বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কয়েক ঘণ্টায় বাতিল মন্ত্রণালয়ের আদেশ

চিকিৎসকদের গণপদত্যাগের হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০২০, ১২:০৬ এএম

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সাধারণ রোগীর চিকিৎসা না দিলে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জারি করা আদেশ কয়েক ঘন্টার মধ্যে বাতিল করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়। চিকিৎসক সমাজের কঠোর সমালোচনা ও গণপদত্যাগের ঘোষণায় আদেশ বাতিল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সাধারণ রোগীর চিকিৎসা সেবায় অস্বীকৃতি জানালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে গত বুধবার মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ একটি বিজ্ঞপ্তির ফরমেট তৈরি করে তা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশনা দেওয়া হয়। মন্ত্রনালয়ের উপসচিব রোকেয়া খাতুন ওই আদেশে স্বাক্ষর করেন।

সেখনে আরও বলা হয়, সকল পর্যায়ের হাসপাতালে সাধারণ রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা, ইমারজেন্সি চিকিৎসা, আগত নতুন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাসহ ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ নির্দেশনা অমান্য করলে ভুক্তভোগীকে তাৎক্ষণিক সেনাবাহিনীর টহলপোস্টে দায়িত্বরত কর্মকতা/নিকটবর্তী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করার অনুরোধ করা হয়েছে। এ আদেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন বাতিল, লাইসেন্স বালতিলসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনাটি বিজ্ঞপ্তি আকারে চারটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে বিজ্ঞপ্তিটি ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করতেও নির্দেশনা দিয়েছিল মন্ত্রণালয়।

এই বিজ্ঞপ্তি জারির পর পরই বুধবার বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন ‘প্রতিবাদলিপি ও গণপদত্যাগ’ শিরোনামে এক বিবৃতি দেয়। সেখানে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে গত ফেব্রæয়ারি মাসে পর্যাপ্ত সুরক্ষা পোশাক সরবরাহ করার অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরিত হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় নূন্যতম প্রশিক্ষণহীন ও অভিজ্ঞতাহীন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আমলারা সে সময় করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন। যার ফলে স্বাস্থ্য সেবাকর্মীদের যথাযথ সুরক্ষা পোশাকের ঘাটতিসহ সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় চরম ঘাটতি ও এতদসংক্রান্ত ভয়াবহ পরিস্থিতি বর্তমানে দৃশ্যমান।

সেখনে আরও বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট ব্যর্থতাকে মেনে নিয়েও এবং কোনো ধরনের ঝুঁকিভাতা বা প্রণোদনা ব্যতিতই চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান যেখানে পর্যাপ্ত ও ক্ষেত্রবিশেষ কোনো ধরনের সুরক্ষা পোশাক ছাড়াই করোনার মত মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্তসহ সকল রোগীর চিকিৎসা প্রদানের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, চিকিৎসা প্রদান করতে গিয়ে ইতোমধ্যেই যেখানে চিকিৎসকরা এই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন। সেখানে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের আর্মি ও পুলিশের মাধ্যমে ব্যবস্থাগ্রহণ ও হেনস্থা করার মতো তীব্র উস্কানিমূলক ও তীব্র জিঘাংসামূলক একটি পত্র জারি করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তার প্রশাসনিক অজ্ঞতা ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক কর্মকর্তাসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরাসরি অপমান করেছেন। এই ধরনের পত্রের অপমানের ভার নিয়ে আমাদের পক্ষে আর কোনো ধরনের দায়িত্ব পালন সম্ভব না।

তাই অত্র অ্যাসোসিয়েশন পরিস্কার জানাচ্ছে, (১) উক্ত পত্রটি দুঃখপ্রকাশসহ প্রত্যাহার (২) সংশ্লিষ্ট উপসচিবের প্রত্যাহারপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতাবিহীন ও সুস্পষ্ট পত্র’ ২৬ মার্চ বিকাল ৫টার মধ্যে দৃশ্যমান না হলে ২৬ মার্চ পূর্বাহ্নে গণপদত্যাগ করবেন।
বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশেন বেধে দেওয়ার সময়েই আগেই ওই দিনই (বুধবার) বিজ্ঞপ্তিটি বাতিল দেখিয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ উপসচিব (সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-২) রোকেয়া খাতুনের স্বাক্ষরে ওই বিজ্ঞপ্তি জারি এবং তা বাতিল করা হয়েছে।

বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন-বিএমএ’র দফতর সম্পাদক এস এম শহীদউল্লাহ বলেন, মন্ত্রনালয় থেকে আদেশ জারির পরেই বিএমএ সভাপতি ও মহাসচিব এর প্রতিবাদ জানান। তারা বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং আদেশ দ্রæত প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন