শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নবযুগে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, কালো টাকা এবং অতিরিক্ত বিনিয়োগ বন্ধে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে অনলাইন (অটোমেশন) পদ্ধতি চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে খুব কম সময়ে হিসাব খোলা, অর্থ জমা ও উত্তোলন সেবায় অটোমেশনের মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশ করলো ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক সাধারণ ও মেয়াদি হিসাব। জাতীয় পরিচয়পত্রভিত্তিক এ প্রক্রিয়া আগামী ১৭ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ১৭ মার্চ থেকেই ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে আগের সুদহার বহাল করা হবে। তিনি বলেন, যাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য আমরা এ স্কিমটি চালু করেছি, তাদের জন্যই এটা সীমাবদ্ধ রাখতে চাই। কিন্তু আমরা কোনোভাবেই কারো স্বার্থে হাত দেইনি। ব্যাবসয়ীরা এসে ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কিনুক এটা আমরা চাই না। আমি আশাকরি আগামী ১৭ মার্চ ডকঘর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে সঞ্চয় স্কিমে স্বয়ংসম্পূর্ণ হব। সেদিন আমরা অনলাইনে এ কার্যক্রম পূর্ণমাত্রায় শুরু করতে পারব।

এদিকে টাকার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে এ বিষয়ে কোনো চিন্তাভাবনা আছে কিনা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটি বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগাযোগ করতে হবে, তারা স্বাধীন সত্তা। অপেক্ষা করুন সব ক্যাশলেস করে ফেলব।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নতুন মডিউল ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এর উদ্বোধন করে অর্থমন্ত্রী এ তথ্য জানান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, অভ্যান্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম, ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আজকে (বুধবার) এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলেও ইন্টারনাল কিছু কাজ বাকি থাকায় এর কার্যক্রম আগামী ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশের প্রধান ডাকঘরগুলোতে শুরু হবে। একই সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আসলেই তার পরিচয় থেকেই সব তথ্য নিয়ে মহুর্তেই হিসাব খোলা যাবে। পরিচয়পত্রধারী ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারবে। একজন এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে ই-টিআইএন সনদও জমা দিতে হবে। তবে ই-টিআইএন সনদ ছাড়াই ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৯ টাকা পর্যন্ত নগদ টাকা সঞ্চয় ব্যাংকে রাখা যাবে। দুই লাখ টাকার বেশি হলে অবশ্যই ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করার পাশাপশি ই-টিআইএন সনদ জমা দিতে হবে। দিতে হবে সঞ্চয়কারীর ব্যাংক হিসাব নম্বর, মোবাইল নম্বর।

এ প্রক্রিয়ায় হিসাব খোলার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা স্লিপ ও হিসাব খোলার সনদ পাওয়া যাবে। জাতীয় পরিচয়পত্রভিত্তিক সিস্টেম গ্রাহকের ছবিসহ যাবতীয় তথ্য যাচাই করে নির্ভুল মুনাফা ও মূল অর্থ পরিশোধ করবে। জাতীয় পরিচয়পত্রভিত্তিক বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা অতিক্রম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং টিআইএন ব্যবহারের মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত অর্থের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
অটোমেশনের ফলে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী মুনাফার অর্থ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হবে। মোবাইল ও ই-মেইলের মাধ্যমে তার হিসাবে জমা, উত্তোলন ও স্থিতির তথ্য জানতে পারবেন। অর্থ বিভাগ বিদ্যমান সিস্টেম ব্যবহার করে এ অটোমেশন কাজ করেছে এবং এজন্য সরকারের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়নি বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
ইতোমধ্যে বহুল প্রচলিত সঞ্চয় স্কিম যেমন পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক, পরিবার ও পেনশন সঞ্চয়পত্রের লেনদেন গতবছর জুলাই থেকে অটোমেশন পদ্ধতিতে করা হচ্ছে। এর আগে গত বছরের ২৬ মার্চ ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন ‘নগদ’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা এখন দেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী ডিজিটাল লেনদেন। প্রতিদিনই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ‘নগদ’।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, পোস্ট অফিস কনসেপ্টটাই হারিয়ে গিয়েছিলো। ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি দায়িত্ব না নিতেন তাহলে পোস্ট অফিস বলে কোনো জিনিস আমরা দেখতে পেতাম না। গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য হলেও পোস্ট অফিসকে আমরা বাতিল করতে পারি না। পোস্ট না থাকলে গ্রামীণ জনগণ কোথায় টাকা রাখবে?

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ডিমান্ড ডিপোজিট সাত দশমিক পাঁচ এবং ফিক্সড টাইমে হবে ১১ পয়েন্ট ২৮ যা আগের রেট তাই থাকছে। যে আয়টা করবে এখান থেকে তা ট্যাক্স ফ্রি না, আয়কর দিতে হবে এজন্য টিন নম্বর ও ন্যাশনাল আইডি নিচ্ছি। এনআইডি নিচ্ছি তাদের চিহ্নিত করার জন্য কত টাকা করলো, অতিরিক্ত করলো কিনা। দেশের যে কোনো জায়গায় করলে লিমিট ক্রস করতে পারবে না এবং ট্যাক্সের আওতায় আসবে। সরকার রাজস্ব আয় করবে।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা যেটা যখন করব সেটা চিন্তাভাবনা করেই করব। যে কাজই করি না কেনো সেটার যেন কোনো মিস ইউজ না হয়। মিস ইউজগুলোকে বন্ধ করার জন্যই আজকে আমাদের এ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়েছে। কারো ইন্টারেস্টে হাত দেয়া হয়নি। সুবিধা যা ছিলো তাই থাকবে। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাবে যে, সুবিধার পরিমাণ আরও বাড়ানো হয়েছে। লিমিট কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে সে সুবিধা আমরা করে দিয়েছি।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে সুদহার প্রায় অর্ধেক করে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি একটি পরিপত্র জারি করে। ওই পরিপত্র অনুযায়ী সুদের হার কমেছে ডাকঘরের সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদি হিসাব ও সাধারণ হিসাবে। সাধারণ হিসাবের ক্ষেত্রে সুদের হার সাড়ে সাত শতাংশ থেকে কমিয়ে পঁচ শতাংশ করা হয়েছে। আর তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদের হার হবে ছয় শতাংশ, যা এতদিন ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ ছিল। মেয়াদপূর্তির আগে ভাঙানোর ক্ষেত্রে এক বছরের জন্য সুদ মিলবে পাঁচ শতাংশ, আগে যা ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। দুই বছরের ক্ষেত্রে তা সাড়ে পাঁচ শতাংশ, আগে যা ছিল ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ।
ডাকঘরের সঞ্চয় স্কিমে সুদহার অর্ধেক করায় এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদের হারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেই আশ্বাসের ভিত্তিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৭ মার্চের মধ্যে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদের হার আগের মতো ১১ দশমিক ২৮ শতাংশে আবারও ফিরে যাবে।

অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রচলিত চিঠিপত্র বহনের জন্য যে ডাক ব্যবস্থাটি ছিল সেই নেটওয়ার্কটিকে ডিজিটাল কমার্সের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, দুটি কারণে এটি স্মরণীয় মুহুর্ত। একটি কারণ হচ্ছে ডাক বিভাগ এখন কাফনের কাপড় পরে কবরে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে এবং উত্থানের আর সুযোগ নেই। এ ঘটনা ভিন্ন চিন্তা তৈরি করেছে। ডাক বিভাগ নিয়ে এটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ডিজিটাল ডাকঘরে রুপান্তরিত হচ্ছে। সেই কারণে আমরা আমাদের সমস্ত কর্মকান্ডকে সেভাবে ঢেলে সাজাচ্ছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Aminur rahman ২৯ এপ্রিল, ২০২০, ৫:২০ পিএম says : 0
পূর্বের নিয়মে মুনাফা না থাকলে প্রতিষ্ঠান ঝুঁকির মুখে পড়বে ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন