বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

শিল্প ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস প্রাণহানির কারণ ছাড়াও মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছে। অর্থনীতির প্রাণ এবং জীবনযাপনের অনিবার্য বিষয় বিশ্ববাণিজ্যকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। দৈনন্দিন জীবনের কর্ম থেকে শুরু করে সংস্কৃতি ও ক্রিড়াঙ্গণও থমকে গেছে। এক কথায় মানুষকে ঘরবন্দি অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এতে অবশ্য পৃথিবীর কোনো শক্তিরই কিছু করার নেই। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা এবং যতভাবে সম্ভব সতর্কতামূলক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে চলা ছাড়া গত্যন্তর নেই। করোনা যেভাবে বিশ্বে আঘাত হেনেছে, তাতে উন্নতবিশ্বও নাজুক পরিস্থিতিতে পড়েছে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশের মধ্যে পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্যি, যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের ৮৩ লাখ কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কী অবস্থা তা ধীরে ধীরে প্রকাশ হতে শুরু করেছে। দেশের রপ্তানি খাতের শীর্ষে থাকা গার্মেন্ট শিল্প অত্যন্ত ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বায়াররা এ মুহূর্তে পোশাক নিতে চাচ্ছে না, অর্ডার বাতিল এবং উৎপাদন থেকে বিরত থাকতে বলছে। ইতোমধ্যে লাখ লাখ ডলারের অর্ডার বাতিলও করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পোশাক কারখানার মালিকরা অত্যন্ত দুঃশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছে। কীভাবে এই ক্ষতি পোষাবে এবং শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেবে, তা ভেবে মালিকরা কূল পাচ্ছে না। ঔষধ শিল্পেও প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানি সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে দেশের সংকুচিত কর্মসংস্থান আরও সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। করোনাভাইরাসের এই আঘাত মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রতি অত্যন্ত হুমকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

করোনাভাইরাসের বিস্তারকে মানবসভ্যতার সবধরনের ব্যবস্থার উপর আঘাত হিসেবে বিবেচনা করা যায়। ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবন-জীবিকা, শিল্প-সংস্কৃতি, একের সাথে অন্যের যোগাযোগ, যাতায়াত ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মকে স্থবির করে দিয়েছে। দেশে করোনাভাইরাস এখন পর্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারণ না করলেও এর শঙ্কা এবং ভীতি সবার মাঝেই কাজ করছে। আমাদের অর্থনীতির জন্য তা অত্যন্ত হুমকি হয়ে উঠেছে। আমদানি-রপ্তানি শ্লথ হয়ে পড়া এবং এ পরিস্থিতি যদি দীর্ঘ সময় চলতে থাকে, তাহলে কী পরিস্থিতি হবে, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি, শুধু দেশে কোনো মহামারি বা দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তা দেশি-বিদেশি সাহায্য-সহযোগিতায় মোকাবেলা করা গেছে। মহামারি যদি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে, তবে কে কাকে সহযোগিতা করবে? সবাই নিজেকে বাঁচানোর দিকেই নজর দেবে। করোনাভাইরাস এখন অনেকটা তেমন পরিস্থিতিই সৃষ্টি করেছে। যেখানে উন্নত বিশ্বই নিজেদের রক্ষায় ব্যস্ত, সেখানে আমাদের মতো দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানো তাদের পক্ষে কতটা সম্ভব হবে, সেটাই প্রশ্ন। এ প্রেক্ষাপটের দিকেই যেন আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদেরকে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাস থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। সরকারও যথেষ্ট প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, এ রোগের প্রভাবে অর্থনীতির গতি কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে। আমদানি-রপ্তানির স্থবিরতা থেকে শুরু করে দেশের অভ্যন্তরে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। গণপরিবহন, মার্কেট, শপিং মল, পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের যাতায়াত কমছে। অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় কর্মসংস্থানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও সংকুচিত অবস্থায় রয়েছে। সবচেয়ে বেশি শঙ্কায় রয়েছে প্রবাসী শ্রমজীবী মানুষ। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরতদের মধ্যে শঙ্কা বেশি কাজ করছে। কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় বাজার সউদী আরবে করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় দেশটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে শঙ্কা বেশি কাজ করছে। এমনিতেই দেশটি থেকে অনেক শ্রমিককে সঠিক কাগজ-পত্রের অভাবে ফিরতে হচ্ছে। তার উপর করোনার কারণে যদি ফিরতে হয়, তবে দেশকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হবে। এছাড়া করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ইউরোপে নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিয়েছে। সেখানে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট, ছোট পরিসরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ বাংলাদেশী রয়েছে। এদের মধ্যে কাগজপত্রবিহীন রয়েছে লাখের উপরে। এ অবস্থায় যদি তাদের সেখান থেকে বের করে দেয়া হয়, তবে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত চাপের মধ্যে পড়বে।

আমরা আশা এবং দোয়া করতে পারি, করোনাভাইরাস যেন দেশে বিস্তার লাভ না করে। তবে বিশ্বে এর যে প্রভাব পড়েছে, বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যে, তার প্রভাব আমাদের দেশে পড়বে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়লেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এ পরিস্থিতিতে, সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার দিকে নজর দিতে হবে। ইউরোপে যেমন বিভিন্ন কোম্পানির অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে, তেমনি আমাদের দেশেও এ ধরনের প্রকল্প স্থগিত করা প্রয়োজন। সরকারি কমগুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্প রয়েছে, যেগুলোতে এখন ব্যয় না করলেও ক্ষতি হবে না, এমন প্রকল্পের কাজ স্থগিত করা যেতে পারে। এছাড়া, অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধ করে দেয়া দরকার। অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা সামনে রেখে সরকারের উচিত হবে ‘কৃচ্ছ¡সাধন’ নীতি অবলম্বন করা। বেসরকারি খাতেও এ নীতি অবলম্বন করা যেতে পারে। সাধারণ মানুষকেও অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়িয়ে মিতব্যয়ী হয়ে চলা উচিত। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা ঠেকানো সম্ভব হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন