বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বৃত্তে আটকা এডিপি বাস্তবায়ন

প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আজিবুল হক পার্থ : শতভাগ অর্থ খরচের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ এবারও ব্যর্থ হয়েছে। কাজে আসেনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তদারকি-নির্দেশনা, সচিবদের সাথে প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি) সমন্বয়, তিন মাস পর পর অগ্রগতি প্রতিবেদন, পিডিদের কাজের মূল্যায়নে পদোন্নতি, পরিকল্পনামন্ত্রীর গুচ্ছ পরিকল্পনাÑকোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। ‘৯০’ বৃত্তে আটকা পড়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) বাস্তবায়ন। এ বছরও বাস্তবায়ন হয়েছে ৯০ শতাংশ। গতবছর বাস্তবায়ন হয়েছিল ৯১ ভাগ।  
সদ্য সমাপ্ত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৯০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে এডিপি বাস্তবায়নের হার এটাই সর্বনিম্ন। তবে সামগ্রিকভাবে ৯০ শতাংশ বাস্তবায়ন হলেও শতভাগ বা তার কাছাকাছি অথবা তারও বেশি বাস্তবায়িত হয়েছে ১০ মন্ত্রণালয় বা বিভাগে। আবার উল্টো চিত্র ছিল ৮ মন্ত্রণালয়ে। এই মন্ত্রণালয়গুলো এডিপির ৫০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
বিগত অর্থবছরে মোট এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ৯৯৭ কোটি টাকা। এতে ছিল স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর জন্য বরাদ্দ অর্থও। স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার জন্য বরাদ্দ অর্থ বাদে মূল এডিপির আকার ছিল ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে মোট বরাদ্দ দাঁড়ায় ৮৭ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। কিন্তু সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে মোট খরচ হয়েছে মাত্র ৭৯ কোটি ১১৬ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ৯০ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। গত অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৯১ শতাংশ। অর্থবছর (জুলাই-জুন) শেষেও এডিপি বাস্তবায়নে  ৮ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ৫০ শতাংশ পার হতে পারেনি। এর মধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ৮টি প্রকল্পের জন্য মোট এডিপি বরাদ্দ ছিল ৬১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। কিন্তু অর্থবছর শেষে খরচ হয়েছে মাত্র ১১৯ কোটি ৯০ লাখ বা ১৯ শতাংশ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪১ শতাংশ। তাদের ৬১ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ১২১ কোটি টাকা। কিন্তু খরচ হয়েছে মাত্র ২ হাজার ১২০ কোটি টাকা। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে চার প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থে এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ৩৩ শতাংশ। ১২ মাসে একটি কড়িও খরচ করতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ৫ প্রকল্পে এডিপি বাস্তবায়ন করেছে ৪২ শতাংশ। এই বিভাগে মোট বরাদ্দ ছিল ১২২ কোটি টাকা। খরচ হয়েছে মাত্র ৫১ কোটি টাকা। এছাড়া, জাতীয় সংসদ সচিবালয় ২৬ শতাংশ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ২৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে। সেতু বিভাগে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল কচ্ছপ গতির। তারা বাস্তবায়ন করেছে ৬৮ শতাংশ।
অন্যদিকে আইএমইডির হিসাবের তথ্য মতে ১০০ ভাগের বেশি এডিপি বাস্তবায়ন করেছে দুই মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ৮ প্রকল্পে এডিপি বাস্তবায়ন করেছে সর্বোচ্চ ১২১ শতাংশ। এই বিভাগে মোট বরাদ্দ ছিল ৯৫৪ কোটি টাকা। খরচ হয়েছে ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ১১৮ শতাংশ। এই মন্ত্রণালয়ে ৯৮টি  প্রকল্পের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৩  হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। খরচ হয়েছে ৪ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ৭ মন্ত্রণালয় শতভাগের কাছাকাছি বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। ৯৯ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়নের হার ৫ মন্ত্রণালয়ের। এগুলো হলো প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, কৃষি, শিক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে। চার প্রকল্পের বিপরীতে ৯৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এই বিভাগে মোট বরাদ্দ ছিল ২৬০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগেও এডিপি বাস্তবায়নের হার সন্তোষজনক। ৭৭ প্রকল্পে তারা বাস্তবায়ন করেছে ৯৬ শতাংশ। রেল মন্ত্রণালয়ে ৫২ প্রকল্পের বিপরীতে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৯০ শতাংশ।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছর থেকে প্রতি তিন মাসের বাস্তবায়নের আলাদা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন পরিকল্পনামন্ত্রী শতভাগ এডিপি বাস্তবায়নের প্রত্যাশা ছিল তার। এর আগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এডিপি বাস্তবায়নে ৯টি বাধা চিহ্নিত করেছিল। এগুলোর মধ্যে নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, মন্ত্রণালয়ের চাহিদা ও মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর মধ্যে পার্থক্য না বোঝা, প্রকল্পের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি ও বাজেট নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা কমিশনের অপর্যাপ্ত ক্ষমতা, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ও টেকনিকেল প্রকল্প প্রস্তাব (টিপিপি) গুণগতমানের দুর্বলতা এবং ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক বদলির বিষয়গুলো ছিল।
এডিপির বাস্তবায়ন নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ৯০ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন খারাপ নয়। ভালোই হয়েছে। আমাদের সরকারের সময় শুধু এডিপি বরাদ্দই বাড়েনি, বাস্তবায়নের হারও ভালো। এখানে হ্যাপি-আনহ্যাপি হওয়ার কিছু নেই। শতভাগ বাস্তবায়ন হলে আমি খুশি হতাম। তারপরও বলবো বাস্তবায়ন ভালো হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রকল্প সাহায্যের টাকা খরচ কম হয়েছে।





 
































































 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন