বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ডিসি সুলতানাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা মামলা নেয়ার নির্দেশ

হাইকোর্টে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০২০, ১২:৫৬ এএম

কুড়িগ্রামের প্রত্যাহারকৃত জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন এবং অপর তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা মামলা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ঘটনার পর কারামুক্ত আরিফুলের পক্ষে সুলতানা পারভীন, সহকারী কমিশনার (এসি) রিন্টু বিকাশ চাকমা, সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব (আরডিসি) নাজিম উদ্দীন ও সহকারী কমিশনার (এসি) এসএম রাহাতুল ইসলামসহ অজ্ঞাত আরও ৩৫-৪০ জনকে আসামি করে থানায় মামলার আবেদন নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল সেটিকেই ‘হত্যাচেষ্টা মামলা’ হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন আদালত।

গতকাল সোমবার বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল এবং বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশের পাশাপাশি কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে দেয়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের দন্ডাদেশ ৬ মাস স্থগিত এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়ার প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না- এই মর্মে রুলনিশি জারি করা হয়েছে।

গতকাল ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া দন্ডাদেশ চ্যালেঞ্জ করে দায়েরকৃত রিটের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। শুনানিকালে আরিফুল ইসলামের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রতিটি কার্যক্রম অসঙ্গতিতে ভরপুর। আদেশের প্রতিটি পর্যায়ে রয়েছে ত্রুটি আর গোঁজামিল। এসব দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, যখন কেউ কোনো কাজ করে তখন তার পদচিহ্ন রেখে যায়। গতকাল সোমবার বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল এবং বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের ডিভিশন বেঞ্চে রিটের শুনানিকালে আদালত এ কথা বলেন। কুড়িগ্রামের সাংবাদিক মো. আরিফুল ইসলাম রিগানকে দেয়া মোবাইকোর্টের দন্ডাদেশ চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের শুনানি হয় গতকাল। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এএম আমিনউদ্দিন এবং অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

শুনানির প্রথমেই ইশরাত হাসান সাংবাদিক আরিফকে দন্ডাদেশ সংক্রান্ত নথিপত্রের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেন এবং এভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ নথি দিয়ে হাইকোর্টে উপস্থাপন কতটুকুন আইনসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, সাংবাদিক আরিফকে সাজা দেয়া হয়েছে ১৩ মার্চ, অথচ সাজার কপিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে ১৪ মার্চ। আবার সাজা দেয়ার আগেই তাকে জেলে পাঠানো হলো। এটা কীভাবে সম্ভব? ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিতে আসামির নাম এবং পিতার নাম একই লেখা হয় কীভাবে?

এ সময় আদালত বলেন, আমি নিজেও এসব নথি পড়েছি। প্রতিটা শব্দ পড়েছি। অনেক কিছু এখানে অসঙ্গতি পেয়েছি। যখন কেউ কোনও কাজ করে তখন তার পদচিহ্ন (ফুট প্রিন্ট) রেখে যায়।’ অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, স্বীকারোক্তিতে আসামি আর তার বাবার নাম একই। সেখানে আসামির নাম নেই। তাহলে কেন তাকে সাজা দেয়া হবে? তাহলে আরিফ তো সেই ব্যক্তি নন। এমনকি স্বীকারোক্তিতে আরিফের কী অপরাধ তারও কোনও বর্ণনা নেই। এরপরও এ মামলায় আর কী থাকতে পারে? এ মামলায় এখন যদি নতুন করে আর কোনও নথি আসে তাহলে তার দ্বারা আদালত মিস লিড হতে পারে।

আরিফুলকে সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে দোষ স্বীকারোক্তিপত্রে আসামির নাম দেখানো হয় ‘মো. রফিকুল ইসলাম’। আবার আসামির বাবার নাম উল্লেখ করা হয়েছে ‘মৃত মো. রফিকুল ইসলাম’। অথচ ভ্রাম্যমাণ আদালত আরিফুল ইসলামকে সাজা দেয়ার যে দাবি করেছে, সেখানে আরিফুল ইসলামের মৃত বাবাকে সাজা দেয়ার বিষয়ে হাইকোর্টে প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী।

অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এই বিষয়ে তার বক্তব্যে বলেছেন, বাড়ি থেকে ধরে তুলে নিয়ে সাজা দেয়া আইনসম্মত নয়। এছাড়া দুইজন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্যে একই বক্তব্য দিয়েছেন। আবার মদ ও গাঁজা একসঙ্গে খাওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিকানাও টেম্পারিং করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত মদ খাওয়ার অপরাধে সাজা দিয়েছেন। কিন্তু গাঁজার অপরাধে সাজা দেননি। তাহলে গাঁজা কোথায় গেলো? এ মামলায় প্রতিটি বিষয় সাজানো হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে আরিফের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়নি।

এসময় আদালত বলেন, যেহেতু তিনি (সাংবাদিক আরিফ) হাইকোর্টে এসেছেন সেহেতু তিনি পিটিশনার হলে ভালো হবে। আপনারা তাকে পিটিশনার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করুন। আমরা আদেশ দিতে চাই, নইলে অনেক কিছু মিস হয়ে যাবে। ইশরাত হাসান বলেন, ওনার (সাংবাদিক আরিফ) হাত ভাঙা। তখন আদালত বলেন, ‘প্রয়োজনে উনি টিপসই দিয়ে মামলার পিটিশনে স্বাক্ষর করুক। আমরা বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে দিচ্ছি। এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমরা মামলাটি শুনতে চাই।

উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে। তার বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়। এরপর গভীর রাতে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের দন্ড দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফুল এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। এছাড়া, স¤প্রতি জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক আরিফ। এ বিষয়ে জানতে পেরে জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে তাকে বেশ কয়েকবার ডেকে নিয়ে সতর্ক করা হয়। এই ঘটনায় কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
liakat ২৪ মার্চ, ২০২০, ১০:৪৫ এএম says : 0
5000 amla and politicions after 12 night.....?
Total Reply(0)
Md Fozlur Karim ২৪ মার্চ, ২০২০, ৩:৪৩ পিএম says : 0
অপরাধের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিৎ।
Total Reply(0)
Selim ২৫ মার্চ, ২০২০, ৩:৪৭ এএম says : 0
Long time er jonney jail a patanu dorkar.
Total Reply(0)
Selim ২৫ মার্চ, ২০২০, ৩:৪৮ এএম says : 0
Long time er jonney jail a patanu dorkar.
Total Reply(0)
Selim ২৫ মার্চ, ২০২০, ৩:৪৮ এএম says : 0
Long time er jonney jail a patanu dorkar.
Total Reply(0)
OMAR IBNE YOUSUF ২৬ মার্চ, ২০২০, ১০:৪১ এএম says : 0
এটা স্পষ্ট যে, তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভিন ও তার জুনিয়র সহযোগিরা তাদের ব্যক্তিগত ক্ষোভের স্বীকার সাংবাদিক আরিফ এবং কাজে মোবাইল কোর্টের দায়ীত্বকে তারা অপব্যবহার করে নিজেদের মোনের লালসা পূর্ণ করে। মোবাইল কোর্টের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে যখন জনাব সারোয়ারের মত চৌকস অফিসারগণ সমাজের অসংগতি দূর করে জনমনে স্বস্তি নিয়ে আসে ঠিক তখনই এই মোবাইল কোর্টের অপব্যবহার করে সুলতানা, বিকাশ ও নাজিমদের মত অসৎ অফিসাররা জনমোনে আতংক সৃষ্টি করে বেড়ান! এখন এদের মত প্রমানিত সকল সিংস্র অফিসারদের চাকরিচ্যুতসহ দৃষ্টান্তমূলক ফৌজদারী শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এই অপরাধের লাগাম টানা যাবে এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক ভিডিও করা বাধ্যতামূলক করা হোক যাতে প্রয়োজনে আদালত তা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। মোবাইল কোর্টকে কোন ক্ষমতা না ভেবে এটা সমাজের ছোটখাট অনাচার দমনের একটা সাধারন মাধ্যম যার দ্বারা কেউ যেন তার ব্যক্তিগত ইগো কিংবা অবৈধ ব্যবহার না করতে পারে সেরকম করে আইন সংশোধন করা হোক। স্বাধীন বিচার বিভাগ নিশ্চিত করতে এই দায়িত্ব বিচার বিভাগের উপর ন্যাস্ত করা হোক।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন