করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে যারা লড়ছেন, আরও জোর কদমে লড়তে হবে, সেই যোদ্ধা হলেন ডাক্তার-নার্সগণ। কিন্তু কি নিয়ে প্রথমে লড়তে যাবেন? ডাক্তার-নার্সদের করোনায় সংক্রমণ রোধে প্রথমেই জরুরি প্রয়োজন পারসোনাল প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই)।
অথচ তা আছে খুবই অল্প। ঢাকায়, চট্টগ্রামে, সারাদেশে একই অবস্থা- নেই আর নেই। অথচ ডাক্তারকে করোনা চিকিৎসায় প্রস্তুত হতেই আগে প্রয়োজন নিজের সুরক্ষায় পিপিই।
এই সঙ্কট সামাল দিতে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে আশার আলো ফুটে উঠলো। ডাক্তারদের সুরক্ষায় চট্টগ্রামই দিচ্ছে এক লাখ পিপিই। তৈরিও হচ্ছে। এর আংশিক চালানও গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় পৌঁছে গেছে। অবশিষ্ট ৫০ হাজার পিপিইর চালান আগামীকাল বা পরশুদিন পৌছানোর টার্গেট ধরে কাজ চলছে।
স্বাস্থ্য প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে পারসোনাল প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) তৈরিতে এগিয়ে এসেছে চট্টগ্রামের একটি রফতানিমুখী পোশাক কারখানা। বিদেশের একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের বুকিং অর্ডার বাতিল করেই এ কারখানাটি বাংলাদেশের ডাক্তারদের সুরক্ষার জন্য তৈরি করছে এক লাখ পিস পিপিই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় ঔষধালয় এরজন্য স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডকে এক লাখ পিপিই তৈরির কার্যাদেশ দিয়েছে। চট্টগ্রাম ইপিজেডের বিশেষায়িত এই পোশাক কারখানা ৫০ হাজার পিপিই তৈরি করে গতকাল রাতে ঢাকায় পাঠিয়েছে। অবশিষ্ট ৫০ হাজার পিপিই তৈরির কাজ শেষ হবে দুয়েকদিনের মধ্যেই। এখন আর রফতানি নয়। বরং করোনা রোগিদের চিকিৎসাসেবায় জড়িত ডাক্তার, নার্স এবং সেবাদানকারীদের জন্য এই পিপিই ব্যবহার হবে।
এ বিষয়ে স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে আগে থেকেই পিপিই তৈরি হয়। সেগুলো আমেরিকায় রফতানি করেছি। এই প্রথম দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ হাতে এলো। তাই ভালোই লাগছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আমাদের প্রতিষ্ঠানের এ ব্যাপারে পূর্ব অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতার বিষয়টি জানতে পেরে যোগাযোগ করে। আমরা প্রথমে কিছু পাঠাই। তারা তা পছন্দ করেন। এরপরই প্রথমে ৫০ হাজার ও পরে আরও ৫০ হাজারের কার্যাদেশ দেয়।
প্রথম চালানে ৫০ হাজার পিপিই গতকাল আমরা ৯টি ট্রাকে ঢাকায় পাঠাই। দুয়েকদিনের মধ্যে বাকি চালান যাবে। তৈরি হচ্ছে। দেশের এই দুর্দিনে সরকারের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমাদের ভালোই লাগছে। প্রয়োজনে আরও কিছু করতে প্রস্তুত।
কারখানার কর্মকর্তারা জানালেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় ঔষধালয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত কার্যাদেশ গত ২৩ মার্চ পৌঁছে এই প্রতিষ্ঠানে। একদিনের মধ্যে ৫০ হাজার পিপিই তৈরি করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এরজন্য আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠানের বুকিং বাতিল করা হয়। পরে হয়তো রফতানি করা যাবে। কিন্ত দেশের ডাক্তার নার্সদের জন্য পিপিই'র অভাব তো এখনিই।
এ এমুহূর্তে চট্টগ্রাম ইপিজেডে স্মার্ট জ্যাকেটের কারখানা ফ্লোরে আলট্রাসনিক মেশিনের সাহায্যে পিপিইগুলো তৈরি হচ্ছে। কোনো ধরনের সেলাই ছাড়াই তিনটি রঙের পিপিই তৈরি হচ্ছে। সেগুলো পানি ও বায়ূ প্রতিরোধক।
একটি ফ্লোরের ১৩টি লাইনে ৭৩০ শ্রমিক পিপিই তৈরির কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। তৈরি হচ্ছে সযত্ন হাতে এবং প্রযুক্তি কৌশল কাজে লাগিয়ে।
করোনায় বিপদকালেও এ যেন তাদের জন্য অন্যরকম ভালোলাগা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন