রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর বস্তি আগুনে পুড়ে পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে। পোড়া ভস্মীভূত ছাই আর টুকরো টিন ও আসবাবের মধ্যে কিছু একটা খুঁজছিলেন বস্তির ক্ষতিগ্রস্তরা। আর তাদের মধ্যে অনেকেই র্ধ্বসস্তুপের মধ্যে বসে কান্না করছেন। গতকাল ওই বস্তিতে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। অপরদিকে বস্তির বাসিন্দাদের সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্থানীয় সুবিধাভোগীরাও। তবে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখনো তদন্ত কাজ শুরু হয়নি। এছাড়াও এ ঘটনায় রূপনগর থানায় কোনো মামলাও দায়ের করা হয়নি।
গত বুধবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের সময় মিরপুরের রূপনগর বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহুর্তের মধ্যে আগুন ভয়াবহ রূপ নেয়। এক পর্যায়ে পুরো বস্তিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট কাজ করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক নূর হাসান আহমেদকে প্রধান করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক নইমুল হাসান, মিরপুর অঞ্চলের উপ-সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন, মিরপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন ও ইন্সপেক্টর গোলাম মোস্তফা। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলে এখনো পর্যন্ত তদন্ত কাজ শুরু করেননি তারা।
গতকাল সন্ধ্যায় কমিটির প্রধান ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক নূর হাসান আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এখনো পর্যন্ত তদন্ত কাজ শুরু হয়নি। তবে আগামী রোববারের মধ্যে তদন্ত কাজ শুরু করা হবে।
জানা যায়, প্রায় ৩০ বছর থেকে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের এ জায়গাটিতে বাস ও টিন দিয়ে ঘর তুলে করে নিম্ন আয়ের লোকদের ভাড়া দেয় স্থানীয়রা। এ বস্তির পশ্চিম পাশে ৭ নম্বর ওয়ার্ড রূপনগর আবাসিক এলাকা অবস্থিত। পূর্বপাশে ৬ নম্বর সেকশন ট ব্লক আবাসিক এলাকা। দক্ষিণ দিকে ট ব্লকের বর্ধিত অংশ এবং উত্তর দিকে ঝিলপাড় বস্তি ও রূপনগর থানা। রূপনগরের ওই বস্তিতে ঝিলের ওপরে বাঁশের মাচা করে আবার কেউ বা পাকা সিঁড়িতে মাচা করে বানানো ঘরে থাকতেন। বস্তির অধিকাংশ বাসিন্দা সেখানে অল্প খরচায় ভাড়া থাকতেন। তবে তাদের প্রত্যেকের ঘরে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন ছিল। ঘরপ্রতি ২ থেকে ৩ হাজার করে ভাড়া দিতে হতো। একেক এলাকার নিয়ন্ত্রণ একেক জনের কাছে।
বস্তিবাসী জানান, গ্যাস, বিদ্যুতের যেভাবে অবৈধ সংযোগ ছিল তাতে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিল। আর গত বুধবার তাই ঘটল। আগুনে সব পুড়ে ছাই হলো। সবার স্বপ্নও পুড়ে গেল।
আলমগীর হোসেন নামের একজন জানান, তার ঘরে দুইটি গ্যাসের চুলা ছিল। গ্যাস বাবদ বিল দিতে হতো এক হাজার টাকা। ফ্রিজের বিল দিতে হতো ৪০০ টাকা। পানি বিল ১০০ টাকা দিতে হতো। সব টাকা তুলত স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা রাসেল মিয়া। শুধ রাসেল মিয়া নয়, তার মত স্থানীয় অনেক আওয়ামী লীগ নেতাই বস্তিবাসীর কাছ থেকে সুবিধাভোগ করছেন। কিন্তু আগুনে পড়ে ধ্বংসস্তুপ হওয়াতে তাদের কপাল পুড়েছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্তরা।
এদিকে, গতকাল বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বস্তি যেন রূপ নিয়েছে ধ্বংসস্তুপে। যতদূর চোখ যায় পোড়া স্তুপ। সেখানেই কেউ কেউ হাত চালিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন শেষ সম্বলপটুকু।
আসমা আক্তার নামের এক বাসিন্দা জানান, তিনি পাঁচ হাজার টাকায় দুই ঘর দিয়ে বস্তিতে বসবাস করতেন। সেখানে থেকে বাসাবাড়িতে তিনি কাজ করতেন। তার স্বামী পুঙ্গ। তিনিও বস্তির পাশবর্তী এলাকায় ভ্যানগাড়িতে পান-সিগারেট বিক্রি করতেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, আগুনে তাদের সবকিছু পুড়ে গেছে। তাই দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তারা খোলা আকাশের নিয়ে বসবাস করছেন। তবে গতকাল সকালে পুড়ে যাওয়া ঘরে গিয়ে অনেক খুঁজাখোঁজি করছি। কিন্তু কিছুই পাইনি।
তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, গত সাত মাস আগে বেঁচে থাকার অনেক আশা নিয়ে ভোলার পশ্চিম ইলিশা এলাকা ছেড়ে রূপনগর বস্তিতে ঠাঁই নিয়েছিলাম। কিন্তু এখানেই সব হারালাম। আসমার মত অনেকেই ধ্বংসস্তুপের মধ্যে বসে কান্না করতে দেখা গেছে।
এদিকে, গতকাল বিকেলে রূপনগর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। এছাড়াও এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন