বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পিপিই ছাড়াই সেবা দেওয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের, উদ্বেগে চিকিৎসকরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাসের উপসর্গ আছে এমন রোগীকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) ছাড়াই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার এই নির্দেশ জারির পর চিকিৎসকদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ ধরণের সিদ্ধান্তে অনেক চিকিৎসক ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন এই প্রতিবেদকের কাছে। পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট বা পিপিই হলো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত থেকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত পোশাক নীতিমালা। এর আওতায় রয়েছে মেডিকেল মাস্ক, গাউন, গগলস, ফেস শিল্ড, হেভি ডিউটি গ্লাভস ও বুট।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) আমিনুল হাসান স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, যদি কোনো রোগীর কোভিড-১৯-এর লক্ষণ থাকে, তবে প্রথমে চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেবেন এবং প্রয়োজনে পিপিই পরিধানকৃত দ্বিতীয় চিকিৎসকের কাছে প্রেরণ করবেন এবং তিনি পিপিই পরিহিত অবস্থায় রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করবেন। ওই আদেশে আরও বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসক কোনো রোগীকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারবেন না।

এ বিষয়ে আমিনুল হাসান বলেন, প্রথম চিকিৎসক দূরত্ব বজায় রেখে সেবা দেবেন। দ্বিতীয় চিকিৎসক ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন বলে তাঁকে পিপিই পরতে বলা হয়েছে। এদিকে গতকালই রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত পিপিই পাওয়া গেছে ৩ লাখ ৫৭ হাজার। এর মধ্যে ২ লাখ ৯১ হাজার বিতরণ করা হয়েছে। আমিনুল হাসান বলেন, ইতিমধ্যে বিতরণ করা পিপিইগুলো চিকিৎসকদের হাতে পৌঁছেছে। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি পিপিই একবারের বেশি পরা যায় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বলেন, কোথাও কোথাও এক পিপিই ভাগ করে পরতে বলা হয়েছে। যদিও সূত্র জানিয়েছে, নিম্নমানের পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে চিকিৎসকদের। যা চিকিৎসকদের সেবা প্রদানে ঝুঁকিতে ফেলবে।

এদিকে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগ ও ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন নিজ দায়িত্বে চিকিৎসকদের পিপিই সংগ্রহের নির্দেশ জারি করেন। সিভিল সার্জন এ বি এম মশিউল আলমের লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়, যেহেতু বারবার চাহিদাপত্র পাঠানোর পরও কেন্দ্রীয়ভাবে চাহিদা মোতাবেক পিপিই সরবরাহ করা হচ্ছে না, এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্থানীয়ভাবে পিপিই সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি চিকিৎসকদের কমপক্ষে ২০ সেট সার্জিক্যাল গাউন, ক্যাপ, মাস্ক তৈরি করে প্রতিদিন অটোক্লেভ করে ব্যবহারের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁকে চিকিৎসকদের রেইনকোট, কিচেন গ্লাভস ও কাপড়ের তৈরি মাস্ক ব্যবহার করতে বলেছেন।

এদিকে চিকিৎসকদের প্রদান করা পিপিই’র মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ অনেক পিপিই এই একবারের বেশি ব্যবহার করা সম্ভব নয়। টিস্যু কাগজের এই পিপিই ব্যবহার করে চিকিৎসা প্রদানও ঝুঁকি হিসেবে বলছেন একাধিক চিকিৎসক। তারা বলছেন, যে মানের পিপিই দেওয়া হচ্ছে তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়ার উপযুক্ত নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, একটি অসাধু চক্রের যোগসাজশে নি¤œ মানের পিপিই চিকিৎসকদের প্রদান করা হচ্ছে। যা একবারের বেশি ব্যবহার করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি চিকিৎসকদের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। অপরদিকে চিকিৎসকরা সরকারিভাবে পিপিই না পেয়ে অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে সংগ্রহ করছেন। পিপিই সঙ্কটের কারণে অনেকে আবার ভীড় করছেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। তাদের কাছেও পিপিই না পেয়ে অনেক চিকিৎসক ভীত-সন্ত্রস্ত্র। কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। কারণ রোগীকে ফেরাতে পারবেন না। তাই জীবন নিয়ে ঝুঁকিতে আছেন বলে মত প্রকাশ করেন। যদিও আইইডিসিআর’র তথ্য অনুযায়ী, দেশে ইতোমধ্যে ১ জন চিকিৎসকসহ ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পিপিই সংকটের কথা নানাভাবে জানিয়েছেন। কেউ কেউ নিজেকে বাঁচাতে নিজ উদ্যোগে পিপিই সংগ্রহ করছেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, এ ব্যাপারে সরকারের উদাসীনতা রয়েছে। এর মধ্যেই আজ এই নির্দেশনা জারি হলো।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
রায়হান ২৬ মার্চ, ২০২০, ৫:৫৬ এএম says : 0
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এগুলো মানুষের কাতারে পরে কি না সেটা ভাবার বিষয়!!!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন