বিদেশ ফেরত তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস নির্ণয় হওয়ার পর এ নিয়ে আতঙ্কে ভুগছে সারাদেশ। নোয়াখালীর হাতিয়ার রাতুল (২২) নামের এক কাতার প্রবাসীকে কোয়ারেন্টাইন রাখা হয়েছে। এছাড়া হঠাৎ করে অসুস্থ হওয়া ২৪ শিক্ষার্থীকে কয়েক ঘন্টা আইসোলেসন রাখার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ইতালী থেকে দেশে ফিরেই ঝিনাইদহের এক দম্পত্তিকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের নিয়ে শহরে রীতিমতো হুলুস্থুল কান্ড ঘটে যায়। এদিকে শহরের হামদহ খোন্দকার পাড়ার এক কাস্টম কর্মকর্তার ছেলেও বাড়ি ফিরে শহরে চলাফেরা করে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। আমাদের সংবাদদাতাদের তথ্যে প্রতিবেদন :
নোয়াখালী ব্যুরো জানায় : গত ৯ মার্চ সোমবার বিকেলে কাতার থেকে বাংলাদেশে আসে রাতুল। তিনি কাতারে থাকাকালীন দীর্ঘ ১৫দিন ধরে জ¦র ও কাশিতে ভুগছেন। মঙ্গলবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার উপসর্গগুলো দেখে করোনা সন্দেহে তাকে নিজ বাড়ীতে কোয়ারেন্টাইন এ থাকার অনুরোধ করেন।
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ ইউছুফ জানান, সকালে রাতুলের ভগ্নিপতি আব্দুর রহিম তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার জ¦র, গলা ব্যাথা, কাশি ও মাথা ব্যাথা এসব উপসর্গ দেখে সন্দেহ হওয়ায় কাতার প্রবাসী রাতুলকে নিজ বাড়ীতে কোয়ারেন্টাইন রাখা হয়েছে। তার ভগ্নিপতি রহিমকেও কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে একলাশপুর ইউনিয়নের আটবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২-৩জন শিক্ষার্থী জ¦র ও কাশি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে। এর কিছুক্ষণ পর বিদ্যালয়ে পাঠদান চলাকালে আরো কয়েকজনসহ মোট ২৪শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষের মধ্যে তাদের আইসোলেসন করে রাখার কয়েক ঘন্টা পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অসিম কুমার দাস বলেন, অসুস্থ শিক্ষার্থীদের কয়েক ঘন্টা আইসোলেসনে রাখা হয়েছিল। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর শরীরে জ¦র রয়েছে। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাদের পরিবারের সদস্যদের কিছু দিক নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তন বা গণহিস্টিরিয়া (আতঙ্ক জনিত রোগ) কারনে তারা অসুস্থ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, হাতিয়ার প্রবাসী রাতুলকে পরীক্ষা করা ছাড়া এখনো কিছু বলা যাচ্ছেনা। যেহেতু তিনি কাতারে থাকাকালিন দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ তাই বিষয়টি নিয়ে আইইডিসিআর যোগাযোগ করা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ থাকায় আপাতত তাকে তার বাড়ীতে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ১৪দিন পর তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হবে।
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা জানান : ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর মাষ্টার পাড়ায় ইতালী ফেরৎ এক দম্পত্তি ঝিনাইদহে ফিরে শহরে মার্কেট করতে বের হয়। খবরটি দ্রæত ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগমকে জানানো হয়। সিভিল সার্জন ওই বাড়িতে স্বাস্থ্য কর্মীদের পাঠিয়ে দেন। সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কাজল কুমার বিশ্বাস বেলা ১১টার দিকে তাদের বাড়ি গিয়ে দেখেন তারা মার্কেট করতে বের হয়েছেন। খবর দিয়ে বাড়ি এনে তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা সিদ্ধান্ত জানান।
তবে তাদের কাছে ইতালি স্বাস্থ্য বিভাগের হেলথ কার্ড আছে। তারা করোনাভাইরাস মুক্ত বলে ইতালী স্বাস্থ্য বিভাগ সনদ দিয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কাজল কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, গত ৭ মার্চ কামাল-সোনালী দম্পত্তি ইতালী থেকে দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে তারা চলে যান স্বামীর বাড়ি যশোরের চৌগাছা শহরে। সেখান থেকে সোমবার রাত ৯টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর মাস্টার পাড়ায় শ্বশুর বাড়িতে এসে কেনা কাটার জন্য তারা ঝিনাইদহ শহরে বেরিয়ে পড়েন।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন জানান, করোনাভাইরাসের কোন লক্ষন তাদের মধ্যে নেই। তারা করোনা ভাইরাস মুক্ত বলে ইতালী সরকারের হেলথ কার্ড রয়েছে। তারপরও অধিক সতর্কতা অবলম্বনের জন্য তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে বিকাল পর্যন্ত হামদহ খোন্দকার পাড়ার এক কাস্টম কর্মকর্তার ছেলের বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। ঝিনাইদহের সিভিল সার্জণ ডা. সেলিনা বেগম, করোনা ভাইরাস নিয়ে কোন আতংকিত না হয়ে সচেতনতার মাধ্যমে আমরা মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন