বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

গুজবে কান না দিয়ে সচেতন হতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস যেমন ছড়িয়েছে, তেমনি এর প্রতিরোধমূলক সচেতনতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও এ ভাইরাসের আতঙ্ক সকলের মধ্যেই কম-বেশি বিরাজ করছে। আমাদের দেশে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ১৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন সত্তুর বছর বয়সী একজন। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশি সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলাকে লকডাউন করা হয়েছে। প্রবাসী অধ্যুষিত আরও কিছু এলাকা লকডাউন করা হতে পারে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পর্যটন এলাকা বন্ধসহ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকসংখ্যক মানুষকে কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমা মাঠে কোয়ারেন্টিন ইউনিট করা এবং প্রাথমিক সেবা দেয়ার জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দেশের দূর পাল্লার গণযোগাযোগ ব্যবস্থা সীমিত করার চিন্তাভাবনাও চলছে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো কোনো মহল গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পদক্ষেপও নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অহেতুক আতঙ্ক না ছড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকলকে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।

দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস যতটা ভয়ের, তার চেয়ে বেশি ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এর সংক্রমণের শঙ্কা ও গুজব। সত্য বটে, এর প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। ফলে সবার মনে এ আতঙ্ক কাজ করছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে এর বুঝি কোনো চিকিৎসা নেই এবং এর পরিণতি অবধারিত মৃত্যু। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ভাইরাস মোকাবেলায় সচেতন হওয়াই সর্বোত্তম পন্থা। এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হারও কম। বরং ডেঙ্গু, ইবোলা, সার্স ভাইরাসে যত মানুষ মারা গেছে করোনায় আক্রান্ত মৃত্যুর হার তার চেয়ে কম। ফলে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজন শুধু প্রত্যেককে সচেতন হওয়া, স্বাস্থ্য নির্দেশাবলী মেনে চলা এবং সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিশেষ করে যেসব মানুষ আক্রান্ত হয়েছে বা যেসব এলাকায় এর সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেশি সেসব এলাকায় এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। এ কাজটি সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন স্ব স্ব অবস্থানে থেকে প্রত্যেকের সতর্ক হওয়া। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো কোনো মহল রংচং মাখিয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রচারের মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এতে অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে। একটি বিষয় ইতোমধ্যে পরিস্কার হয়েছে, করোনাভাইরাস মোকাবেলার একমাত্র পথ সতর্কতা ও সচেতনতামূলক পথ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করা। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো এ পদক্ষেপই গ্রহণ করেছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, যে চীন থেকে এ ভাইরাসের উৎপত্তি সেই চীন এখন এ থেকে প্রায় মুক্ত। এটা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারণেই সম্ভব হয়েছে। চীনের এ সাফল্যের দিকটি বিবেচনায় নিলেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু থাকে না। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি, আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে মতলববাজ একটি মহল বিভিন্ন ভীতিকর তথ্য তুলে ধরে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্ট করছে। এর প্রভাব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। জিনিসপত্রের দাম অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে গেছে। অথচ দেশে পর্যাপ্ত পণ্যের মজুদ রয়েছে। আগামী এক বছর চলার মতো খাদ্যপণ্য রয়েছে। সরকারের তরফ থেকেও এ কথা বলা হয়েছে। তারপরও করোনাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীদের একটি মহল পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করে চলেছে। পণ্যমূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কায় সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে বেশি করে পণ্য কিনে রাখছে। অথচ এর প্রয়োজন নেই। কারণ, করোনাভাইরাসের কারণে গণযোগাযোগ কমলেও পণ্যপরিবহন কমেনি। বিশ্বব্যাপী পণ্যপরিবহন স্বাভাবিকভাবেই চলছে। ফলে পন্যসংকট হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের দেশেও পণ্যের ওপর এর প্রভাব পড়ার যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। এক্ষেত্রে ক্রেতাসাধারণকে সচেতন হতে হবে। আতঙ্কিত হয়ে অধিক পরিমাণ পণ্য কেনার প্রতিযোগিতা থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে। আর সরকারের তরফ থেকে অবিলম্বে কড়া হুশিয়ারি দেয়া এবং পণ্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি এ থেকে মুক্ত হওয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। দুঃখের বিষয়, আমাদের অধিকাংশ মিডিয়া আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃতের সংখ্যা যতটা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করছে, সুস্থ হওয়ার সংখ্যার তথ্য ততটা জোর দিয়ে তুলে ধরছে না। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার পাশাপাশি যদি সুস্থ্য হওয়ার তথ্যটি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়, তবে মানুষের মধ্যে দেখা দেয়া আতঙ্ক অনেকটা কমে যাবে। এতে গুজব যেমন কমবে, তেমনি মানুষের মধ্যে সচেতনতাবোধও কাজ করবে। যেহেতু এ রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি, তাই ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর’, এ নীতি অবলম্বন করা এবং তা জোরালোভাবে তুলে ধরার ছাড়া বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাই করোনাভাইরাসের মূল প্রতিষেধক। কাজেই প্রত্যেকের এখন এ পথ অবলম্বন করা ছাড়া উচিত। অযথা গুজবে কান দিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন