বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

করোনা বা কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর প্রায় দেড়শ কোটি মানুষের দেশ চীন কার্যত লক-ডাউন করেছিল। সেই সাথে রাতারাতি হাজার হাজার বেডের বিশাল হাসপাতাল নির্মান, লাখ লাখ মানুষকে আইসোলেশনে রেখে ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে দেশটি। শতকোটি মানুষের ঘনবসতিপূর্ণ চীনা শহরগুলোতে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াত আজকের ইতালির অবস্থা থেকে তা সহজেই অনুমেয়। চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথেই ইতালি সর্তকতামূলক পদক্ষেপ নেয়ার পরও ডাক্তারদের অনবধানে তা এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়েছে। চীন এবং ইতালির অভিজ্ঞতা ও পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ-ভারতসহ করোনাভাইরাস ভিকটিম দেশগুলোর অনেক শিক্ষনীয় আছে। বেশ কিছু মানুষ হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা গতকাল পর্যন্ত ২০ জনের কম। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে মতভিন্নতা থাকলেও গত দুইমাসে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রার্দুভাব হিসেবে দেখা দেয়নি। তবে ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর প্রথম মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছে। যেহেতু করোনাভাইরাসের লক্ষ্যনসমুহ প্রকাশ পেতে দুই সপ্তাহ সময় লাগে। এ কারনে শুরুতে আক্রান্ত ব্যক্তি জানতেও পারেননা তিনি ভাইরাস বহন করছেন। অসচেতনতা ও অবহেলায় রোগ ছড়িয়ে তা মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। এখানেই আমাদের জন্য অনেক বড় বিপদের আশঙ্কা।

করোনাভাইরাসের এপিসেন্টার হিসেবে কথিত চীনের ওহান এবং বড় বড় শহরগুলো লকডাউন অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। সমগ্র চীনে নতুন করোনা সংক্রমণের হার প্রায় শূণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে বলে জানা যায়। অন্যদিকে ইতালিতে গতকাল একদিনে ৫ শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছে। হাসপাতাল ও মর্গে লাশ রাখার জায়গা হচ্ছে না। সেখানে করোনা রোগীদের মৃত্যুর করুণ কাহিনী প্রকাশিত হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ডাক্তাররা নিজেদের জীবন বাজি রেখে, বিশ্রাম ও সংসার জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। চীন, ইতালি, ইরান,দক্ষিণ কোরিয়াসহ ইতিমধ্যে প্রায় পৌনে দুইশ দেশে দুইলক্ষাধিক মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৮ এবং হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। বাংলাদেশসহ যে কোনো দেশে মহামারি ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে বাংলাদেশকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সাথে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা ও প্রস্তুতির ঘাটতিও ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়ে গেছে। বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত থার্মাল স্ক্যানার ও টেস্ট কিট না থাকা এবং করোনা ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ঘাটতি সাধারণ মানুষের মধ্যে আশঙ্কা ও ভীতি বাড়িয়ে তুলেছে। সরকারের মন্ত্রীরা শুধু লিপ সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন।

করোনাভাইরাসে ইতিমধ্যে দেশে ভীতিজনক পরিস্থিতি তৈরী হতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষ প্যানিক হয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনছেন। বিক্রেতারা যথেচ্ছ মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারের মন্ত্রীরা আশ্বস্ত করছেন বটে, কিন্তু মানুষ যেন আশ্বস্ত হতে পারছে না। দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার আগেই চীন বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছিল। ইতিমধ্যে কিছু টেস্ট কিট হস্তান্তরও করেছে। গত বুধবার চীনের তরফ থেকে বাংলাদেশকে আরো ব্যাপক সংখ্যক টেস্ট কিট এবং মহামারি প্রতিরোধি চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ এবং বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। এই মুহূর্তে দেশের সব বিমানবন্দর, স্থল বন্দর, হাসপাতাল এবং শহরের জনসমাগমের স্থানগুলোতে ব্যাপক সংখ্যক টেস্ট কিট এবং যথাযথ প্রতিরোধি পোশাক ও মাস্কসহ স্বাস্থ্যকর্মী ও ডাক্তার নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রবাস ফেরত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইনে রাখার যথাযথ উদ্যোগ না নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। করোনা নিয়ন্ত্রণে দেশীয় উদ্যোগ ও সক্ষমতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে কাজে লাগাতে হবে। গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী অত্যন্ত স্বল্প খরচে করোনা পরীক্ষার কিট তৈরীর ঘোষণা দিয়েছেন। ডাক্তার জাফরুল্লা চৌধুরীর উদ্ভাবিত কিট দ্বারা অতি স্বল্প সময়ে তাৎক্ষণিক করোনাভাইরাস শনাক্ত করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে দেশে কিট উৎপাদনে সরকারের অনুমোদনই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তা এবং প্রণোদনা দিতে হবে। সেই সাথে চীনের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস সময়ক্ষেপন না করে কাজে লাগাতে হবে। করোনাভাইরাস সম্পর্কে অহেতুক ভীতি এবং অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে হলে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, উদ্যোগ এবং পদক্ষেপগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্বের মাধ্যমে অতি দ্রæত দৃশ্যমান করতে হবে। লাখ লাখ মানুষের জীবন-মৃত্যু ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কালক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন