২০ মার্চ ১৯৭১ এই দিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ও আওয়ামী লীগের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে চতুর্থ দিনের মতো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকের নির্ধারিত স্থান ছিল রমনার প্রেসিডেন্ট ভবন। এই প্রথম প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় ৬ শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকে বঙ্গবন্ধু সঙ্গে রাখলেন।
২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট স্থায়ী এ বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু যখন প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বাইরে এলেন, তখন শত শত কণ্ঠের ‘জয় বাংলা’ সেøাগান তাকে আচ্ছন্ন করে। এ দিনের আলোচনা প্রসঙ্গে পরের দিন দৈনিক পাকিস্তান সংবাদ শিরোনাম করে, ‘মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক সঙ্কট নিরসনের পথে এগোচ্ছে।’ সংবাদে বলা হয় ‘রাষ্ট্রীয় নীতির বর্তমান সঙ্কট নিরসনের পথে মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনায় গতকাল (শনিবার) অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
সংগ্রামী বাংলার অপ্রতিদ্ব›িদ্ব নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গতকাল তার দলের শীর্ষস্থানীয় অপর ৬ সহকর্মীকে নিয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে ১৩০ মিনিট আলোচনা শেষে তিনি ও তার সহকর্মীরা প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন।
পরে তার বাসভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের পথে তারা এগোচ্ছেন।’ ২০ মার্চ ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল হামিদ খান, পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক টিক্কা খান, জেনারেল পীরজাদা, জেনারেল ওমর, জেনারেল মিঠঠাসহ সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি গোপন বৈঠকে বসেন।
এ বৈঠকে তিনি সামরিক প্রস্তুতির পর্যালোচনা করেন। এ বৈঠকে শেখ মুজিবের সঙ্গে বৈঠক ব্যর্থ হলে কী করণীয় হবে, তা আলোচিত হয় এবং ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুমোদন করা হয়। এ সময় প্রতিদিন সিংহল হয়ে একের পর এক ফ্লাইট বোয়িং-৭০৭ বিমানে করে সৈন্য ও রসদ ঢাকায় আনা হচ্ছিল এবং কয়েকটি জলজাহাজ পূর্ণ করে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হচ্ছিল।
অসহযোগ আন্দোলন শুরুর দিকে বাংলাদেশে স্থলবাহিনীর শক্তি ছিল এক ডিভিশন, ২০ মার্চ তা এসে দাঁড়ায় দুই ডিভিশনের অধিক। ২০ মার্চ বঙ্গবন্ধুর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ও সুপ্রিমকোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী একে ব্রোহি ঢাকায় আসেন। তিনি সন্ধ্যায় হোটেল কন্টিনেন্টালে কাউন্সিল মুসলিম লীগ সভাপতি মিয়া মোমতাজ মোহাম্মদ দৌলতানা, ন্যাপপ্রধান খান আবদুল ওয়ালী খান, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মুফতি মাহমুদ, পাঞ্জাব কাউন্সিল মুসলিম লীগপ্রধান সরদার শওকত হায়াত খান, বেলুচিস্তানের ন্যাপ নেতা গাউস বঙ বেজেঞ্জা প্রমুখ নেতার সঙ্গে আলোচনা করেন। ২০ মার্চ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বঙ্গবন্ধু ঘোষিত স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন