৪০ বছর আগে ঝালকাঠি শহরের চাঁদকাঠি ব্র্যাকমোড় এলাকায় নির্মাণ করা হয় লাশ কাটা ঘর। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কাটা ঘরটি ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নির্ধারিত কক্ষ থাকলেও তা ব্যবহার করা হচ্ছে না। আবাসিক এলাকায় লাশ কাটা ঘর থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা অসস্তির মধ্যে রয়েছেন। লাশ কাটা ঘরটি আবাসিক এলাকা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কাছে নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, আশির দশকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে শহরের চাঁদকাঠি এলাকার লাশ কাটা ঘর নির্মাণ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। সময়ের পরিবর্তনে লাশ কাটা ঘরের আশেপাশে ঘনবসতি গড়ে ওঠে। আবাসিক এলাকায় লাশ কাটা ঘর থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা বিপাকে পড়েছেন। ময়নাতদন্তের জন্য প্রতিদিনই লাশ কাটা ছেড়া দেখতে হচ্ছে তাদের। শিশুরাও ভয়ে লাশ কাটা ঘরের আশপাশে যেতে চায় না বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন। সন্ধ্যার পর লাশ কাটা ঘর এলাকায় কোনো রিকশা বা অটোরিকশা যেতে চায় না। বাড়ির মালিকরাও ঠিকমতো ভাড়াটিয়া পাচ্ছে না।
সরজমিনে দেখা যায়, লাশ কাটা ঘরের পিছনের দিকে রয়েছে গুরুধাম খাল। সেখানে লাশের পরিত্যাক্ত অংশ এবং রক্ত ফেলা হয়। যা থেকে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। নষ্ট হচ্ছে খালের পানি।
স্থানীয় বাসিন্দা ঝালকাঠি সদর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরীন আক্তার বলেন, সন্ধ্যায় কোনো লাশ আনা হলে তা সারারাত রাস্তার পাশে রেখে দেয়া হয়। আর তা যদি হয় পানিতে পড়া গলিত বা কবর থেকে তোলা লাশ তাহলে দুর্গন্ধে ঘরে থাকা যায় না। এটি এখন স্থানান্তর করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুকমল ওঝা দোলন বলেন, বাসা কোথায় কেউ জানতে চাইলে, লাশ কাটা ঘরের পাশের পরিচয় দিতে হয় আমাদের। হাসপাতালে লাশ কাটার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থাকলেও সেটি ব্যবহার করা হচ্ছে না। আমাদের সন্তানরা লাশ কাটা ঘরের পাশ থেকে যাতায়াত করতে ভয় পায়। তাদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ঝালকাঠি নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ আবু জাফর বলেন, বাংলাদেশের ৯০ ভাগ জেলায় হাসপাতালের অভ্যন্তরে বিশেষ কক্ষে লাশকাটা হয়। অবিলম্বে এ ঘরটি ব্র্যাকমোড় ঘনবসতি এলাকা থেকে সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হোক। আমরা ইতোমধ্যে লাশ কাটা ঘর অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাফিজ আল মাহামুদ বলেন, গত বেশ কয়েক বছর আগেই তৎকালীণ জেলা প্রশাসককে বিষয়টি আমরা অবগত করেছি। যেহেতেু আমার নির্বাচিত এলাকায় এই সমস্যটি রয়েছে, আমি এটি অপসারণের ব্যাপারে কাজ চলিয়ে যাচ্ছি। শিগগিরই আমির হোসেন আমু এমপিকে বলে লাশকাটা ঘরটি সদর হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করব।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. শ্যামল কৃষ্ণ হাওলাদার বলেন, সদর হাসপাতালে বহুতল একটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সেটি নির্মাণ শেষ হলে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সেখানের কোনো কক্ষে বরাদ্দ থাকবে। এ মুহুর্তে লাশ কাটা ঘরটি অপসারণ করা সম্ভব নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন