শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

করোনায় আক্রান্ত আরও ৩

হোম কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশ না মানলে আইনি ব্যবস্থা : আইইডিসিআর

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশে নতুন করে আরও তিন জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। নতুনরা আগে আক্রান্ত ইতালি ফেরত এক পরিবারের সদস্য। এ নিয়ে দেশে মোট আট জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিন জন সুস্থ হয়ে গেছেন। বর্তমানে হাসপাতালে আছেন পাঁচ জন। ৫ জনের মধ্যে ২ জন পুরুষ, ১ জন মহিলা এবং ২ জন শিশু। তবে এখনও আইসোলেশনে আছেন ১০ জন। এদিকে যারা হোম কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশ মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সরকারের রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক প্রফেসর মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস অতি দ্রুত ছড়ালেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর সংক্রমণ খুব মৃদু হয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি। তারা মৃদু রোগে ভুগছেন। তাদের মৃদু কাশি, গলাব্যথা, মৃদু জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ পায়। আমরা প্রতিরোধে গুরুত্ব দিচ্ছি সতকর্তায়। সবার অংশগ্রহণ ছাড়া রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

প্রফেসর ফ্লোরা বলেন, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে দুজন শিশু। এ তিন জনের ১ জন ২৫ বছর বয়সী নারী, ১ জন ৬ বছর বয়সী মেয়ে ও ১ জন ২ বছর বয়সী ছেলে শিশু। দুই শিশুর জ্বর-সর্দি, কাশির সুস্পষ্ট লক্ষণ ছিল। তাবে তাদের সবার সংক্রমণই ‘মৃদু’ বলে উল্লেখ করেন ফ্লোরা।

স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ও অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত দেশে বিদেশ ফেরত সন্দেহজনক তিন হাজার ৪৮৮ জনকে হোম কেয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইনে থাকার এই পরিসংখ্যান গত ১০ মার্চ থেকে শুরু করেছে সরকার। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩৪৩ জন। এরপরেই ঢাকা বিভাগে ১২০৯ জন। রাজশাহীতে ৪১৯ জন, খুলনায় ৩২৬ জন, বরিশালে ৫০ জন, ময়মনসিংহে ৪২ জন, রংপুরে ৩২ জন এবং সিলেটে ৬৪ জন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে মানিকগঞ্জ জেলায় ২৯৬ জন। সেখানে গত ২৪ ঘন্টায় (রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত) ৪৯ জনকে হোম কেয়ারেন্টাইন করা হয়েছে।

এদিকে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, যে এলাকা বা উপজেলা থেকে সংক্রমনটি স্থানীয় ভাবে ছড়াতে শুরু করেছে সেই এলাকাটি লকডাউন করার বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তারা জানান, কর্তৃপক্ষ মনে করছে কোন এলাকায় যদি ১০ জন বা তার বেশি মানুষ স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয় তাহলে এলাকাটি লক ডাউন করা হবে। অন্যথায় স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতায় কঠোর নজরদারিতে রাখা হবে।

ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা আবারও অনুরোধ করছি, যারা বাইরে থেকে আসছি, তারা যাতে পরিবারের কাছ থেকেও দূরত্ব বজায় রাখি। তাহলে আমরা হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে পারবো। কিন্তু, এক্ষেত্রে পরিবারেরও ভূমিকা নিতে হবে। যদি সেক্ষেত্রে পালন করা সম্ভব না হয়, তাহলে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে।

আইইডিসিআর পরিচালক জানান, আক্রান্তরা যে উপজেলার বাসিন্দা, সেখান থেকে যেন রোগটি ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য ওই জায়গার ওপর কঠোর নজরদাড়ি রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ মুহুর্তে যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন, তাদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে হলে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। যারা বিদেশ থেকে এসে পরিবারের সঙ্গে থাকছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদেরই কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে। যদি কেউ বিষয়টি না মেনে অবাধ ঘোরাফেরা করেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে সংক্রামক ব্যাধি আইন প্রয়োগ করা হবে। এক্ষেত্রে আর্থিক জরিমানার ওপরও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলেও জানান প্রফেসর ফ্লোরা।

বিশ্বজুড়ে নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম তিনজনের শরীরে ভাইরাস সনাক্ত করার তথ্য প্রকাশ করে আইইডিসিআর। আইইডিসিআরে এ পর্যন্ত লক্ষণ ও উপসর্গ দেখে ২৪১ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে। তাদের মধ্যে ওই আটজন ছাড়া আর কারও মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েনি।

চীনে কোয়ারেন্টাইন শেষে ফিরেছে ৪৪ বাংলাদেশি : বিশ্বজুড়ে মহামারী রূপ নেওয়া করোনাভাইরাস ছড়ানোর কেন্দ্রস্থল চীন থেকে ফ্লাইটে করে গতকাল বাংলাদেশে এসেছেন ৪৪ জন। যাদের কাছে কোয়ারেন্টিনের মেয়াদপূর্ণ করার সনদ রয়েছে বলে জানিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে দেশেও তারা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধিদের কাছে প্রতিশ্রুতি করে গেছেন। এদিকে গতকাল দুপুর থেকেই যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপ থেকে যাত্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। সরাসরি বা ট্রানজিট যে ফ্লাইটেই আসুক তাদের ফেরত পাঠানো হবে। এই নিষেধাজ্ঞা ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

উল্লেখ্য, কারো এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে সরাসরি আইইডিসিআরে না গিয়ে তাদের হটলাইনে (০১৯৪৪৩৩৩২২২) ফোন করে জানাতে বলা হয়েছে।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন