বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সামলাতে গতকাল বুধবার সকাল থেকে সারাদেশে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। বিভাগীয় ও জেলা শহরের পাশাপাশি প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে টহল দিচ্ছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ দল। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা, সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতকরণ ও করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সহায়তাসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় লোকজন অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি বন্ধ করে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ : করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে দেশের সকল জেলায় মোতায়েনকৃত সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্পর্কে কোন ধরনের অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও অনুমান নির্ভর সংবাদ ও ছবি প্রকাশ না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়াও, সশস্ত্র বাহিনী সর্ম্পকে সংবাদ পরিবেশনের পূর্বে আইএসপিআর এর কাছ থেকে যাচাই করে নেয়ার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে আইএসপিআরের পক্ষ থেকে।
উপকূলের ১৯ উপজেলায় নৌবাহিনী মোতায়েন
করোনাভাইরাস জনিত উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা বাস্থবায়নে নিয়োজিত রয়েছে নৌবাহিনী। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে উপকূলীয় এলাকায় ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় উপকূলীয় ৬টি জেলার ১৯টি উপজেলায় নৌবাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে। আইএসপিআর সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
ওই সূত্র আরো জানায়, নৌবাহিনী কার্যক্রম পরিচালনা করছে ভোলা সদর, বোরহান উদ্দিন, দৌলতখান, চর ফ্যাশন, মনপুরা, লালমোহন, তজুমুদ্দিন, সন্দীপ, হাতিয়া, টেকনাফ, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, মংলা, বরগুনা সদর, আমতলী, বেতাগী, বামনা, পাথরঘাটা এবং তালতলী উপজেলা। এছাড়া উপকূলীয় এলাকাগুলোতে অসামরিক প্রশাসনের সাথে সমন্বয়কার্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে জনসাধারণের মাঝে সামাজিক দুরত্ব বজায় নিশ্চিত করা, বিদেশ ফেরত নাগরিকদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা এবং বিশেষ নজরদারীর ব্যবস্থা করাসহ আন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করছে নৌবাহিনী। এসব কার্যক্রমের মধ্যে উপকূলীয় বিভিন্ন দূর্গম এলাকায় ভাইরাস সংক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাসহ নিরবিচ্ছিন্নভাবে টহল প্রদান করে যাচ্ছে নৌবাহিনীর সদস্যরা।
আমাদের যশোর ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা দেয়ার জন্য সেনাবাহিনী সদস্যরা ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন। বুধবার সকালে সেনাবাহিনী যশোর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্ণেল নেয়ামুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন ও সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন একসঙ্গে ২৫০ বেড হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। তারা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন। আইসোলেশ ও কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ডের প্রস্ততি দেখেন। যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন তাদের বাড়িতে থাকতে বাধ্য করতে কাজ করছেন সেনা সদস্যরা।
আমাদের স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ থেকে জানান, গোপালগঞ্জে করোনাভাইরাস নিয়ে জন সচেতনতা বৃদ্ধিতে সেনা টহল শুরু হয়েছে। বুধবার থেকে জেলায় সেনাসদস্যরা টহল শুরু করেন। গতকাল দুপুরে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনা সদস্যরা ৪টি গাড়িতে করে গোপালগঞ্জে আসে। তারপর তারা বিভিন্ন স্থানে টহল দিতে থাকেন।
সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মেহেদী জানান, জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মাইকিং করবে। জনগনকে বাড়িতে অবস্থান করার জন্য পরামর্শ দেয়া হবে। পাশাপাশি করোনা সংক্রোমন নিরসনে সেনাবাহিনী কাজ করবে।
আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমন এড়াতে ঠাকুরগাঁওয়ে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সামজিক দূরত্ব বজায় রাখা,জনসমাগম এড়ানো ও হোম কোয়ারাইন্টাইন নিশ্চিত করনে কাজ করবেন তারা।
আমাদের মংলা উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মংলায় গনসচেতনতা ও অবাধ ঘোরাফেরা রোধ করার লক্ষে বুধবার থেকে মাঠে নেমেছে নৌবাহিনীর সদস্যরা। দ্বিগরাজের নৌবাহিনীর ঘাটি থেকে তারা মংলা শহরে প্রবেশ করেন । নৌবাহিনীর কন্টিনজেন্ট কমান্ডার লেফটেনেন্ট কমান্ডার সালাউদ্দিন জানান, ১টি কন্টিনজেন্টের মধ্যে ২টি প্লাটুন রয়েছে। এর বাইরেও রিজার্ভ নৌবাহিনীর সদস্য রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে হলে তাদেরও মাঠে নামানো হবে। সিভিল প্রশাসন, পুলিশ ও উপজেরা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যৌথ ভাবে কাজ করবেন নৌবাহিনীর এই কন্টিনজেন্ট দল। তাদের কাজ হচ্ছে গনসচেতনতা করা এবং বিদেশ থেকে আগত লোকজন অবাদে ঘোরাফেরা করছেন কিনা তা দেখা ও নিয়ন্ত্রণ করা। করোনাভাইরাস রোধে জনগনের প্রথমিক ভাবে কি করতে হবে তাও বোঝানোর চেষ্টা করা হবে।
আমাদের কাপ্তাই উপজেলা সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা, সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতকরণ ও করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সহায়তাসহ সার্বিক পরিস্হিতি পর্যবেক্ষণের জন্য মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য বুধবার হতে কাপ্তাইয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে সকাল বুধবার সকাল থেকে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল এবং রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জন কুমার দাশের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর ২ টি টহল দল উপজেলার সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টহল দিচ্ছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন