শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি

| প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০২০, ১২:০৩ এএম

সরকারের তরফ থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানাবিধ স্তর কালক্রমিক পরিকল্পনার কথা বলা হলেও বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতানুগতিক ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, রাজস্ব আয়, রফতানি বাণিজ্য ও রেমিটেন্স আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হচ্ছে না। অর্থনীতিতে বড় ধরনের আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে বেশ কয়েক মাস ধরেই। এহেন বাস্তবতায় উন্নয়নের শর্তগুলো বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ ছাড়াই উন্নয়নের রাজনৈতিক ফাঁকাবুলি শোনানো হচ্ছে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা সামনে রেখেই অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দৃঢ়তা ও ইতিবাচক মনোভঙ্গিতে কিছুটা আশ্বস্ত হওয়া গেলেও কর্মক্ষেত্রে তার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। সম্প্রতি একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার ৩৭.১ শতাংশ মাত্র। এটি আমাদের জন্য কোনো নতুন অভিজ্ঞতা নয়। গত এক দশক ধরেই এডিপি বাস্তবায়নে দুর্বলতা ও ব্যর্থতা সম্পর্কে অনেক কথা হয়েছে। সরকারের শীর্ষ মহল, বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগীদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নানা ধরনের সুপারিশ দিতেও দেখা গেছে। বিশেষত উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও পদ্ধতিগত দুর্বলতা দূর করার ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না থাকায় এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি, অনিয়ম-অস্বচ্ছতার গ্যাড়াকল থেকে বের হতে পারছে না সরকার।

গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রাক্কলিত ১০৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের ১ হাজার ১৬৭ কোটি ৯১ লাখ টাকার এক টাকাও খরচ হয়নি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি অগ্রগতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। আজ অনুষ্ঠিতব্য এনইসি বৈঠকে এই প্রতিবেদন উপস্থাপিত হতে পারে বলে জানা গেছে। এ ধরনের প্রতিবেদন প্রতিবছরই একাধিকবার উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে। আইএমইডি’র পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নে ঘাটতি না থাকলেও সুপারিশমালা বাস্তবায়নের ঘাটতি প্রকট। এহেন বাস্তবতায় এসডিজি বাস্তবায়নসহ উন্নয়নের রোডম্যাপ নিয়ে সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের উচ্চাভিলাষী প্রকল্প গ্রহণ ও অতিশয়োক্তি যেন রাজনীতির মেঠো বক্তৃতায় পরিণত হয়েছে। অর্থবছরের ৮ মাসে যদি উন্নয়ন কর্মসূচির একতৃতীয়াংশ বাস্তবায়ন হয় তবে বাকি চারমাসে অবশিষ্ট দুই-তৃতীয়াংশ বাস্তবায়ন নিশ্চিতভাবেই সম্ভব নয়। এরপরও অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে তড়িঘড়ি করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বড় ধরনের অপচয়, লুটপাটের শিকার হয় জাতীয় উন্নয়ন বাজেটের একটি বড় অংশ। একদিকে জনগণের রাজস্বের অর্থের এমন অপচয়-লুটপাট অন্যদিকে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রাসহ সরকারের সামগ্রিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের সম্ভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিদেশি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ দেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ে দেশে পরিণত করার যে পরিকল্পনার কথা বলা হচ্ছে, চলমান বাস্তবতার আমূল পরিবর্তন না হলে তা কার্যত অসম্ভব। চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় অর্থনীতির সব সূচকেই পিছিয়ে যাচ্ছে দেশ।
বিগত অর্থ বছরের শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করতে না পারার বাস্তবতা এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে এডিপির ৩৭ শতাংশ বাস্তবায়নের হার থেকেই বুঝা যাচ্ছে, সরকারি কাজে পদ্ধতিগত দুর্বলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো যায়নি। আইএমইডি’র প্রতিবেদন দেখে গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় একনেক বৈঠকে হয়তো প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করবেন, সংশ্লিষ্টদের হয়তো ভর্ৎসনা করবেন। অতীতে এমনটা অনেকবার হয়েছে বাস্তব পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। কর্মকর্তারা পুকুর ও খাল খনন দেখতে উগান্ডা গিয়ে সরকারি টাকার অপচয় করলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। দূরবর্তী ও উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এডিপি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত হয়, কর্মসংস্থান ও জীবনমানের গুণগত পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। বাজেট বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা না থাকায় বাজেট কাটছাঁটসহ বিদেশি উৎস থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দ ফেরত দেয়ার অভিজ্ঞতাও নতুন নয়। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন ধারাবাহিক ব্যর্থতা নিয়ে দেশকে উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছে দেয়ার আশাবাদ এক ধরনের রাজনৈতিক ফাঁপা বুলিতে পরিণত হচ্ছে। পদ্মাসেতু, এক্সপ্রেসওয়ে, র‌্যাপিড ট্রানজিট মেট্টো প্রকল্পের মতো অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আমরা অবশ্যই গৌরব বোধ করতে পারি। কিন্তু বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রকল্প বাস্তবায়নে পদ্ধতিগত দুর্বলতা, অস্বচ্ছতা ও অক্ষমতা দূর করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক ও কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ না নিলে অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। মুজিববর্ষের উন্নয়ন কর্মসূচিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা, দক্ষতা নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করা হোক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ১৯ মার্চ, ২০২০, ১১:৪৩ এএম says : 0
In Islam Action Speak-- May Allah Install a leader who will rule our country by the Law of Allah-- It's the only way we can live in our country with human dignity with peace and prosperity...
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন