাজ্যটির জনগণ অত্যন্ত খুশি হয়ে তাকে পুনরায় নির্বাচিত করেছে। অথচ দিল্লীতে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ভর্তুকি দিয়ে চলছে। এর মাঝেই কেজরিওয়ালা জনগণকে সুবিধা দিয়েছে। অর্থাৎ সরকার নিজে কষ্টে থেকে মানুষকে শান্তিতে রেখেছে। জনগণ তো এমন দরদী সরকারই চায়। আমাদের সরকারের মধ্যে এমন দরদী মনোভাব খুব একটা পরিলক্ষিত হয় না। দরদী হলে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা বিবেচনা করত। নিজের লাভ না দেখে তাদের সুখ-শান্তি ও স্বস্তিতে রাখার বিষয়টি বিবেচনা করত। জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করত, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করত না। দুঃখের বিষয়, আমাদের সরকারের মধ্যে এ ধরনের কোনো মনোভাবই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। উল্টো জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির সব পথ অবলম্বন করছে। সরকার বলছে, বিদ্যুতের ঘাটতি নেই, রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, তারপরও দাম বৃদ্ধি করে চলেছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ কোনো ভর্তুকি দিচ্ছে না। এটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এবং আরও লাভ করার জন্য বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ বিভাগ অনুৎপাদনশীল খাতে যে ৯ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে, তা বন্ধ করতে পারলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করার প্রয়োজন পড়ত না। এছাড়া এ খাতে বছরের পর বছর ধরে যে দুর্নীতি চলছে, তা দূর করতে পারলে আগামী দশ বছরও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির চিন্তা করতে হতো না। দেখা যাচ্ছে, বিদ্যুৎ বিভাগের অনিয়ম-দুর্নীতির খেসারত দিতে হচ্ছে জনসাধারণের পয়সা দিয়ে। অন্যদিকে ওয়াসাকে বলা হয় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতির খেসারতও জনগণকে দিতে হচ্ছে। অথচ সেবার মান সবচেয়ে নিচু। এর সরবরাহকৃত পানি দূষিত এবং তা পানের অনুপযোগী। এই পানের অযোগ্য পানি দিয়েই ওয়াসা ব্যবসা করে যাচ্ছে। দাম দিয়ে সেবা পাওয়া যায় না, এমন নজির বিশ্বে আর কোথাও আছে কিনা, আমাদের জানা নেই।

তিন.
জনগণের প্রতি বর্তমান সরকারের আচরণ কতটা জনবান্ধব, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ সরকারের কাজ হচ্ছে, নিজে কষ্টে থেকে জনগণকে সুখ-সাচ্ছন্দে রাখা। জনগণের সেবক হয়ে কাজ করা। দেখা যাচ্ছে, সরকার করছে তার বিপরীত কাজ। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, সরকারের মধ্যে দেখানোর একটা প্রবণতা রয়েছে। সরকার উন্নয়নমূলক কাজ করছে, বড় বড় প্রকল্প করছে, তা দেখাবে এটাই স্বাভাবিক। তবে সরকার যদি সাধারণ মানুষকে স্বস্তিতে রেখে তা করে, তাতে সাধারণ মানুষের কোনো আপত্তি ও সমস্যা নেই। সরকার তার প্রথম মেয়াদের নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতিতে বলেছিল, জনগণকে দশ টাকা দরে চাল খাওয়াবে। প্রায় আট-নয় বছর পর প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজনের মধ্যে দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করে তা দেখিয়ে দিয়েছে। এ চাল বিক্রি নিয়েও এন্তার দুর্নীতির অভিযোগ তখন উঠে। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন দরিদ্র হয়ে সে চাল ভোগ করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দশ টাকার চাল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি তো শুধু প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজনের জন্যই ছিল না, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলেই যাতে এ সুযোগ পায় এবং চালের দাম সর্বত্র দশ টাকা হওয়া স্বাভাবিক ছিল। আলাদা প্রকল্প করে দশ টাকা বিক্রি করার কথা ছিল না। সরকার তা করেছে। এটা এক ধরনের চালাকি। সরকারের কার্যক্রমে এমন আরও অনেক চালাকি আছে। পানির দাম গোপনে বাড়িয়ে দেয়া, গোপনে ভ্যাট-ট্যাক্স কেটে নেয়া থেকে শুরু করে মাথাপিছু আয় কাগজে-কলমে বৃদ্ধি করে দেয়া পর্যন্ত দেখানোর প্রবণতা রয়েছে। কেবল সাধারণ মানুষই বোঝে, সরকার তাদের সাথে কী আচরণ করছে! তাদের জোর করে কুইনাইন খাইয়ে দেয়া হচ্ছে। অভ্যস্ত করে তুলছে। বুক ভরে শ্বাস নেয়ার পরিবর্তে নাভিশ্বাস তুলে দিচ্ছে। এক রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে। সরকার হয়তো তার চার পাশের লোকজনের উন্নতিকে সবার উন্নতি বলে মনে করছে। এতে সাধারণ মানুষের অসহায় হয়ে পড়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাদের এ পরিস্থিতি যে তুলে ধরবে তারও কোনো পথ ও প্ল্যাটফর্ম নেই। অথচ দেশে এত এত বিরোধী রাজনৈতিক দল রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত জনগণের দোহাই দিয়ে বড় বড় কথা বলে বেড়াচ্ছে, জনগণের এই দুর্ভোগের সময় তাদের কণ্ঠ উচ্চকিত হচ্ছে না। পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে না। আমরা যদি সবচেয়ে বড় বিরোধী রাজনৈতিক দলের কথা ধরি, তাহলে দেখা যাবে দলটি জনগণের দুর্ভোগের সময় কার্যকরভাবে পাশে দাঁড়াচ্ছে না। বিদ্যুৎ-পানির দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রেস কনফারেন্সে গণবিরোধী, দাম বৃদ্ধি প্রত্যাহার করতে হবে-এমন গৎবাঁধা বক্তব্য দিয়েই খালাস। তবে এবার প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করে বিদ্যুৎ ও পানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ করেছে। দলটি যদি জনগণের দুঃসময়ে একের পর এককর্মসূচি দিয়ে এগিয়ে যেত, তাহলে জনগণের ব্যাপক সমর্থন পেত। জনগণের পাশে দাঁড়ানোর এই সুযোগ দলটি খুব একটা নিচ্ছে না। জনদরদী এ কাজটি করতে গিয়ে যদি তারা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তোপের মুখেও পড়ত, তাহলেও জনগণ দেখত দলটি তাদের ন্যায্য দাবী নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। তাছাড়া পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী এ ধরনের কর্মসূচিতে বাধা দিতেও দ্বিধা করত। কারণ এটি জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি। দুঃখের বিষয়, দলটি জনগণের সুখ-দুঃখের সাথে জড়িয়ে থাকা জনপ্রিয় কর্মসূচি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।

চার.
কোনো সরকার জনবান্ধব কিনা, তা বোঝা যায় জনগণের প্রতি তার আচরণ দেখে। সরকারের প্রতি জনগণের চাওয়া খুবই সীমিত। তারা চায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হাতের নাগালের কাছে থাকুক, সচ্ছন্দে মৌলিক চাহিদাটুকু মিটুক। চাপমুক্ত হয়ে জীবনযাপন করুক। দুঃখের বিষয়, এ সময়ে সাধারণ মানুষকে চাপতে চাপতে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে তাদের দম নিতেও কষ্ট হচ্ছে। সরকার কথায় কথায় বলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। এটা বলে না, জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি ও জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কথা যদি তুলনা করা হয়, তবে দেখা যাবে তাদের আয় দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা যাচ্ছে না। যদি এমন হতো, মানুষের ইনকাম বেড়েছে এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি, তাহলে বলা যেত মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। বিষয়টি অনেকটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, এক বস্তা টাকা নিয়ে গেলেও এক বস্তা জিনিসপত্র কেনা যাচ্ছে না। অর্থাৎ তাদের আয় আগের জায়গায়ই রয়ে গেছে। তাদের আগের এক টাকা এ সময়ের পাঁচ টাকা হলেও, এ পাঁচ টাকা দিয়ে আর আগের মতো জিনিসপত্র কিনতে পারছে না। কাজেই মানুষের আয় ও ক্রয় ক্ষমতা বাড়ল কীভাবে? এখন টাকা বেশি দেখা যায়, তবে এ টাকায় মানুষ কোনো বরকত পাচ্ছে না। অথচ সরকার টাকাটাই বড় করে দেখছে, এ টাকায় যে মানুষের মৌলিক চাহিদা মিটছে না, তা উপেক্ষা করে যাচ্ছে। তবে সরকার সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা না করলেও নিজ স্বার্থ এবং নিজের অনুগত লোকজনের স্বার্থটাকে বড় করে দেখছে। জনগণ সরকারের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না। তারা গোল্লায় গেলেও, তাতে যেন তার কিছু আসে যায় না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও জনগণ কোনো জায়গা পাচ্ছে না। তারাও বক্তব্য সর্বস্ব হয়ে পড়েছে। কারণ বিদ্যুৎ ও পানির দাম বৃদ্ধি এবং এর সূত্র ধরে জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও সরকারের মতোই তাদেরও তেমন অসুবিধা হবে না। যত সমস্যা কেবল জনগণের। তারা যেন ভারবাহী দাস। যত ভার তাদেরই বইতে হবে। এমনকি ক্ষমতায় থাকা এবং যাওয়ার ভারও এই জনগণকেই নিতে হবে। জনগণের সুবিধা-অসুবিধা দেখার দায়িত্ব যেন তাদের নয়। এ পরিস্থিতিতে জনগণ কেবল হাহাকার করে জিজ্ঞেস করতে পারে, আমরা কোথায় যাব? কার কাছে যাব?
darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
miraj ৯ মার্চ, ২০২০, ৩:৩৪ এএম says : 0
ইনকিলাব কে অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন একটা চমৎকার রিপোর্ট করার জন্য।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন