শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাড়তি ৬শ’ কোটি টাকার সংস্থান নেই

প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সাথে বরিশালসহ সারা দেশের সড়ক যোগাযোগের অন্যতম অন্তরায় লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে সর্বনিম্ন দরপ্রস্তাবটি দাতা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন করলেও প্রাক্কলনের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশী দরের এ প্রস্তাবের বাড়তি অর্থ সংস্থানের বিষয়টি সুরাহা হয়নি। ৪৮০ কোটি টাকার প্রকল্পের বাড়তি প্রায় ৬শ’ কোটি টাকার সংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। ফলে ১ হাজার ৪৭০ মিটার দীর্ঘ চার লেন বিশিষ্ট লেবুখালী সেতু নির্মানে কেএফআইডি ৪শতাধীক কোটি টাকা সহজ শর্তে ঋন প্রদানের চুক্তি সম্পাদনের প্রায় চার বছর পরেও সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরুর বিষয়টি চূড়ান্ত করা যায়নি। অথচ এসতুটি নির্মিত হলে পটুয়াখালী জেলা সহ পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরের সাথে সড়ক যোগাযোগে ফেরি পারাপারের আর কোন বিড়ম্বনা থাকবে না।
বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা-বরগুনা মহাসড়কের বাকেরগঞ্জের কাছে পায়রা নদীর ওপর লেবুখালী সেতু নির্মাণে কুয়েত উন্নয়ন তহবিল-কেএফআইডি’র সাথে ২০১১ সালে খসড়া ঋণ চুক্তি এবং ২০১২-এর ১৩ মার্চ চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের প্রায় সাড়ে ৩ বছর পরে গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর দরপ্রস্তাবসমূহ গ্রহণ করা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩-এর মার্চে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন। কিন্তু এখনো নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সাথে কোন চুক্তি সম্পাদন সম্ভব হয়নি একের পর এক জটিলতার কারণে। অথচ মূল প্রস্তাবনা অনুযায়ী প্রকল্পটি সম্পাদনের মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সড়ক অধিদফতর এবং সড়ক সেতু মন্ত্রণালয় নানা কালক্ষেপণের ফলে সেতুটির দরপত্র আহবানেই সাড়ে ৩ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। উপরন্তু গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রাক-যোগ্যতা সম্পন্ন ৪টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যে দরপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয়, তাতে ৪৮০ কোটি টাকার প্রস্তাবিত লেবুখালী সেতুটির জন্য সর্বনিম্ন প্রস্তাব ছিল ১ হাজার ২৭ কোটি টাকা। মূলত ২০০৬ সালের দর অনুযায়ী ২০১৫ সালে দরপত্র আহ্বান করে সড়ক অধিদফতর। ফলে এবিপত্তি বলে জানা গেছে। এমনকি ৪টি দরপত্রের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপ্রস্তাব ছিল প্রাক্কলনের প্রায় ৪গুণ ১হাজার ৭শ’ কোটি টাকার ওপরে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর দরপ্রস্তাবসমূহ গ্রহণের পারে কারিগরি ও অর্থনৈতিক মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়ন শেষে নভেম্বরের শেষভাগে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে প্রস্তাবগুলো দাতা প্রতিষ্ঠানের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করা হয়। গত ১২জানুয়ারী কেএফআইডি থেকে সর্বনিম্ন দরদাতা চীনা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান-‘ঝিয়াং জি’র ১ হাজার ২৭ কোটি টাকার প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে দাতা প্রতিষ্ঠান।
তবে ঐ প্রস্তাবে বাড়তি অর্থের সংস্থানের বিষয়টি সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। প্রকল্পটির জন্য এখন বাড়তি প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে হবে বহির্সম্পদ বিভাগ-ইআরডি’কে। বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টগণ ইতোমধ্যেই সড়ক অধিদপ্তরকে অবহিত করেছে। সেখানে থেকে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইআরডি’কেও বিষয়টি অবহিত করে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বলা হবে বলে জানা গেছে। ইআরডি থেকে লেবুখালী সেতুটির জন্য বাড়তি প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য কেএফআইডি’কে অনুরোধ জানান হতে পারে। তবে ইআরডি’র এ প্রস্তাব কবে কেএফআইডি’র কাছে পৌঁছবে তা জানা যায়নি। এমনকি কুয়েত সরকারকে প্রকল্পটির জন্য বাড়তি অর্থ প্রদানে যে কূটনৈতিক তৎপরতার প্রয়োজন তাও এখনো শুরু হয়নি বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে প্রকল্পটির জন্য যে বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে সে নিরিখে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব-ডিপিপি একনেক-এর অনুমোদনের জন্য পাঠান হয়নি। এমনকি পুরো প্রকল্পÑপ্রস্তাবসহ দর প্রস্তাবটিও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রী সভা কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়নি। এমনকি দাতা প্রতিষ্ঠান বাড়তি অর্থ প্রদানের বিষয়টি বিবেচনার আগে তা একনেক-এর অনুমোদনকে শর্ত হিসেবে জুড়ে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে একাধিক ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন।
এসব চড়াই-উৎরাই পার হতে আরো কত সময় লাগবে তার উত্তর দিতে পারছেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্টগণ। ইতোমধ্যে লেবুখালী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অবসরে গেছেন। নতুন পিডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে গত সপ্তাহেই। তিনি কাজ শুরু করলেও সব কিছু বুঝে উঠতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে।
তবে এখন সবচেয়ে জরুরী দাতাদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করা। পাশাপাশি সংশোধিত ব্যয়-বরাদ্দও একনেক-এর অনুমোদনসহ দরপ্রস্তাবটি মন্ত্রী পরিষদ কমিটির অনুমোদনের জন্য প্রেরণও জরুরী। খুব শিঘ্রই একনেক-এ সংশোধিত প্রকল্পÑপ্রস্তাব প্রেরণসহ মন্ত্রী পরিষদের ক্রয় কমিটিতেও দরপ্রস্তাব প্রেরণ করা হচ্ছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। ২০১২-এর মে মাসে মূল প্রকল্প-প্রস্তাবটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক’এর চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছিল।
লেবুখালী সেতু নির্মিত হলে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু পার হয়ে ফেরিবিহীন কুয়াকাটার সড়ক পথের দূরত্ব হবে মাত্র ২৬৫ কিলোমিটার। যা ঢাকা থেকে কক্সবাজারেরও অনেক কাছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন