বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে দেশে

আক্রান্ত ৩৯, মৃত্যু ৫, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ জন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন সীমিত আকারে শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশে এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে পাঁচজনে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আর কেউ আক্রান্ত হয়নি। তাই আক্রান্তের সংখ্যা আগের ৩৯ জনই। রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআর এ তথ্য জানিয়েছে।

ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে বলেন, দুটি জায়গায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংক্রমণের উৎস এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায়নি। আমরা দুটি ক্ষেত্রেই ইনভেস্টিগেশন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সোর্স অব ইনফেকশন জানা সম্ভব হয়নি। সেদিক থেকে ‘লিমিটেড স্কেলে’ কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে-এমনটি বলা যায়। লিমিটেড স্কেলে যে এলাকার কথা আমরা বলেছি সেখানে ট্রান্সমিশন হয়ে থাকতে পারে, তাই এলাকাটি সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলার আগে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে হবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে পেশ করতে হবে। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কভিড-১৯ এ মৃতের সংখ্যা বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছালেও গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আর কেউ আক্রান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। আক্রান্তের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৩৯ জন। সবমিলিয়ে সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন সাতজন। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৭৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৮২ জনের। এদের মধ্যে নতুন করে কারও সংক্রমনের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আগে থেকে আক্রান্তদের একজন বুধবার সকালে মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স ৬৪ বছর। তিনি উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। বিদেশ ফেরত এক ব্যক্তির সংস্পর্শে থেকে গত ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন তিনি। এরপর স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে গত ২১ মার্চ তাকে রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেশে বর্তমানে করোনা নিশ্চিত বা সন্দেহভাজন এমন ৪৭ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন আরও ৪৭ জন। এছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন আরও দুজন। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়েছেন মোট সাতজন।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আরো কয়েকটি ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। আইইডিসিআর এর পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাক শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরবর্তীতে সলিমুল­াহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই পরীক্ষা সুবিধা সম্প্রসারিত করা হবে। তাছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে এবং কক্সবাজারে আইইডিসিআর এর ২ টি ল্যাবে এই পরীক্ষা হবে। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজেও এই পরীক্ষা সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। এরমধ্যে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী ও বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। আইইডিসিআর এর হটলাইনের সাথে নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটির (এনএসইউ) পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্ট ও সাহায্য করবে। আগের নম্বরগুলোর সঙ্গে নতুন দুটি হান্টিং নম্ব^রে ফোন করে তথ্য ও পরামর্শ জানতে পারবেন রোগীরা। নম্বর দুটি হলো- ০১৯৪৪৩৩৩২২২, ১০৬৫৫।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ‘সমন্বিত নিয়ন্ত্রন কেন্দ্র’ থেকে জানানো হয়েছে, সারাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য ২৯৪টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ১৬ হাজার ৯৪১ জনকে সেবা প্রদান করা যাবে। সারাদেশে আইসোলেশনের জন্য ৪ হাজার ৫৩৯টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা শহরেই প্রস্তুত ১০৫০ শয্যা। এছাড়া রাজধানীর কুয়ে মৈত্রী হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, রিজেন্ট হাসপাতাল-উত্তরা, রিজেণ্ট হাসপাতাল মিরপুর এবং যাত্রাবড়ীর সাজেদা ফাউন্ডেশনে ২৯টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট-আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত আছে। পাশপাশি আরও ১৬টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুতির কাজ চলছে। আশকোনা হজক্যাম্পে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ৩’শ জনের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে আছে ৪৩ হাজার ১০৬ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছে ১৫৬ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে আনা হয় ৩১৪ জনকে, এরমধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছে ২৬৭ জন। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সেবা পেতে এ পর্যন্ত কল এসছে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮৩টি। এরমধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় এসেছে ৪৯ হাজার ৩৬৩টি। এছাড়া এ পর্যন্ত পিপিই বিতরণ করা হয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজারটি। বর্তমানে মজুদ আছে ৬৬ হাজার টি। রোগটি চিকিৎসা সংক্রান্ত অনলাইন কোর্স সম্পন্ন করেছেন ৩ হাজার ৪৬১ জন।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথম নবেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। বর্তমানে বিশ্বের ১৯৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি। এখন পর্যন্ত এই প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সোয়া চার লাখ এবং প্রায় ১৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক লাখ নয় হাজার ১৪৩ জন। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হয়।

উৎসর্গ ফাউন্ডেশনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ : উৎসর্গ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে বিনামূল্যে প্রায় ১০ হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করেছে সংগঠনটি। বুধবার ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎকসক ও রোগীদের সুরক্ষায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। এ সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকর ডা. রোকেয়া সুলতানাসহ ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা সৈয়দ শফি আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনটির চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস জানান, আমরা ঢাকাসহ ৫৫ জেলায় আমাদের প্রায় ৩৫হাজার স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে কয়েক হাজার মানুষকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। আমরা বিনামূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করছি।

গ্রীন ভয়েসের হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ : বাংলাদেশের প্রথম পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রীন ভয়েস হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুত এবং বিনামূল্যে শুমিক-দিনমজুর ও রিক্সাচালকদের মাঝে বিতরন করার উদ্যোগ গ্রহন করেছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুত করন কর্মসূচি উদ্বোধন করেন গ্রীন ভয়েস এর উপদেষ্ঠা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবীব। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহ-সমন্বয়ক হুমায়ন কবির, আরিফ হোসেন, আব্দুস ছাত্তার, শাকিল কবির, সাচিনু মারমাসহ প্রমুখ।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
টুটুল ২৬ মার্চ, ২০২০, ১:৪০ এএম says : 0
সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
Total Reply(0)
ডালিম ২৬ মার্চ, ২০২০, ১:৪১ এএম says : 0
করোনার ব্যাপারে কোন ধরনের অবহেলা করা ঠিক হবে না।
Total Reply(0)
পারভেজ ২৬ মার্চ, ২০২০, ১:৪১ এএম says : 0
প্রয়োজনে বল প্রয়োগ ও শাস্তি প্রদান করতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন