বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিতে তামাকজাত দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির ফলে তামাক কোম্পানি লাভবান হচ্ছে। মূল্যের ওপর শতকরা হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপের কারণেই এভাবে লাভবান হচ্ছে তারা। তাই আসন্ন বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর প্রচলিত কর ব্যবস্থা পরিবর্তন করে সম্পূরক শুল্কের পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট করারোপের প্রস্তাব করেছে দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি দেশে একটি কার্যকর তামাক কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি তামাক-কর নীতিমালা প্রণয়নেরও দাবি জানিয়েছে তারা।
সোমবার (১৬ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর (বিইআর) কনফারেন্স হলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আয়োজিত তামাক কর নীতিমালা প্রস্তাবনা বিষয়ক এক মত বিনিময় সভায় তারা এ দাবি জানান। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা দ্য ইউনিয়নের সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো এ সভার আয়োজন করে।
সভায় বক্তারা বলেন, সরকার প্রতি বছর তামাক খাত থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেলেও তামাকজনিত রোগের কারণে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। সঙ্গে প্রতিবছর মৃত্যুবরণ করছে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ। করারোপের মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে এই মৃত্যুর হার কমানোর পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়ানো সম্ভব।
তারা বলেন, বর্তমানে প্রায় ২৬ শতাংশ নারী ধোঁয়াহীন তামাক ব্যবহার করছে। যেটা খুবই উদ্বেগজনক। ফলে ২০ গ্রামের নিচে কোনো গুল-জর্দা প্যাকেটজাতের অনুমোদন দেয়া যাবে না। একইসঙ্গে ২০ শলাকার নিচে কোনো সিগারেটের প্যাকেট তৈরির অনুমোদন না দেয়ার পাশাপাশি এসব দ্রব্যের খুচরা বিক্রিও বন্ধ করতে হবে। দেশকে তামাক মুক্ত করতে তামাক পণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানিতে শূন্য শতাংশ শুল্কারোপ পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত দেশ গড়তে একটি সুনির্দষ্ট তামাক করনীতি প্রণয়ন করতে হবে।
সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসন ও উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের প্রফেসর ড. নাসিরুদ্দীন আহমেদ, ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথের প্রফেসর ড. জাহিদুল কাইয়ুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. রুমানা হক, দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, স্টেট ইউনিভার্সিটির স্কুল অব হেলথ সাইন্সের ডিন প্রফেসর ড. নওজিয়া ইয়াসমিন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া মত বিনিময় সভায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগের শিক্ষক ও হাসপাতালের চিকিৎসক তামাক কর বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। এ সময় সভায় তামাক কর নীতিমালার একটি খসড়া তুলে ধরে উপস্থিত বিশেষজ্ঞদের মতামত নেন ড. রুমানা হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিইআরের তামাক কর প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন