বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

চট্টগ্রামে সড়কে বেহালদশায় জনদুর্ভোগ

প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : সড়কজুড়ে বড় বড় গর্ত। তাতে জমে আছে বৃষ্টির পানি। ভারী যানবাহনের চাকা পড়তেই চার দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে কাদা পানি। যানবাহনের চাকার ধাক্কায় এসব গর্ত আরো বড় হচ্ছে। এই দৃশ্য দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম নগরীর প্রধান সড়কের স্টিল মিল এলাকায়। এই সড়কের কোনো কোনো অংশ রীতিমতো বর্ষায় চাষযোগ্য জমির রূপ নিয়েছে। একই অবস্থা কাঠগড় থেকে পতেঙ্গা হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত। নগরীর দেওয়ানহাট ফ্লাইওভারের দুই প্রান্তের চিত্রও অনুরূপ। ইস্পাহানী মোড় থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত নগরীর সবচেয়ে বড় ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ চলছে। সড়কের মাঝ বরাবর অংশ দখলে নিয়ে দুই পাশের সরু অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য রাখা হয়েছে। ওই সড়কের অবস্থাও এখন বেহাল।
নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি সড়ক, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, পোর্ট কানেকটিং রোড, জাকির হোসেন রোড, বহদ্দারহাট থেকে এক কিলোমিটার হয়ে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত সড়কের অবস্থাও নাজুক। অনেক অংশে কঙ্কর উঠে গেছে। গর্তের কারণে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে নিমতলা বিশ্বরোডের মাথা পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। বর্ষায় সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে চার দিকে কাদার প্লাবন। সড়কে এক পাশে কাজ চলছে, অন্য পাশে চলছে যানবাহন। সেখানেও স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে।
কয়েকটি সড়কে ওয়াসার পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলছে। বর্ষায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এসব এলাকার অবস্থা এখন বেহাল। কয়েকটি সড়কে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগেও উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ কাজ চলছে। আগ্রাবাদ এক্সেস রোডসহ মহানগরীর বিশাল এলাকার সড়কে স্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। জোয়ার-ভাটায় ডুবে যাওয়া এসব সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করায় রাস্তার আস্তর উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। জোয়ারের পানি নেমে যাওয়ার পর সড়কে দেখা যাচ্ছে কাদা-পানির প্লাবন। মহানগরীর বড় বড় সড়কের পাশাপাশি অলিগলির সড়কের অবস্থাও এখন বড়ই নাজুক। বেহাল সড়কে যানবাহন আটকা পড়ছে। গর্তে পড়ে  ভেঙে যাচ্ছে যানবাহনের মূল্যবান যন্ত্রাংশ। যানবাহন চলছে হেলেদুলে, এতে করে প্রায় ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। গর্তে পড়ে আটকে যাচ্ছে হালকা ও ভারী যানবাহন। সড়কে বিকল হয়ে যাচ্ছে মালবোঝাই ট্রাক-লরি। এতে করে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। সড়ক দ্রুত ও যথাযথ সংস্কার না হওয়ায় দিন দিন সড়কের অবস্থা আরো বেহাল হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, থেমে থেমে বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের কারণে সড়কের বেহাল অবস্থা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ও টানা বৃষ্টিতে মহানগরীর পতেঙ্গা, হালিশহর, চাক্তাই খাতুনগঞ্জসহ নগরীর অনেক সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেই বেহাল সড়ক সংস্কারের আগেই শুরু হয় বর্ষা। বৃষ্টির কারণে বেশির ভাগ সড়ক কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারে নি¤œমানের সামগ্রীর ব্যবহার, প্রকৌশলগত ত্রুটি, বেশিরভাগ সড়কে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকা এবং কিছু কিছু সড়ক নিয়মিত জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় ক্ষতি বেশি হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগে এবারের বর্ষায় কি পরিমাণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার হিসাব এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কত কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই হিসাব করা হচ্ছে। তবে এর পাশাপাশি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে সংস্কার কাজও চলছে। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে জরুরি ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি সড়কে সংস্কার করা হচ্ছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সংস্কারের পরও এসব সড়কে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। কারণ বৃষ্টির কারণে সংস্কারের কিছু সময়ের মধ্যে ইটের খোয়া, কঙ্কর, বিটুমিন উঠে যাচ্ছে।
কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ডকে ৫টি ডিভিশনে ভাগ করে সড়ক মেরামতের কাজ অব্যাহত রয়েছে। একেকটি বিভাগে প্রতিদিন ৪০-৫০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। মূলত সড়কের যেসব জায়গায় পানি জমে থাকে  সেখানেই ভারী যানবাহনের চাপে সড়কে খানাখন্দ হয়েছে। তিনি দাবি করেন, নগরীর প্রধান সড়কগুলোর ৭০ ভাগ খানাখন্দ  মেরামত করা হয়ে গেছে। বাকি কাজ দু-তিন দিনের মধ্যে শেষ হবে। এরপর অলিগলির ভাঙা সড়ক মেরামত করা হবে।
নগরীর বিমানবন্দর সড়কের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিমানবন্দর ও সিমেন্ট ক্রসিং হয়ে কাঠগড় থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করছে বেশি। কারণ পতেঙ্গা এলাকায় অসংখ্য বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনাল রয়েছে। বৃষ্টিভেজা বেহাল সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করায় সড়কের অবস্থা আরো নাজুক হচ্ছে। কোনো কোনো অংশ সড়ক রীতিমতো দেবে গেছে। যানবাহন চালকেরা বলছেন, রাস্তায় বড় বড় গর্তের কারণে ভারী যানবাহন আটকা পড়ছে। ভেঙে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ। বন্দর এলাকার সড়কগুলোতে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে বেশি। এসব সড়কে যানবাহন চলছে হেলেদুলে।
গর্তে আটকা পড়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারী যানবাহনগুলো গন্তব্যে পৌঁছতে বেশি সময় লাগছে। ঈদের লম্বা ছুটির পরও নগরীতে স্বাভাবিকের চেয়ে কম যানবাহন চলাচল করছে। এ অবস্থায়ও কিছু কিছু সড়কে যানজট হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যে মহানগরীতে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। বিশেষ করে বন্দর এলাকায় আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ বাড়বে। এর মধ্যে এসব সড়ক সংস্কার করা না হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর বর্ষা আসতেই সড়কের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ে। এর কারণ হচ্ছে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারে দুর্নীতি। নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে সড়কের ইট-কঙ্কর উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হচ্ছে। এর ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করায় এসব গর্ত রীতিমতো ডোবার আকার ধারণ করছে। তাছাড়া কোন সড়কে কত টন ওজনের যানবাহন চলছে তা তদারকির ব্যবস্থা নেই। আবাসিক এলাকার মধ্যে গড়ে উঠেছে শিল্প কারখানা। বিমানবন্দর ও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় ব্যাপকহারে বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনাল গড়ে উঠেছে।
এসব টার্মিনালের ভারী যানবাহনের চাপে সড়ক খুব কম সময়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। বেশিরভাগ কন্টেইনার টার্মিনালের নিজস্ব পার্কিং নেই। সড়ক দখল করে ভারী যানবাহন পার্কিং করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন