শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইমাম তিরমিজী রহ.

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

ইমাম আবু ঈসা মোহাম্মাদ ইবনে ঈসা ইবনে সাওরা ইবনে শাদ্দাদ রহ. অন্যতম একজন হাদীস সংগ্রহ গ্রন্থের সংকলক। তিনি ‘তিরমিজী’ উপাধীতে বিশ^ময় পরিচিত।

এই নিসবত তাকে তিরমিজ নামক স্থানের সাথে সম্পর্কিত করে। এই স্থানটি ‘বলখ’ হতে ১৮ মাইল দূরে ঊর্ধ্বতন আমু দরিয়ার তীরে অবস্থিত। তিনি হাদীস শিক্ষা ও সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ইরাক, হিজাজ এবং খোরাসান ও অন্যান্য অঞ্চল ব্যাপকভাবে সফর করেন। তার বহু উস্তাদগণের মধ্যে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ., ইমাম মোহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল বোখারী রহ. এবং ইমাম আবু দাউদ সিজিস্তানীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ইমাম আবু ঈসা মোহাম্মাদ ইবনে ঈসা রহ.-এর সংকলিত হাদীসগ্রন্থ ‘জামে তিরমিজী’ ৬টি সহীহ ও বিশ^স্ত হাদীস গ্রন্থের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করে আছে। বুস্তামুল মোহাদ্দেসীন গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, ইমাম তিরমিজি রহ. জামে তিরমিজী ছাড়াও তাফসীর, ফিকহ, ইতিহাস, ইলমে যুহদ, রাবীদের নাম, কুনিয়াত বা উপনাম প্রভৃতি বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন।

শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী রহ. বলেন, হাদীস শাস্ত্রেই তার বহু গ্রন্থ আজও তার স্মৃতি বহন করে চলেছে। তার গ্রন্থাবলির মধ্যে জামি আত-তিরমিজীতে রাসূলুল্লাহ সা.-এর ব্যক্তি জীবন, চরিত্র ও আচরণ সম্বন্ধে হাদীস সংকলন বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তাছাড়া ৪০টি হাদিসের এক ক্ষুদ্র সংগ্রহের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। আরবি উৎস হতে জানা যায় যে, সুফীতত্ত¡, নাম ও কুনিয়্যা, ব্যবহার শাস্ত্র, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়েও তিনি পুস্তক রচনা করেছিলেন।

তার হাদীস সংগ্রহটি ১২৯২ সালে কায়রো হতে প্রকাশিত সংস্করনে ‘সহীহ’ বিশেষণটি সংযোজিত হয়েছে। কিন্তু অন্যত্র প্রকাশিত গ্রন্থের নাম ‘জামে তিরমিজী’। শেষোক্ত বিশেষণটিই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত। কারণ এতে শরীয়া সংক্রান্ত হাদীস ছাড়াও অন্যান্য বিষয়েরও হাদীস রয়েছে। এই হাদীস গ্রন্থের অধ্যায়গুলোর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যাবে যে, গ্রন্থের প্রায় অর্ধাংশেই আকাঈদ, (কবর, কিয়ামত, জান্নাত, জাহান্নাম, ঈমান, কোরআন) ফিতান, রুইয়া, যুহদ, তাজবিদুল কোরআন, দাওয়া, আচরণ শিক্ষা (ইসতিযান-অনুমতিগ্রহণ, আদব শিষ্টাচার) এবং ধর্মবেত্তাগণের বিশেষত: সাহাবীগণের জীবনচরিত সংক্রান্ত হাদীস সংকলিত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, জামি তিরমিজীতে মোট ৩৮১২টি হাদীস সংকলিত হয়েছে। হাদীসগুলো ৪৫ অধ্যায় (কিতাব) এবং ২৪১৪টি পরিচ্ছেদে (বাব) সন্নিবেশিত হয়েছে। দৃশ্যত: সহীহ বোখারী অথবা সহীহ মুসলিম অপেক্ষা কম হাদীস এই গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। কিন্তু পুনরুক্ত হাদিসের সংখ্যা এই গ্রন্থে অনেক কম, মাত্র ৮৩টি।

এই গ্রন্থের দুইটি অধ্যায় বিশেষভাবে বিস্তারিত। যথা : মানকিব ও তাফসীরুল কোরআন। অপর তিনটি সুনানে (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) এই অধ্যায় দু’টি নাই। এই গ্রন্থে হযরত আলী রা.-এর প্রতি অনুরাগপ্রবণ হাদিসের সংখ্যা যেমন কম নয়, তেমনই হযরত আবু বকর রা., হযরত উমর রা. এবং হযরত উসমান রা.-এর সম্বন্ধে হাদীসও বাদ পড়েনি।

তবে ইমাম তিরমিজী রহ. কর্তৃক সংকলিত হাদীসগ্রন্থ দু’টি দুইটি বিষয়ে বৈশিষ্ট্য মন্ডিত ও আকর্ষণীয়। তা হলো : ক. হাদীসের সনদ সম্পর্কে সমালোচনামূলক মন্তব্য এবং খ. প্রত্যেক হাদীসের বর্ণনা শেষে বিভিন্ন মাজহাবের ইখতিলাফ এবং নিজ নিজ প্রমাণের উল্লেখ।

এদিক থেকে জামে তিরমিজী অনন্য ভ‚মিকার অধিকারী। ইমাম শাফেঈ রহ.-এর সংকলিত ‘কিতাবুল উম্ম’ অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি অসম্পূর্ণ ও সর্বত্র প্রামাণ্য নয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইমাম তিরমিজী রহ. তদসংকলিত হাদীসগ্রন্থে হাদীসের প্রকারভেদ স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। যথা: সহীহ, হাসান, জয়ীফ, গারীব, মুয়াল্লাল ইত্যাদি। এতকিছুর পরও এই গ্রন্থে রাবীদের নাম, উপনাম ও রিজাল শাস্ত্র সম্পর্কিত অন্যান্য বহু মূল্যবান তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে।

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী রহ. বলেছেন, জ্ঞান সাধকগণের জন্য ইমাম তিরমিজী রহ. সংকলিত গ্রন্থে প্রয়োজনীয় সব কিছুই সরবরাহ করেছেন। এ জন্যই বলা হয়ে থাকে যে, জামি তিরমিজী গ্রন্থটি মুজতাহিদ ও মুকাল্লিদ উভয়ের প্রয়োজন মিটাতে যথেষ্ট। এতসব গুণাবলীর জন্য হাফেজ ইবনুল আছির রহ. ইমাম তিরমিজী রহ.-এর ভ‚য়সী প্রশংসা করেছেন।

এই জ্ঞানাজ্ঞান শলাকাধারী পুণ্যবান পুরুষ হিজরি ২৭৯ মোতাবেক ৮৯২-৯৩ খ্রিষ্টাব্দে তিরমিজ নামক স্থানে পরলোক গমন করেন এবং সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। মতান্তরে তিরমিজের উপকণ্ঠে বুগ নামক পল্লীতে ২৭৫ হিজরি মোতাবেক ৮৮৮-৮৯ খ্রিষ্টাব্দে কিংবা ২৭০ হিজরি মোতাবেক ৮৮৩-৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। কথিত আছে যে, তিনি জন্মান্ধ ছিলেন। তা সমর্থনযোগ্য নয়। বরং তিনি বার্ধক্যে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ছিলেন বলে জানা যায়। আল্লাহপাক তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে মাকাম দান করুন। আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Abdul Motaleb Ripon ১৮ মার্চ, ২০২০, ২:০৮ এএম says : 0
ইমাম তিরমিজী রহ. সম্পর্কে তথ্যবহুল এই লেখাটির জন্য এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী সাহেবকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
জামিল ১৮ মার্চ, ২০২০, ২:০৯ এএম says : 0
লেখাটির মাধ্যমে বেশ কিছু নতুন তথ্য জানলাম
Total Reply(0)
পাবেল ১৮ মার্চ, ২০২০, ২:০৯ এএম says : 0
আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম জাযাহ প্রদান করুক। আমিন
Total Reply(0)
বাবুল ১৮ মার্চ, ২০২০, ২:১০ এএম says : 0
দৈনিক ইনকিলাবের এই বিভাগটি আমার সবচেয়ে ভালো লাগে
Total Reply(0)
তুষার আহমেদ ১৮ মার্চ, ২০২০, ২:১১ এএম says : 0
আল্লাহপাক তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে মাকাম দান করুন। আমীন।
Total Reply(0)
সাইফ ১৮ মার্চ, ২০২০, ১০:১৯ এএম says : 0
আল্লাহ্‌ পাক জনাব লেখক সাহেব ও ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে এর উত্তম প্রতিদান অবশ্যই দেবেন।
Total Reply(0)
Zahir Rahan ১৮ মার্চ, ২০২০, ১১:০০ এএম says : 0
আল্লাহপাক তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে মাকাম দান করুন। আমীন।
Total Reply(0)
H.M mijan ১৮ মার্চ, ২০২০, ১১:৪৫ এএম says : 0
মাশাআল্লাহ তিরমিযী কিতাটি খুব সুন্দর কিতাব
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন