শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জুমা আজ কীভাবে পড়ব

ইসলামী ভাষ্যকার | প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০২০, ১২:০৬ এএম

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস থেকে সতর্কতার জন্য সারাদেশে এখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার অংশ হিসেবে প্রায় লকডাউনের মতোই চলছে। এমতাবস্থায় জনসমাগম খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সরকার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যে নিয়ম দিয়েছেন তা আমাদের মেনে চলতে হবে। কোরআন-সুন্নাহও আমাদের এসব সতর্কতা মেনে চলার বাধ্যতামূলক বিধান দিয়েছে।

তাই আজ জুমার জায়গায় নিজ নিজ অবস্থানে জোহর পড়ে নিব। সাধারণভাবে জুমা এ পরিস্থিতিতে প্রত্যেক নামাজির জন্য ওয়াজিব নয়। জামে মসজিদগুলোতে ইমাম-মুয়াজ্জিন ও নিকটস্থ গুটিকয়েক মুসল্লি স্বাস্থ্যসুরক্ষার নীতি মেনে অতি সংক্ষেপে শুধু খুৎবা ও জুমা সেরে নেবেন।এভাবেই দারুল উলুম দেওবন্দ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের অনুরোধে দেশবরেণ্য মুফতিগণ, সর্বভারতীয় মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড, মুফতি খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি, আল্লামা মুফতি তাকি উসমানীসহ উপমহাদেশের বিশিষ্ট ফিকাহবিদগণ নির্দেশনা দিয়েছেন। যেসবের ফতোয়া ও নির্দেশনার বিভিন্ন ভাষার কপি অনলাইনে দেওয়া আছে। দৈনিক ইনকিলাবকে টেলিফোনে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সচেতন নাগরিক, সমাজের বিশিষ্টজন ও মসজিদের খতিবগণ যেসব বিষয়ে লেখার জন্য বলেছেন এর দু’একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা হলো:

১. যেখানে জুমা হবে প্রত্যেকেই ঘর থেকে অজু-ইস্তেঞ্জা করে সুন্নত, নফল ঘরে পড়ে শুধু খুৎবা ও জুমার জন্য যতদূর সম্ভব কম সময়ের জন্য মসজিদে আসবেন। সবাই স্বাস্থ্যসুরক্ষা নীতি কঠোরভাবে মেনে চলবেন। হাতে হাত বা বুকে বুক মেলাবেন না। হাঁচি, কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা থাকলে অবশ্যই মসজিদে আসবেন না। কারো হাঁচি এসে গেলে তা রুমাল, টিস্যু বা নিজের হাতায় নেবেন। কাতারের দূরত্ব ও মুসল্লিদের মধ্যকার ফাঁকা জায়গা নির্দেশনা মতো বাড়িয়ে নেবেন।
২.
২. বেশি বয়স্ক মুসল্লি ও শিশুরা জুমার দিনে আবেগে মসজিদে আসতে চান। কিন্তু এ ভাইরাস যাদের বয়স বেশি, রক্ত চাপ, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি রয়েছে তাদের সহজে ঘায়েল করে। অতএব, ছোট্ট শিশু ও বয়স্ক মুসল্লিরা জুমায় আসবেন না। বাসায় জোহর পড়বেন।

৩. জুমার নামাজ যতদূর সম্ভব সীমিত মুসল্লি কয়েক মিনিটের মধ্যে শেষ করে সোজা ঘরে ফিরে যাবেন। বাংলা বয়ান দু’চার মিনিটে শেষ করে অতি সংক্ষিপ্ত খুৎবা দু’টি প্রদান করবেন। ছোট সূরা দিয়ে সংক্ষেপে জুমার দু’ রাকাত নামাজ পড়ে মুসল্লিদের ছেড়ে দেবেন। খুৎবায় আল্লাহর প্রশংসা, রাসুল সা. এর উপর দুরুদ, সালাম, কিছু নসিহত ও দোয়া থাকাই যথেষ্ট। এ জন্য হামদ-সানা দুরুদের পর নসিহত ও দোয়ার জন্য এক দু’খানা আয়াত ও হাদিস এবং মসনুন দু’একটি যিকর-দোয়া এবং তাসবীহ-ইস্তেগফার করে দেয়াই সংক্ষিপ্ত খুৎবার রূপরেখা। জরুরি অবস্থায় খুব ছোট সূরা ও কিছু আয়াত দিয়ে নামাজের কেরাত শেষ করতে হয়। যেখানে জুমা হবে সেখানে সুস্থ ও যুবক কিছু মুসল্লি সব নিয়ম মেনে এভাবেই জুমা পড়বেন। পরিস্থিতি ঠিক হয়ে গেলে লকডাউন উঠে গেলে সবাই ইনশাআল্লাহ প্রাণ খুলে দীর্ঘ সময় নিয়ে জুমা ও পাঞ্জেগানা জামাত আমরা পড়তে পারব।

৪. বাড়িতে বসে দোয়া-দুরুদের চেয়েও অধিক গুরুত্ব রাখে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। নামাজগুলো পড়তে হবে। এর দ্বারা মানুষ আল্লাহর জিম্মায় চলে যায়। হায়াত, দৌলত, রিজিক, রহমত, বরকতের জিম্মা তখন আল্লাহ নিয়ে নেন। বাড়িতে সবাই নামাজ পড়ার পাশাপাশি তওবা-ইস্তেগফার, দোয়া, দুরুদ, জিকির ও তেলাওয়াতে সময় কাটাই।

৫. হাদিস শরীফে আছে, ‘আস ছাদকাতু তারুদ্দুল বালা’ অর্থাৎ দান-সদকা বালা মুসিবত রোধ করে। অতএব, নিজের চেনাজানা কাছে দূরের কিংবা যে কোনো অভাবী মানুষকে এ সময়ে সাহায্য সহযোগিতা করা সর্বোত্তম এবাদত। হাদিস শরীফে আছে, ঈমান ও ফরজ ইবাদতের পর সবচেয়ে বেশি সওয়াবের কাজ হলো কোনো মানুষের অন্তরকে খুশি করা। (কানজুল উম্মাল) এখানে অভাব দূর করা, জরুরি বস্তু কিনে দেয়া, ঋণমুক্ত করা, দুশ্চিন্তা দূর করার দ্বারা অন্তরকে খুশি করতে বলা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের এ বিপদকে সামনে রেখে পশ্চিমা জগতের ধনকুবেররা কল্পনাতীত অংকের দান করছেন। চ্যারিটিতে তারা অনেক এগিয়ে। বহু তারকা নিজেদের বাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছেন। নিজের হোটেলকে আশ্রয়স্থল বা হাসপাতাল বানিয়ে দিচ্ছেন। প্রতিদিনই বিশ্ব মিডিয়ায় এসব খবর আসছে। বাংলাদেশেও সাধারণ মানুষ দানের ইবাদত কম-বেশি করে যাচ্ছেন। এখানে বিখ্যাত ধনবান, বিত্তশালী ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, নেতা-সমাজপতিসহ পয়সাওয়ালা পেশাজীবীদের এখনই এগিয়ে আসার সময়। মানবতার সেবা মানুষকে বিবেকের কাছে ভারমুক্ত করে। হায়াত, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, সুখ-শান্তি, সর্বোপরি আখেরাতে মুক্তি নিশ্চিত করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (15)
md. Alauddin dewan ২৭ মার্চ, ২০২০, ১২:৩৯ এএম says : 0
আমর সবাই এভাবেই আমল করার চেষ্টা করবো। ইনশা-আল্লাহ।
Total Reply(0)
Nazmul Huda ২৭ মার্চ, ২০২০, ১২:৫৪ এএম says : 0
Everyone stay home, stay safe.
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ২৭ মার্চ, ২০২০, ১২:৫৪ এএম says : 0
ভারত বাংলাদেশে ঘনবসতি অনেক জনসংখ্যা এখানে আল্লাহ তা'আলা একমাত্র রক্ষা করতে পারেন।
Total Reply(0)
Ami Surjo ২৭ মার্চ, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
বাংলাদেশে কোন করোনা ভাইরাস নাই কেননা এটি কাফির মুশরিকদের উপর এক ভয়ংকর গজব যা শুধু কাফির মুশরিক ও তাদের সমগোত্রীয় দালাল মুনাফিকদের উপর পতিত হবে।
Total Reply(0)
Fahad Ahmed Chowdhury ২৭ মার্চ, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
আপনার এই লেখা যুক্তিসঙ্গত
Total Reply(0)
Jalal Priti ২৭ মার্চ, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
এটা কেউ মানবেনা আমরা সবাই বড় ধার্মিক
Total Reply(0)
Raquib Md Abdur ২৭ মার্চ, ২০২০, ১:০৪ এএম says : 0
Exactly so. This is a right approach.
Total Reply(0)
Rpd Robin ২৭ মার্চ, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
একমত। এবাদত করার অনেক সময় পাবেন এভাবে এত লোক একসাথে জড়ো হওয়া মোটেও ঠিক না এরমধ্যে যদি দুই-একজন পজেটিভ থাকে তাহলে অবস্থা কিভাবে বুঝতে পারছেন
Total Reply(0)
Md Abu Tahar ২৭ মার্চ, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
সংকটময় মুহূর্তে দেশবরেণ্য মুফতি সাহেবরা একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারেন।
Total Reply(0)
Md Ataur Rahman ২৭ মার্চ, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হই ও না।যে আল্লাহ গজব দিয়েছেন সেই আল্লাহই মাফ করবেন ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
Mohit Uddin ২৭ মার্চ, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
২০২৫মিনিটের জমায়েতও যা ১ঘন্টার জমায়েতও একই মুল পরামর্শ দুইজনের বেশি লোক জমায়েত না হওয়া যে কারনে সাউদি আরব মক্কা মদিনা সহ দেশের সব মসজিদ সাময়িক বন্ধ রেখেছে আমাদের দেশের আলেমরা বলতে পারবেন কি করলে করোনা থেকে নিরাপদ থাকা যাবে
Total Reply(0)
Mhorram Hosen Shakil ২৭ মার্চ, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 0
একজনের দেহ থেকে একজনের ভাইরাস ছড়াতে সম্ভবত 10-15 মিনিট সময় লাগে না? ( আল্লাহ সকল আলেম কে এই দুর্যোগ চলাকালীন সময়ে সঠিক বুঝ দান করুক)
Total Reply(0)
Tanjimul Islam ২৭ মার্চ, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 0
নামাজ বাসায় পড়লেই তো ভালো হতো। এতে তো আরো মহামারী ছড়িয়ে পড়বে।
Total Reply(0)
মাওলানা মোঃ জায়নুল আবিদীন ২৭ মার্চ, ২০২০, ৭:২১ এএম says : 0
জাযাকাল্লাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও দিকনির্দেশনামূলক লেখা উপহার দেওয়ার জন্য।
Total Reply(0)
মোঃ শরীফ উল্যাহ ২৭ মার্চ, ২০২০, ৮:১১ এএম says : 0
চীন থেকে পুরো বিশ্ব হয়ে গেল, জানতে পারলাম বাড়িতে বাড়িতে মৃত্যু ব্যক্তির লাশ পাওয়া যাচ্ছে, তাহলে বাঁচার উপায় কি? যদি এই কঠিন সময় আল্লাহ কে বেশি ডাকা যায় অবশ্য আল্লাহ নাজাত দিবেন। আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন