উৎপাদন মৌসুম ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি চলছেই। এতে সর্বনাশ ঘটছে পেঁয়াজ চাষিদের। বাংলাদেশে যখন পেঁয়াজের তীব্র সঙ্কট ও মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছিল তখন আকস্মিতভাবে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। এখন চলছে পেঁয়াজ উৎপাদনের ভরা মৌসুম। যশোর, মেহেরপুর, বগুড়া, রংপুর, কুষ্টিয়া, নরসিংদী ও গোপালগঞ্জসহ দেশের প্রায় সবখানেই চাষিরা গতবারের চেয়ে বেশি পেঁয়াজ আবাদ করেন। ফলনও ভালো হয়েছে। এক বুক আশা নিয়ে চাষিরা পেঁয়াজ উৎপাদন করেন। কিন্তু বাজারে তুলতেই চোখ কপালে উঠছে চাষিদের। মন ভেঙে যাচ্ছে। উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না তারা। মাঠে পেঁয়াজের মূল্য ২৫ থেকে ২৬টাকা কেজি। অথচ মুনাফালোভী পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাজারে নতুন দেশী পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৪০টাকা।
চাষিদের কথা, পেঁয়াজ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছি। পচনশীল পণ্য্য ঘরে রাখারও উপায় নেই। তাই লোকসান হলেও বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। মাঠের চিত্র হচ্ছে, চাষিরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে পেঁয়াজ উৎপাদন করে আশানুরূপ মূল্য না পাওয়ায় দারুণভাবে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন। তারা চরম ক্ষুব্ধ। ভারতীয় আমদানিকৃত পেঁয়াজ আসতে থাকলে মূল্য আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা, চাষি, বাজার কর্মকর্তাদের পরামর্শ চাষিদের স্বার্থরক্ষায় এখনই জরুরি ভিত্তিতে সরকারকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ঘোষণা করা উচিত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. আবদুল মুঈদ গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দেশে এবার পেঁয়াজ উৎপাদন খুবই ভালো হয়েছে। মোট ২ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষিপণ্য আমদানির ইমপোর্ট পারমিট দিয়ে থাকে। দেশে যখন পেঁয়াজের সঙ্কট চলছিল তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ইমপোর্ট পারমিট দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুমতিপত্র নিয়ে এখন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান জানান, মাঠের চিত্র তুলে ধরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ ব্যাপারে একটি রেজ্যুলেশন পাঠানো হয় কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। বলা হয়, চাষিদের ন্যায্যমূল্য পেতে পেঁয়াজ আমদানি পুরোপুরি বন্ধ রাখা জরুরি। মার্চের ৫তারিখে পাঠানো মাঠের পরামর্শ মন্ত্রণালয় কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় পেঁয়াজ চাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
মেহেরপুরের মুজিবনগর এলাকার পেঁয়াজ চাষিরা বললেন, উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে আমরা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ ড, আখতারুজ্জামান চাষিদের অসন্তোষের সত্যতা স্বীকার করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় একই দেশের অবস্থা অন্যান্য এলাকার চাষিদেরও। আশানুরূপ মূল্য না পেয়ে অনেকে কাঁদছেন। বিশেষ করে ভারতীয় পেঁয়াজ ঢোকার সংবাদে চাষিরা নানা ধরণের খেদোক্তি করছেন। কাস্টম সূত্র জানায়, বেনাপোল ও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ট্রাক ট্রাক পেঁয়াজ ভারত থেকে ঢুকছে বাংলাদেশে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন