শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

স্থগিতই হলো চসিক ভোটকাণ্ড

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০২০, ৩:২২ পিএম

অযথা টালবাহানা আর নাটকের পর অবশেষে জনদাবি পূরণ হলো। স্থগিতই ঘোষণা করা হলো চসিক ভোটকাণ্ড। স্বস্তি এলো চট্টগ্রামবাসীর মাঝে। তারা বলছেন, দেরিতে হলেও বন্ধ হলো জাতির দুঃসময়ে এহেন ভোট ভোট কাণ্ড-কারখানা! এ নিয়ে ছিল প্রবল জনমত।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে ২৯ মার্চের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানী ঢাকায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে চসিক নির্বাচন স্থগিত হবে কি-না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন জানায়, ২১ মার্চের পরে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থাকা পর্যন্ত আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না দেশে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
আগের তফসিল ছিল, আগামী ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটির ভোটগ্রহণের দিন।
সর্বশেষ বিগত ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। চসিকের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট।
আতঙ্কের প্রশিক্ষণ চললো যেভাবে-
করোনাভাইরাস মহামারী সংক্রমণের ঝুঁকি। সবারই মাঝে শঙ্কা আর আতঙ্ক। আর তা মাথায় নিয়েই গতদিনের মতো চসিক ভোটগ্রহণের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জড়ো করে ভোটের প্রশিক্ষণ চলছে আজ শনিবারও ! এমনকি সেখানে স্যানিটাইজারসহ কোনো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সরঞ্জামের ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
আর অন্যদিকে, দুপুরের পরই দেশবাসী জানলেন আবারও দুঃসংবাদ, করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে আরও একজন মৃত্যুবরণ করলেন।
এদিকে করোনায় ঝুঁকি-আতঙ্ক মাথায় প্রশিক্ষণ চললেও চট্টগ্রামবাসী এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাসহ সকলের মাঝে ঘুরেফিরে ওই একই জিজ্ঞাসাটি ছিল। করোনাভাইরাস দুর্যোগের ভেতরে ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ভোট ভোট কাণ্ড-কারখানা থামবে তো? করোনায় দেশের দুর্যোগ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তরফ থেকে এ ভোটকাণ্ড বন্ধ, বাতিল কিংবা স্থগিতের ঘোষণাটি কখন দেওয়া হবে? কী চিন্তাভাবনা হুদা কমিশনের? অবশেষে দুপুরের পর এলো সেই বহুল প্রত্যাশিত চসিক ভোট স্থগিত হওয়ার ঘোষণা।
এর আগে পর্যন্ত সবখানে পথেঘাটে চাটগাঁর লোকজন বিরক্তি, ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেন। অনেকেই বলেন 'বন্ধ হোক ভোটের নামে নাটক রসিকতা'। চট্টগ্রাম মহানগর ঘুরে আজও এ নির্বাচন নিয়ে কারও কোনরকম আগ্রহ দেখা যায়নি।
এদিকে চসিক ভোটগ্রহণের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রিসাইডিং, পোলিং কর্মকর্তাদের আগের সিডিউল অনুযায়ী নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে জড়ো করে ভোটের প্রশিক্ষণ চলে আজও। এ সময় সবারই চেহারায় অজানা আতঙ্ক ও ভীতির চাপ দেখা গেল।
নগরীর কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে এরকম পরিবেশে সাংবাদিকগণ আরও দেখেন, বেশ কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী নিজ নিজ দায়িত্বে মাস্ক ব্যবহার করছেন। খুব কম সংখ্যক প্রশিক্ষণার্থী হাতে গ্লাভস ব্যবহার করছেন। তাছাড়া হাতকলমে এ প্রশিক্ষণের জন্য ইভিএম স্পর্শ করে ব্যবহারের আগে যে হাতে গ্লাভস ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের কথা বলা হয়েছিল তা কিছু ছিল। বেশিরভাগ ছিলই না।
এ সময় প্রশিক্ষণার্থীরাই বললেন, আমরা নির্বাচন পরিচালনার করার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে এসেছি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন থেকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো ব্যবস্থা কই? স্যানিটাইজার এবং গ্লাভস দেওয়ার কথা। সেগুলো পেলাম না তো।
গ্লাভস ও স্যানিটাইজার নেই। অথচ সবাই একই মেশিনে আঙ্গুলের ছাপ দিচ্ছে। করোনা ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ইভিএমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকি নিশ্চয়ই আছে।
এ অবস্থায় চরম আতঙ্ক ও আশঙ্কা ঝুঁকির মাঝেই চলছে চসিক ভোটের প্রশিক্ষণ। এতে হাজারো অংশগ্রহণকারী ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকতা দৃশ্যত অসহায়।
চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ৭৩৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৪ হাজার ৮৮৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ৯ হাজার ৭৭২ জন পোলিং অফিসার দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয় গতকাল শুক্রবার। এখন আর প্রশিক্ষণ হবেনা। মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরাও যার যার ঘরে ফিরলেন।
চসিক নির্বাচন ইসি স্থগিত ঘোষণার ফলে সবাই হাফ ছেড়ে যেন বাঁচলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন