শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নরেন্দ্র মোদিকে পছন্দ করে না

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২০, ১২:০৩ এএম

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অংশগ্রহণ করা নিয়ে দেশের ইসলামী দলগুলো ব্যাপক প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছিল। তারা ঘোষণা দিয়েছিল, মোদির আগমন তারা যেকোনো মূল্যে ঠেকাবে। বিমানবন্দর পর্যন্ত কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে শুয়ে থাকবে। বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে তারা মোদিকে সন্ত্রাসী, জঙ্গী মানবতার শত্রু হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ করেছে। মোদির আগমনের এই বিরোধিতার কারণ সবারই জানা। সিএএ’র নামে দেশটির দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় মুসলমানদের ভারত থেকে বিতাড়িত করার উদ্যোগ, প্রতিহিংসামূলক আচরণ এবং সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নেপথ্যে তার উস্কানিমূলক আচরণ এবং এতে মুসলমান হত্যার ঘটনা বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তার অংশগ্রহণের খবরের মধ্য দিয়ে। আক্ষরিক অর্থে, তাদের এই প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ৯২ ভাগ মুসলমানেরই মনের অভিব্যক্তি প্রকাশিত হয়। নীরবে হোক আর সরবে হোক, কেউই মোদি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে অংশগ্রহণ করুক তা চায়নি। ইসলামী দলগুলো এ চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছে। তাদের এ প্রতিবাদ মোদির আগমন ঠেকাতে পারতো কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও করোনাভাইরাস তাকে ঠেকিয়ে দিয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংবাদে মোদির আগমন আপাতত ঠেকেছে বটে, তবে তার সফর স্থগিত করা হয়েছে। মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে মোদি আসছেন না, এটি একদিকে দেশের প্রতিবাদমুখর মানুষের জন্য স্বস্তির হলেও আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনাভাইরাস। কারণ এ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। যদিও চীন বলেছে, সে এর প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছে এবং এপ্রিল থেকে তা ব্যবহার শুরু করবে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো যেখানে অত্যাধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে তা মোকাবেলা করতে পারছে না, সেখানে আমাদের মতো নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মোকাবেলা করা অত্যন্ত কঠিন। এক্ষেত্রে মহান রাব্বুল আলামীনের দয়া, করুণা, অনুগ্রহ এবং রহমত ছাড়া আমাদের করার তেমন কিছু নেই। আমরা শুধু পারি, এ ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে। আর যতটুকু সম্ভব আক্রান্তদের সনাক্ত করে তাদের আইসোলেশনে নিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা, যাতে তা ছড়াতে না পারে। যদিও সরকার সাধ্যমতো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তারপরও জনমনে আতঙ্ক থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। করোনাভাইরাসের কারণে মুজিববর্ষের মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান স্থগিত করে ঘরোয়াভাবে সীমিত পরিসরে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে অন্যান্য বিদেশি অতিথিদের আগমনও স্থগিত হয়েছে। তবে করোনাভাইরাস যদি আর না ছড়ায় এবং তার প্রকোপ কমে যায়, তাহলে মূল অনুষ্ঠান কোনো একসময় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মুজিববর্ষ উদযাপন বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে। মূল অনুষ্ঠানে যোগদানের কথা ছিল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ভুটানের রাজা জিগমে নামগিয়েল ওয়াংচুকসহ অন্যান্য সম্মানিত অতিথিবৃন্দের। এদের মধ্যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আপত্তি ছিল নরেন্দ্র মোদির অংশগ্রহণ করা নিয়ে। দেশের ইসলামী দলগুলো শুধু তার অংশগ্রহণের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে।
দুই.
সারাবিশ্বে মুসলমানদের ওপর হত্যা-নির্যাতন, বিতাড়নের কাজটি কয়েক দশক ধরে চলছে। সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তান, পেলেস্টাইন থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার মুসলমান অধ্যুষিত দেশগুলোতে পশ্চিমা পরাশক্তির দেশগুলো নানা ছুঁতোয় যুদ্ধ ও দ্ব›দ্ব বাঁধিয়ে মুসলমানদের হত্যা, নির্যাতন এবং উদ্বাস্তুতে পরিণত করেছে। ভারতে শুরু করেছে স্বয়ং বিজেপি সরকার। তার লক্ষ্য ভারতকে শুধু একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা। তার এ কাজটি করতে হলে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে। তাহলে ভারতকে পরিপূর্ণভাবে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে বিজেপির আর কোনো বাধা থাকে না। এজন্য মোদি সরকার প্রথমেই নাগরিকত্ব আইন বিল পাস করেছে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন মুসলমানদের আইনগতভাবে বিতাড়ন করা যাবে, তেমনি না যেতে চাইলে ধরে নিয়ে ক্যাম্পে ঢুকিয়ে দেয়া যাবে। তাতেও কাজ না হলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে হত্যা-নির্যাতন করা যাবে। তবে এ আইনের বিরুদ্ধে ভারতের সচেতন নাগরিক থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তীব্র প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। এই আন্দোলনের মধ্যেই দিল্লীতে সুকৌশলে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দেয়া হয়েছে এবং মুসলমানদের হত্যা-নির্যাতন করা হয়েছে। এর জন্য বিশ্লেষকরা মোদি সরকারকেই দায়ী করছে। এ দায় যে অমূলক তা নয়, কারণ মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন ২০০২ সালে সেখানে ভয়ংকর দাঙ্গা সংঘটিত হয়। ঐ বছরের ২৭ ফেব্রæয়ারি গোদরায় একটি ট্রেনে আগুন লেগে ৫৮ জন হিন্দু তীর্থযাত্রী নিহত হয়। অভিযোগ আনা হয়, এ কাজ মুসলমানরা করেছে। সুপরিকল্পিতভাবে এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ভয়াবহ দাঙ্গা লেগে যায়। এতে ১৯২৬ জন নিহত হয়। শুধু হত্যা নয়, মুসলমান নারীদের ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। মুসলমানদের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ দাঙ্গায় মোদির ইন্ধন এবং পুলিশের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকে মোদিকে ‘বুচার অফ গুজরাট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এমনকি সেদেশের সুপ্রিম কোর্ট বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। সেই মোদি যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী তখন এই ফেব্রুয়ারিতেই দিল্লীতে দাঙ্গা বেঁধেছে এবং এতে তার ইন্ধন রয়েছে। এ দাঙ্গাকে বিশ্লেষকরা গুজরাটের প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখছে। একটা বিষয় পরিস্কার, মোদি এবং তার হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি যে চরম মুসলমান বিদ্বেষী, তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। তার কাজই হচ্ছে, যে কোনো ছুঁতোয় মুসলমানদের হত্যা-নির্যাতন করা। এখন নাগরিকত্ব আইন করে ভারত থেকে মুসলমানদেরই বের করে দেয়ার প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছে। গুজরাট এবং দিল্লীর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মাধ্যমে এটাই প্রতীয়মাণ হয়, মোদি এবং তার দল যেন যেকোনো উপায়ে পাখির মতো মুসলমান শিকার করার নীতি অবলম্বন করে চলেছে। তাদের মানসিকতাই এমন যে, একজন মুসলমানও যদি মারতে পারে, তবে তাতে একজন তো কমল! তবে একথাও সত্য, ভারতের সব হিন্দু যে মুসলমান বিদ্বেষী, তা মনে করার কারণ নেই। কারণ সিএএ’র বিরোধিতা ব্যাপক আকারে হিন্দুরাই করছে। এমনকি দাঙ্গার সময় অনেকে মুসলমানদের জীবন ও সম্পদ বাঁচাতে সহযোগিতা করেছে। এই শ্রেণীর হিন্দুর সংখ্যাই ভারতে বেশি। তারা ভারতের চিরায়ত ধর্মনিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাসী এবং তা ধরে রাখতে চাইছে। তারা মোদির হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী নয়। বিশ্বাসী নয় বলেই মোদির মুসলমান বিদ্বেষী নীতি মানছে না। মোদির এ হিন্দুত্ববাদ নীতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে এবং তার পরিণতি কি হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে ধরে নেয়া যায়, মোদি যতদিন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, ততদিন ভারতের মুসলমানদের কপালে দুর্গতি থাকবে। তবে মোদির হাতে সাম্প্রদায়িকতায় নিহত মানুষের যে রক্তের দাগ লেগে আছে, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তার এ রক্তের দাগ লেগেছে গুজরাটের দাঙ্গা থেকে। তারপর নতুন করে দিল্লীর দাঙ্গায়। এ দাঙ্গায় শুধু নিহত মুসলমানদের রক্তের দাগ তার হাতে লাগে নাই, হিন্দুদের রক্তের দাগও লেগে আছে।
তিন.
জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীতে একজন উগ্র সাম্প্রদায়িক নেতার আগমনকে দেশের মুসলমানদের পক্ষে মেনে নেয়া খুবই কঠিন ছিল। কারণ বঙ্গবন্ধু যে অসাম্প্রদায়িকতা মনেপ্রাণে ধারণ করে সারাজীবন রাজনীতি করেছেন, তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে উগ্র সাম্প্রদায়িক এক নেতার অংশগ্রহণ তাঁর চেতনারই পরিপন্থী। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দিল্লীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগার অনেক আগেই মোদিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সরকারের এ যুক্তি ধরে নিয়েও বলা যায়, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হলে বা বিরূপ পরিবেশ ও পরিস্থিতির উদ্ভব হলে, যে কোনো সরকার প্রধানের সফরের আগ মুহূর্তে তা বাতিল করার অসংখ্য নজির রয়েছে। এটা পারস্পরিক কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই হতে পারে। মোদির সফর বাতিল বা স্থগিত করার বিষয়টি এরই আলোকে হয়েছে। তা নাহলে মোদি যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অপছন্দকে উপেক্ষা করে আসতেন, তা নিশ্চিত ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ভারতকে বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী কল্পনাই করা যায় না। সরকারের এ কথার সূত্র ধরেই বলা যায়, কেউ ভারতকে বাদ দিতে বলেনি। বলেছে, মোদির কথা। আর মোদি মানেই তো ভারত নয়। মোদির আগমন না হলে যে, মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে, এমন ভাবারও কোনো কারণ নেই। ভারতে বাংলাদেশের শুভাকাক্সক্ষী আরও অনেক ব্যক্তিত্ব রয়েছে, যারা প্রকৃত অর্থেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। মোদি সরকারের লোকজন তো বাংলাদেশে কিছু অংশ দখল করে নেয়া থেকে শুরু করে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে আপত্তিকর কথা-বার্তা বলেছে। এমন একজন লোক যদি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে অংশগ্রহণ না করে, তবে তা অপূর্ণ থেকে যাবে, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং দেশের মানুষ খুশি হবে। তবে মোদির আচরণে এমনটাই প্রকাশিত হয়েছিল যে, সে নিজেই বাংলাদেশে আসার জন্য উদগ্রীব ছিলেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তার বিরোধিতা এবং তার দেশে অশান্ত পরিবেশ উপেক্ষা করেই তার সফর চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে মোদির গোর্য়াতুমি প্রকাশিত হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। অনেকে বলছেন, মোদি ভারতে মুসলমানদের দমানোর কাজ বলবৎ রেখে বাংলাদেশে তার বিরোধী মুসলমানদের প্রতিবাদকে অনেকটা চপেটাঘাত বা দেখিয়ে দিতেই অধীর হয়েছিলেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের মানুষ ভারতের জনগণ কিংবা হিন্দু বা অন্য কোনো ধর্মের মানুষের বিরোধী নয়। তারা বাংলাদেশের প্রতি ভারত সরকারের বৈরী নীতির বিরোধী। তারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরোধী। যদি তা না হতো, তাহলে বাংলাদেশের দুই কোটি হিন্দু অত্যন্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করতে পারত না। যদি এ পরিবেশ না থাকত তাহলে বাংলাদেশ থেকে কোনো হিন্দু স্থায়ীভাবে ভারত চলে গেলে সাথে সাথে নাগরিকত্ব দেয়ার যে ঘোষণা মোদি সরকার দিয়েছে, তাতে হিন্দুরা দলে দলে ভারত চলে যেত এবং হিন্দু জনসংখ্যা কমে যেত। বলা বাহুল্য, মোদিকে শুধু এ দেশের মুসলমানরাই অপছন্দ করছে না, এদেশের হিন্দুরাও অপছন্দ করছে। মোদির উপলব্ধি করা প্রয়োজন ছিল, মুসলমানবিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের সামনে দাঁড়ানো তার উচিত কিনা।
চার.
আমাদের দেশের সুশীল সমাজ বলে যে সমাজ রয়েছে, অন্য যে কোনো বিষয়ে তাদের কণ্ঠ উচ্চকিত হলেও, মোদির সাম্প্রদায়িক মনোভাবের ব্যাপারে তারা একেবারে নিশ্চুপ। মোদি সরকার যে মুসলমানদের বিতাড়ন এবং উগ্র হিন্দুদের দ্বারা হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, এ ব্যাপারে তারা টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করছে না। যেখানে ভারতেরই বিশিষ্টজনরা মুসলমানদের ওপর হত্যা-নির্যাতন এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে সোচ্চার, সেখানে আমাদের সুশীল সমাজের লোকজন মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। তারা হয়তো বিষয়টিকে ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে চুপ করে আছে। তবে কোনো দেশের ভেতর যখন এক সম্প্রদায় কর্তৃক আরেক সম্প্রদায় হত্যা-নিপীড়নের শিকার হয়, তখন তা বিশ্বব্যাপীই উদ্বেগ সৃষ্টি করে। আমাদের দেশে যখন হিন্দুরা কথিত আক্রান্তের শিকার হয়, তখন ভারত এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে উঠে। ভারতের কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিবাদে মিছিল নিয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত এসে পড়ার নজির রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়েও ক্ষমতাসীন বিজেপির অনেক নেতা ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। এসব নিয়ে আমাদের দেশের সেইসব সুশীল লোকজন একটুও প্রতিবাদ করেনি বা বলেনি, এসব আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয় এবং আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি। ভারতে সিএএ বিরোধী বক্তব্য এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো বিরোধিতা করেছে এবং তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছে। ইরান বলেছে, ভারতে মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে। জাতিসংঘের হয়ে ভারতের কোর্টে মামলাও করা হয়েছে। ফলে ভারতে মুসলমানদের নিয়ে যা করা হচ্ছে, তা যে তার আভ্যন্তরীণ বিষয়, তা মনে করার কারণ নেই। এটিকে শুধু মুসলমান নিধন বলে কথা নয়, এটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। বিশ্বের যেখানেই অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা হোক না কেন, তার প্রতিবাদ মানুষ হিসেবে প্রত্যেকেরই করা দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ এবং মানবতার কারণে ভারতের মুসলমানদের প্রতি সহমর্মীতা প্রকাশিত হবে, এটা স্বাভাবিক। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, ভারত থেকে মুসলমানদের বিতাড়িত করা হলে বাংলাদেশ তাদের যাওয়ার একটি জায়গা। ইতোমধ্যে সীমান্তে ভারতীয় মুসলমানদের প্রবেশ এবং জড়ো হওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। ফলে এ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এক রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত বিপদে রয়েছে। তাদের ভরণ-পোষণ, নিরাপত্তা দেয়া থেকে শুরু করে দেখাশোনা করতে গিয়ে অর্থনীতি যথেষ্ট চাপের মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে ভারত থেকে যদি মুসলমানদের ঢল নামে, তাহলে অবস্থা কী দাঁড়াবে, তা কল্পনাও করা যায় না।
darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
jack ali ১৩ মার্চ, ২০২০, ১১:০১ এএম says : 0
In Islam muslims are all brother and sisters---In one narrations our Prophet [SAW] said " (Believers are like one body in their mutual love and mercy. When one part of a body is in bad health, the rest of the entire body joins it in restlessness and lack of sleep and is busy with its treatment. Likewise, Muslims should run to helping each other.) [Bukhari]" (He who does not care about the troubles of Muslims is not of them.) [Hakim] meaning he/she is not Ummah of our Beloved Prophet [SAW] According to the above hadith-- those who are in power they are heartless.. If they remain like this --- Allah will throw them into hell.. so still there is time to unite under one banner which is Islam-- Islam is peace peace peace...
Total Reply(0)
নূরুল্লাহ ১৪ মার্চ, ২০২০, ৭:০৭ পিএম says : 0
হিন্দুত্ববাদি কথাটায় তাদের নৃশংসতা কদর্যতা আড়াল হয়ে পড়ে না? লিখা উচিত, পৈশাচিকতা বর্বরতা নৃশংস খুনখারাপি লুটতরাজ। তাহলে গরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায় বুঝবে মোদি বিজেপি আর হিন্দু ধর্ম এক নয়। বিশ্বমিডিয়া প্রতিবাদী মুসলিম যুবকদের কাজকর্মকে যেভাবে সন্ত্রাসের তকমা দেয় এখানে দেয় না কেনো? তাদের কর্মকাণ্ড কি ভারতের দাঙ্গা ও ইজরায়েলের জেলের চেয়ে বীভৎস! অনেক কথাই মনে পড়ে...
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন