বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০২০, ১২:১০ এএম

করোনাভাইরাস মহামারীতে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। ইউরোপ-আমেরিকার জমকালো শহরগুলোর স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তা, শপিংমল, পাব-বার এবং জনবহুল পাবলিক সেন্টারগুলো এখন জনশূন্য হয়ে পড়েছে। কোটি কোটি মানুষ হোমকোয়ারেন্টাইনে গৃহবন্দি জীবন কাটাচ্ছে। জনসাধারণের সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং সরকারের সর্বাত্মক নানামুখী পদক্ষেপ সত্তে¡ও ইতালি, স্পেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। এহেন বাস্তবতায় আমাদের মতো হতদরিদ্র দেশের মানুষকে দুশ্চিন্তা ও আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। চীনের উহানে কোভিড-১৯ ভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই এই ভাইরাস সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠে। বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং আন্তজার্তিক রোগতত্ত¡ বিশেষজ্ঞরাও প্রকাশ করেছে। দুই মাসের বেশি সময় পর বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ তৃতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে। অর্থাৎ বিদেশ ফেরত ছাড়াও কমিউনিটি থেকে এই ভাইরাসের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি হিসেবে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ জন হলেও উপযুক্ত পরীক্ষা, নজরদারি ও সরকারি কোয়ারেন্টাইনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি রয়েছে। একেবারে শুরু থেকে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়ার পরও ইতালিতে করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে একদিকে আমাদের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যব্যবস্থাপনায় প্রস্তুতিহীনতা, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পিপিই, টেস্টিং কিটসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকা অন্যদিকে সামাজিক অনুষ্ঠানাদি, গণপরিবহন ও কর্মস্থলে অবাধ জনসমাগম প্রতিরোধে কোনো পদক্ষেপ না থাকায় কমিউনিটির ভেতর থেকে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছে, যা ভয়াবহ মহামারীর আশঙ্কাকেই প্রবল করে তুলেছে।

সচেতন মানুষ স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও করোনা ঠেকাতে আমাদের সরকারি ব্যবস্থাপনা ও পদক্ষেপ এখনো খুবই অপ্রতুল। অনেক দেরিতে হলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিরোধে শৃঙ্খলা বিধান ও নিয়ন্ত্রণে মাঠ প্রশাসনকে সহায়তা করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও পরামর্শ ছাড়াই ইতোমধ্যে ১০ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এই সুযোগে ঢাকা থেকে লাখ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী থাকায় করোনাভাইরাসের মতো সংক্রামক ব্যাধি নিরোধের ক্ষেত্রে এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। ইতিপূর্বে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের উদ্যোগ হিসেবে স্কুল-কলেজ বন্ধের পর হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও অভিভাবক কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় জমিয়েছে। কী বিচিত্র আমাদের চেতনা! সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা দেখেও আমাদের শিক্ষা হয় না। যে যেখানে আছেন সেখানে অবস্থান করাই হচ্ছে অতি সংক্রামক মহামারী ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য উপায়। রাসূল (স.)-এর যুগে এমন ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার পর নবীজি শহরের অধিবাসীদের বাইরে যেতে এবং বাইরের মানুষকে শহরে প্রবেশে নিষেধ করেছিলেন। আজকের বিশ্বেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে লকডাউন, শাট-ডাউন, কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অতিসংক্রমণ প্রবণ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সেই ধারা অনুসরণ করা হচ্ছে।

মাঠে সেনাবাহিনী নামানো হচ্ছে। সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি মানুষের ভীতি, আতঙ্ক কমিয়ে জনজীবনে নিরাপত্তাবোধ নিশ্চিত করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। করোনাভাইরাসের অজুহাতে ইতোমধ্যে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে মুনাফাবাজ ব্যবসায়ীরা। শাট-ডাউন বা লক-ডাউনের সময় মানুষের জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রিক যোগান নিশ্চিত রাখতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে সে সম্পর্কে সরকারের কোনো নির্দেশনা বা গাইডলাইন না থাকায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে অধিক পরিমাণ পণ্য কিনে বাজারে মূল্যস্ফীতির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত আরো আগেই গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল। শহর লক-ডাউন হয়ে গেলে চাকরিজীবী, পেশাজীবী ও শ্রমজীবী মানুষ যাতে অর্থনৈতিক সঙ্কটে না পড়ে তার যথাযথ পদক্ষেপ ও সরকারি নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। বিশেষত শহরের দরিদ্র, ছিন্নমূল মানুষ এবং গার্মেন্টস কর্মীদের মতো শ্রমজীবীরা যদি অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে তা বড় ধরনের সামাজিক সংকটের সৃষ্টি করবে। গার্মেন্টের প্রায় সব ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে যাচ্ছে। স্কুল-কলেজের মতই সব গামের্›টস কারখানা এখনই বন্ধ করে দিতে হবে। সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সংকটে গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের পাশাপাশি দরিদ্র ও নি¤œআয়ের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিতে হবে। ইতোমধ্যে ত্রাণ ও দুর্যোগব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ক্রান্তিকালীন যে সব প্রণোদনা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে। জাতির এই ক্রান্তিকালে আজ প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসহ আরো বিস্তারিত উদ্যোগের কথা দেশবাসী জানতে চায়। বিশেষত করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরীক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সব হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষাব্যবস্থা, কিট ও সরঞ্জামের যোগান ও সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। জাতির এই কঠিন সময়ে জাতীয় ঐক্য ও সামাজিক বন্ধন গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ দেখতে চায় জাতি।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন