শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ঢাবি-ঢামেক-বুয়েটে ক্লাস বর্জন

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের দাবিতে অনশন মানববন্ধন-স্মারকলিপি

নুর হোসেন ইমন | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ বন্ধ ঘোষণা না করলেও ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধেক বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। এদিন প্রশাসনিক কাজসমূহ চললেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসে অন্যান্য দিনের তুলনায় জনসমাগম কম।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের জন্য ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও নিজেদের করণীয় ঠিক করতে আজ সভা ডেকেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা এ সভায় উপস্থিত থাকবেন। সেখান থেকে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ হবে কিনা সিদ্ধান্ত আসবে। গতকাল সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করে ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আগামীকাল সভা আছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে ভাবছি। কিভাবে শিক্ষার্থীদের এর থেকে সুরক্ষা দিতে হয় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আগামীকালের সভা থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নেব যে আমরা ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ করছি কিনা। এছাড়াও এ ভাইরাস থেকে সুরক্ষায় আর কী কী করা যায় সেসব বিষয়েও সিদ্ধান্ত হবে সভায়।

রোববার ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করা বিভাগসমূহের মধ্যে রয়েছে, অর্থনীতি, আইন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আরবি ভাষা ও সাহিত্য, মার্কেটিং, গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, টেলিভিশন ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি, হিসাব বিজ্ঞান, ওমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ, শিক্ষা ও গবেষণা, প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স স্টাডিজ, জাপানি ভাষা ও সাহিত্য, জিওলজি, ফার্মেসী, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইসলামের ইতিহাস, থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ। এছাড়াও আরও কয়েকটি বিভাগের প্রথম ও দ্বিতীয়সহ ভিন্ন ভিন্ন ব্যাচ ক্লাস বর্জন করে। এদিকে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে বুয়েটের সব বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রত্যেক বিভাগের শ্রেণি প্রতিনিধিরা (সিআর) গত শুক্রবার রাতে এই সিদ্ধান্ত নেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যাননি। তবে ক্লাস বর্জন অব্যাহত রাখবেন কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি এখনও।

বুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর মিজানুর রহমান বলেন, বেশির ভাগ বিভাগেই শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসেনি। তবে ঠিক কী কারণে ক্লাসে আসেনি, সেটা বলতে পারব না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। রেওয়াজ আছে প্রতিযোগিতার পরদিন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসে না। এবারও কি সেটা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার কারণে না করনার আতঙ্কে সেটা পরবর্তী ক্লাসের দিন উপস্থিতির হার দেখে বোঝা যাবে।

অন্যদিকে, করোনার কারণে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর হল ছাড়তে শুরু করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। কলেজের অধ্যক্ষ খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সমস্ত ক্লাস চলছে। সরকারিভাবে যেদিন সকল স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হবে, সেদিনই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করা হবে, তার আগে নয়।

বন্ধ ঘোষণা করতে ভিসিকে শিক্ষক সমিতির আহ্বান: বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি। রোববার সমিতির সভাপতি প্রফেসর এ এস এম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের নিকট এ আহবান করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনা ভাইরাস বিশ্বজুড়ে মহামারী রূপ নিয়েছে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সতর্কতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশে জনসমাগম, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ করা হয়েছে। কোনো কোনো দেশে রাষ্ট্রীয় জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে।

ডাকসুর স্মারকলিপি: করোনা প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় ঢাবির সকল একাডেমিক কর্যক্রম সাময়িক বন্ধ ভিসির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। গতকাল ডাকসু ভবনে এক বৈঠক শেষে সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর ও এজিএস সাদ্দাম হোসেন।

৫ শিক্ষার্থীর অনশন: কোভিড-১৯ সংক্রমণের আশংকায় ক্যাম্পাস বন্ধের দাবিতে অনশন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। শনিবার রাত ৮টায় অনশন শুরু করে রবিবার দুপুরে প্রচন্ড রোদ থাকা সত্বেও কোন রকম ছাওনি ছাড়াই অনশন চালিয়ে গেছেন। অনশনকারী শিক্ষার্থী হাসান বিশ্বাস বলেন, আমরা গতকাল সন্ধায় এখানে অনশন শুরু করি, আজ সকালে একটু খারাপ লাগছিল, এখন এই দুপুরে তপ্ত রোদে পুড়ছি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা কোন শিক্ষক এখন পর্যন্ত নিজে তো আসেননি, খোঁজখবর নিতেও কাউকে পাঠাননি। রকিব রানা মাসুদ বলেন, আমরা গতকাল থেকে অনশন করতেছি কিন্তু আমাদের অভিভাবকবৃন্দ আামদেরকে একবারও দেখতে আসলো না।

নবীন শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও ভিসিকে স্মারকলিপি: ঝুঁকিপূর্ণ গণরুমে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আতঙ্কে ক্যাম্পাস বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই মানববন্ধন শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, গাদাগাদি করে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। ফলে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা না করা হলে কোনো শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে তা মারাত্মক আকার ধারণ করবে। মানববন্ধনে রায়হান আহমেদ নামের শিক্ষার্থী বলেন, ভিসি ও প্রক্টর স্যার যে রকম দায়সারা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ।

৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম ছাত্র ইউনিয়নের: বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের জন্য ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ। গতকাল ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা এই আল্টিমেটাম দেন। তাদের আট দফা দাবি হচ্ছে- ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবাসিক শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা; মেডিকেল সেন্টারের পূর্ণ আধুনিকায়ন, মেডিকেল সেন্টারের শয্যাসংখ্যা দুইশত (২০০), ডাক্তারের সংখ্যা একশত (১০০)-তে উন্নীত করাসহ বিভিন্ন দাবি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন