শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অল্প সময়েই সংস্কারের উদ্যোগ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শুধুই দুর্ভোগ। সড়কের সঙ্গে মালবাহী বাহনের অসামঞ্জস্য, অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল ছাড়াও দুর্ভোগের পেছনে অন্যতম কারণ ত্রুটিপূর্ণ মেরামত। মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় যানবাহন চলছে হেলেদুলে। ভারী যানবাহনের চাপে দ্রুত নষ্ট হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
একটি যাত্রীবাহী বাসের চালক আলমগীর স্বপন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, চার লেনের কাজ শেষ হওয়ায় ভেবেছিলাম চার পাঁচ বছরেও মহাসড়কে ভাঙন ধরবে না। কিন্তু দেড় দুই বছরেই মহাসড়ক আগের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অথচ নির্মাতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ২০২৩ সাল পর্যন্ত কোনো ক্ষতি হবে না। কোনো সংস্কারও করতে হবে না। কিন্তু কয়েক বছর পার না হতেই সড়কটি যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেন তৈরির অল্প সময়ের মধ্যেই সংস্কারে যাচ্ছে দেশের এই জাতীয় মহাসড়কটি।

এ জন্য চার লেনে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক (এন-১) (দাউদকান্দি-চট্টগ্রাম অংশ) এর চার বছরের জন্য পারফরমেন্স বেজড অপারেশন ও দৃঢ়করণ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়িত হলে পরবর্তী চার বছরের জন্য পারফরমেন্স বেজড রক্ষণাবেক্ষণ ও পেভমেন্ট শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে সড়কটির পূর্ণ উপযোগিতা ও স্থায়ীত্ব নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নিরাপদ ব্যবস্থা সচল রাখা সম্ভব হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৭৯৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ১৯২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেন উন্নীত করা হয়েছে। চার লেনে উন্নীতকরণ শেষে প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালের ২ জুলাই মহাসড়কটি যানবাহন চলাচলের জন্য উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে মহাসড়কটি প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চার লেনে উন্নীত ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক এর পরবর্তী ৫ বছরের জন্য পারফরমেন্স-বেজড রক্ষণাবেক্ষণ ও পেভমেন্ট শক্তিশালীকরণ শীর্ষক একটি প্রকল্প সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে সরকারি অর্থায়নে ৯৪৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ সালের জুলাই হতে ২০২৩ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে।
প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-চট্টগ্রামের সঙ্গে উন্নত, নিরাপদ, টেকসই ও ব্যয়সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ প্রকল্প এলাকার জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে। তাই প্রকল্পটির অনুমোদন বিবেচনাযোগ্য।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৭৯৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ৭৭ হাজার ৮৯০ দশমিক ৬৮ ঘন মিটার সড়ক বাঁধে মাটির কাজ, ৩৭ দশমিক ৭১৯ লাখ বর্গমিটার ট্র্যাক কোট, ১ দশমিক ৮৬৮ লাখ ঘন মিটার ওয়ারিং কোর্স, ১ দশমিক ২১৯ লাখ বর্গমিটার রোড মার্কিং, ১৪ দশমিক ৩২৩ লাখ বর্গমিটার রাট কারেকশন বাই মিলিং মেশিন, ১৬০০টি সাইন পোস্ট এবং একটি স্টিলের ফুট ওভারব্রিজ করা হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এটির অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণে সম্মতির জন্য সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হলে তার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পটি নেয়ার যৌক্তিকতা নিরূপণের জন্য ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধানের নেতৃত্বে বুয়েটের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়।

তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেজা কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, অতিরিক্ত যানবাহন এবং অতিরিক্ত মালবাহী গাড়ির চাপে সড়কের এমন পরিণতি হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, এ সড়কের হার্ড সোল্ডারের পাশে মাটির অংশে পানি জমে থাকে। একই অবস্থা ফেনী রেললাইন এলাকায়ও। চার লেন সড়কটির নকশা করার সময় সম্মিলিত আদর্শ স্কেল বা ভারবহন ক্ষমতা ধরা হয় সাড়ে নয় কোটি, যা ২০২৩ সালে অতিক্রম করার কথা। কিন্তু দেখা গেছে, ২০১৭ সালেই আদর্শ স্কেলের এর ভারবহন ক্ষমতা অতিক্রম করেছে সড়কটি। ২০১৭ সালে চার লেনে ট্রাফিক ও এক্সেল লোড সমীক্ষা থেকে এ তথ্য বেরিয়ে আসে। এতে দৈনিক প্রায় ৩৭ হাজার যান (যেগুলোর মধ্যে ১০-১২ হাজার ওভারলোডেড ট্রাক-কার্ভাডভ্যানও রয়েছে) চলাচল করায় মহাসড়কটিতে মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। সওজের গাইডলাইন অনুসরণ না করায় মহাসড়কটির আয়ুস্কালও দ্রুত কমে আসছে। এতে আগামী বছরগুলোতে সড়কটির উপরিভাগ স্বাভাবিক রাখা দুস্কর হয়ে উঠবে। বর্ষাকালে সড়কের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক বিশেষজ্ঞরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন