শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

স্বাদ ও চাহিদা মেটাতে কুমিল্লার বাঙ্গি

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশজুড়ে করোনা আতঙ্ক। কিন্তু কুমিল্লার কৃষিনির্ভর এলাকাগুলোতে চাষাবাদ, ফসলের পরিচর্যা, ক্ষেত থেকে ফসল তোলা নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক। করোনার ভয়ে ঘরে বসে নেই তারা। মৌসুমের এ সময়টিতে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় টমেটো, বাঙ্গি, ক্ষিরা, বাদাম, সরিষাসহ নানারকম ফসল ক্ষেত থেকে তোলা হচ্ছে। এরমধ্যে টমেটো ও বাঙ্গির ব্যাপক ফলনের কারণে কৃষক ক্ষেতেই পার করছে বেশিরভাগ সময়। তবে মৌসুমের নতুন ফল হিসেবে বাঙ্গি বাজারমাত করছে।
কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় দিগন্তজুড়ে ফসলের মাঠে হলুদ আর হালকা সবুজের ওপর সোনালী রোদের ঝলকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে বাঙ্গির বিপুল সমারোহ। কুমিল্লার বাঙ্গি বলে কথা। ঘরের গন্ডি ছাড়িয়ে বিভিন্ন জেলাতেও ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাজারমাতের জায়গাটি দখল করে নিয়েছে কুমিল্লার দাউদকান্দি, চান্দিনা, মেঘনা-তিতাসসহ অন্যান্য উপজেলায় উৎপাদিত বাঙ্গি।
কুমিল্লায় বুড়িচং, দেবিদ্বার, চান্দিনার মাধাইয়া, দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ, কুটম্বপুর, গৌরিপুর, মেঘনা ও তিতাস উপজেলায় কমবেশি বাঙ্গি চাষ হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি বাঙ্গির ফলন হয়ে থাকে মেঘনার বিনোদপুর গ্রাম ও দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জে। এবারে কুয়াশা বেশি থাকায় ও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বাঙ্গির আকার বেশি বড় হয়নি তবে ফলন হয়েছে প্রচুর।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বাঙ্গি চাষে কোন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না থাকলেও কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ফালগুনেই বাঙ্গি বাজারে উঠেছে। এখন চৈত্রের প্রথম সপ্তাহেই সর্বত্রই মিলছে পাকা বাঙ্গি। কুমিল্লার বাঙ্গির চাহিদা থাকায় প্রতিবছর কৃষক এ মৌসুমী ফল উৎপাদনে অত্যন্ত পরিশ্রম করে থাকেন। উপজেলা পর্যায়ের কৃষি অফিস ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বাঙ্গি চাষে কৃষকদের সবধরণের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে থাকেন। জেলার বাঙ্গিচাষি জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে আবহাওয়া বেশ অনুকুলে থাকায় ফালগুনের শুরুতেই বাঙ্গি হলুদ রঙ ধারণ করে। আর ঘ্রাণও বেশ মোহনীয়। কুমিল্লার বাঙ্গির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এবারে যারাই বাঙ্গিচাষ করেছেন তারা উৎপাদন খরচের দ্বিগুণ লাভ করবেন নি:সন্দেহে। বাঙ্গি চাষের বিষয়ে এখানকার কৃষক পুরানো ধারণা থেকেই চাষাবাদের কাজ করেন।
সম্প্রতি মেঘনার বিনোদপুর, চান্দিনার মাধাইয়া, দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জের টামটা ও আশপাশের এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কৃষক ক্ষেত থেকে বাঙ্গি তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মেঘনার বিনোদপুরের বাঙ্গি নৌকা ও ট্রলারে তুলে ঢাকায় নেয়া হয়। আবার বাঙ্গি ভর্তি শতশত রিকশাভ্যান ইলিয়টগঞ্জ বাজারে যায়। এসব বাঙ্গি মহাসড়কের পাশে মজুদ করা হয়। তারপর মিনি ট্রাকযোগে কুমিল্লা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাবে সুস্বাদু বাঙ্গি।
প্রতিবছর বাঙ্গির অধিক ফলনের কারণে মেঘনার বিনোদপুর ও ইলিয়টগঞ্জের টামটা নামের গ্রাম দুটি মানুষের কাছে বাঙ্গির গ্রাম নামেই পরিচিতি পেয়েছে। অন্যান্য রবি ফসল থেকে লাভের জায়গাটা সন্তোষজনক হওয়ায় এবং মেঘনা, চান্দিনা ও দাউদকান্দি উপজেলার মাটি বাঙ্গি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় সেখানকার কৃষক প্রতিবছরই স্বত:স্ফূর্তভাবে বাঙ্গি চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠে। দাউদকান্দি, মেঘনা ও চান্দিনা অঞ্চলের উৎপাদিত বাঙ্গির স্বাদ অতুলীয়। রঙ্গের দিক থেকেও সেরা। পুরো বাঙ্গি হলুদে ভরপুর থাকলেও সরু সবুজ রঙ্গ বাঙ্গির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব এলাকার বাঙ্গি দেশের বিভিন্ন জেলায় বিশাল জনগোষ্ঠির চাহিদা ও স্বাদ মিটিয়ে থাকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন