বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

সিরিয়াল কিলার সায়ানাইড মোহন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০২০, ১২:০৭ এএম

বহুবার পাত্রপক্ষের সামনে বসেও ‘অপছন্দ’ হয়ে থেকে যাওয়া তরুণীদের নিশানা করতেন মোহন কুমার। প্রেমের ফাঁদে ভুলিয়ে মুগ্ধ করতেন তাদের। তারপর একদিন ‘হবু স্ত্রী’-র হাতে তুলে দিত গর্ভনিরোধক ওষুধের রূপে পটাসিয়াম সায়ানাইড। এভাবে ২০ জন তরুণীকে খুনের দায়ে অভিযুক্ত মোহন কুমারের আরেক নাম ‘সায়ানাইড মোহন’। ২০০৩ থেকে ২০০৯, এই ছয় বছরে ভারতের দক্ষিণ কর্নাটকের পাঁচ জেলার ছয় শহরে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় ২০ জন তরুণীর। সবার বয়স ২০ থেকে তিরিশের মধ্যে। প্রত্যেকের লাশ পাওয়া গিয়েছিল বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া শৌচাগারে। লাশগুলো উদ্ধার করতে হত দরজা ভেঙে। কারণ, শৌচাগারের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকত। আরও একটি বিষয়ে মিল খুঁজে পায় পুলিশ। তা হলো- নিহতদের সবার গায়ে ছিল বিয়ের সাজ। কিন্তু কারও গায়ে ছিল না কোনও গয়না। আটটি দেহ পাওয়া গিয়েছিল মহীশ‚রের লস্কর মোহাল্লা বাসস্ট্যান্ডে। পাঁচটি লাশ উদ্ধার হয়েছিল বেঙ্গালুরুর ব্যস্ত কেম্পেগৌড়া বাসস্ট্যান্ডের শৌচাগার থেকে। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে পুলিশের চোখে এগুলো ছিল ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ এবং ‘আত্মহত্যা’। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ফরেনসিক টেস্ট বলে, মৃত্যু হয়েছে সায়ানাইডের বিষক্রিয়ায়। উনিশতম রহস্যমৃত্যুর সময় দেখা দিল গোষ্ঠীদ্ব›দ্ব। বছর বাইশের তরুণী জনৈক অনিতার পরিবার থেকে পুলিশে অভিযোগ করা হয়, ভিন্ন স¤প্রদায়ের এক যুবকের সঙ্গে তিনি পালিয়ে গেছেন। তাকে খুঁজে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে স্থানীয় থানার সামনে বিক্ষোভে সামিল হয় অন্তত দেড়শো জন। হুমকি দেয়া হয়, তরুণীর সন্ধান পাওয়া না গেলে জ্বালিয়ে দেয়া হবে থানা! এবার চাপের মুখে নড়েচড়ে বসল বন্তওয়াল থানা। বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিল এক মাস। প্রথমে অনিতার বাড়ির ল্যান্ডলাইনের কললিস্ট পরীক্ষা করা হলো। দেখা গেল, গভীর রাতে তিনি একটি বিশেষ নম্বরে ফোন করে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতেন। সেই নম্বর ছিল এক তরুণীর। দেখা গেল তিনিও নিখোঁজ। এভাবে নিখোঁজ তরুণীদের ফোনের স‚ত্র ধরে সন্ধান পাওয়া গেল কিছু নম্বরের। যেগুলো প্রতিটা কোনও না কোনও তরুণীর নামে। কিন্তু তারা সবাই দীর্ঘদিন ধরে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ। আরও একটি যোগস‚ত্র প্রকাশিত হলো। তা হলো, প্রতিটা নম্বর কোনও না কোনও সময় সক্রিয় ছিল মেঙ্গালুরুর ডেরালাকাট্টে গ্রামে। সেই নম্বরগুলো ধরে আরও অনুসন্ধান চালিয়ে খোঁজ পাওয়া গেল ধনুষ নামে এক কিশোরের। তার কাছে একটি ফোন পাওয়া গেল, যা কোনও এক সময়ে ছিল কাবেরী নামে এক তরুণীর। কিন্তু এখন তিনি নিখোঁজ। ধনুষ পুলিশকে জানাল তাকে ফোনটা দিয়েছে তার কাকা মোহন কুমার। এবার তদন্তকারীরা নিশ্চিত হলেন খুনি হয় নারীপাচারকারী, নয়তো সিরিয়াল কিলার। প্রতিবার খুনের পরে নিহত তরুণীর ফোন ব্যবহার করে কথা বলেছে পরের ‘শিকার’-এর সঙ্গে। তদন্ত শুরু হতে অবশেষে পুলিশের পাতা ফাঁদে পা দিল মোহনকুমার। তাকে জেরা করে পুলিশ যা জানল, তা শিউরে ওঠার মতোই। পুলিশের দাবি, জেরায় মোহন কুমার জানিয়েছে, তার শিকারের সংখ্যা ৩২! যদিও বারোটি মামলায় তার বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পুলিশকে তিনি জানিয়েছিলেন, প্রথমে প্রেমের অভিনয় আর বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে তিনি তরুণীদের মন জয় করতেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে নতুন সংসার করার আশায় বাড়ি থেকে পালাতেন তরুণীরা। তাদের সঙ্গে থাকত গয়না। তারপর তরুণীদের সঙ্গে কোনও হোটেলে রাত্রিবাস করতেন মোহনকুমার। সুযোগ বুঝে নিয়ে যেতেন বাসস্ট্যান্ডে। পরনে বিয়ের সাজ থাকলেও কৌশলে গয়নাগুলো হোটেলেই রেখে দিতে বাধ্য করতেন মোহন কুমার। তারপর বলতেন, বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া শৌচাগারে গিয়ে তার দেয়া গর্ভনিরোধক ওষুধ খেতে। কারণ, ওটা খাওয়ার পর অসুস্থ বোধ করতে পারেন তরুণী। নিজের অজান্তেই পটাসিয়াম সায়ানাইড মেশানো ওষুধ খেতেন তরুণীরা। তারপর তাদের মৃত্যু নিশ্চিত জেনে হোটেল থেকে গয়না ও অন্য ম‚ল্যবান জিনিস নিয়ে পালিয়ে যেতেন মোহন কুমার। এবিপি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন