শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আলু নিয়ে ভারতের স্বার্থে কারসাজি

মান প্রশ্নে রফতানি বন্ধ রাশিয়ায়

মহসিন রাজু | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর আলু ক্রমশ এক সম্ভাবনাময় রফতানি পণ্যে পরিণত হতে চলেছে। পাশাপাশি রহস্যজনক সিন্ডিকেটের কালো কারসাজিতে কখনো আলুর দাম পড়ে যাচ্ছে, আবার কখনো আলুর দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে বাংলাদেশের বাজারে ভারতীয় আলু ঢোকানোর অজুহাত তৈরি হচ্ছে। আলু উৎপাদন ও বিপণের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার সচেতন হলে সিন্ডিকেটের কারসাজি সত্তে¡ও আলুই হয়ে উঠতে পারে কৃষি ক্ষেত্রের বড় সম্ভানাময় ফসল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সার্ক, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপের ১১টি দেশে রফতানি হয়েছে বাংলাদেশের আলু। উৎপাদন ও বিপণন এবং রফতানি পর্যায়ে যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে কৃষিপণ্য রফতানিতে এক আলুই হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বিরাট ক্ষেত্র।

বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে আলু রফতানি হয়েছে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। ওই বছরই ইউরোপের দেশ রাশিয়ায় রফতানি করা আলু আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন না হওয়ায় রাশিয়া আমদানি বন্ধ করে দেয়। ফলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫ হাজার মেট্রিক টন কমে এসে আলু রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন।

অপরদিকে চলতি বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত পাওয়া দেখা যায়, নেপাল, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি ননইউরোপীয় দেশে আলু রফতানি হয়েছে ২৭ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন। রফতানি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, উৎপাদন ও বিপণন পর্যায়ে যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ইউরোপের রাশিয়াসহ মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে লাখ লাখ মেট্রিক আলু রফতানি করা ও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত কৃষি সচিব (গবেষণা) কমলা রঞ্জন দাশ বলেন, আলুর সম্ভাবনা নিয়ে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি আলুর মান পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দেয়ার মত একটি অ্যাক্রিডিটেট ল্যাব গঠনের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া আলুর উপযোগী আবহাওয়া বিবেচনায় উত্তরের ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর এবং নীলফামারী ও বগুড়ার অংশ বিশেষ নিয়ে আলুর বিশেষ জোন তৈরির কাজ চলছে।

উল্লেখিত জোনের আবহাওয়া উন্নত মানের এবং উচ্চফলনশীল আলু চাষের উপযোগী হওয়ায় সেখানে বিদেশে বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে রফতানিযোগ্য আলুর উৎপাদন কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। তিনি বলেন, রাশিয়ার মত দেশে আলু রফতানির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাবনার ওই জায়গাগুলোতে প্রয়োজনে জি টু জি (গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট) পর্যায়ে রফতানির বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর দেশে ৪ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৮ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের টার্গেট নেয়া হয়েছে। গত বছর ৪ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর চাষের টার্গেটের বিপরীতে চাষ হয় ৪ লাখ ৬৯ হাজার হেক্টর এবং আলু উৎপাদন হয় ১ কোটি ৯ লাখ ৪৯ হাজার ১শ’ ৪৯ মেট্রিক টন।

গত বছর আলুর ভরা মওশুমে সারাদেশেই খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে ১০/১৫ টাকা কেজি দরে। অথচ এ বছর ভরা মওশুমে খুচরা বাজারে আলুর কেজি মান ভেদে ২০/২৫ টাকায় স্থির রয়েছে। সাধারণভাবে মনে করা হচ্ছে, পেঁয়াজ সঙ্কটের নেপথ্যের কারিগররাই এবার আলুতে সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থির করে রেখেছে। যাতে মিডিয়ায় আলুর লেখালেখি হলে দেশে ভারতীয় আলু বৈধ (আমদানি) ও অবৈধ (চোরা পথে) ঢোকার রাস্তা পরিষ্কার হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের অফিস সেক্রেটারি মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, এবার আলু মওসুমে দুইবার বৃষ্টিতে আলুর জমি ক্ষতিগ্রন্ত হয়েছে। তাছাড়া পেঁয়াজ চাষীরা এবার আলুর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছে। ফলে বাজারে আলুর সরবরাহ বেশ কম বলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা তাদের তথ্য দিয়েছেন।

তিনি বলেন, দেশে এখন কোল্ড স্টোরেজের সংখ্যা ৪২৯টি। এগুলোর ধারণক্ষমতা ৫২ লাখ মেট্রিক টন। আলু সিন্ডিকেটের সাথে কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুঁজি সঙ্কটসহ বিভিন্ন সমস্যায় ২০১৮ সালে ২৬টি কোল্ড স্টোরেজ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯ সালে বন্ধ কোল্ড স্টোরেজের সংখ্যা উন্নীত হয় ৩০ এ। এ অবস্থায় সিন্ডিকেট করে কৃত্রিমভাবে আলুর দাম বাড়াবার সুযোগ তাদের কোথায়?

এদিকে উত্তরের আলু উৎপাদক চাষিদের সাথে সরেজমিনে কথা বলে জানা যায়, এবার বেশিরভাগ আলু চাষিই জমিতে তাদের আলু বিক্রি করে দিয়েছেন। শতক প্রতি হাজার টাকায় জমিতে আলু বিক্রি করে তাদেরও কিছুটা লাভ হয়েছে। আলুচাষিরা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন পরে তারা এবার আলু চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন।

কারা আলুর জমিতে এসে আলু কিনে নিয়েছে, জানতে চাইলে তাদের কেউ বলেন মহাজনের কথা, কেউ আবার জুস ও ফিড কোম্পানির কথা। এ বিষয়ে অনুসন্ধানকালে জানা যায়, যেসব জুস কোম্পানি বিভিন্ন ফলের জুসে কুমড়ার স্ট্রার্চ ব্যবহার করতো এখন তারা আলুর স্ট্রার্চও ব্যবহার করছে। অনেক ফিড কোম্পানিই এখন মাছ ও পোল্ট্রিফিডে আলুর স্ট্রার্চ ব্যবহার করছে। মূলত সেকারণেও এবার আলুর বাজার কিছুটা চড়া হয়েছে। এছাড়াও করোনাভাইরাস জনিত কারণে পরিবহন সমস্যার কারণে বিভিন্ন বাজারে বা সেল পযেন্টে আলুর স্বাভাবিক সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। ফলে খুচরা বাজারে আলুর দাম ভরা মওসুমেও ঊর্ধ্বমুখী। গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতি কেজি আলুর গড় দাম ছিল কেজি প্রতি ২৫ টাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Kamal Hossain ২৯ মার্চ, ২০২০, ১:৩৪ এএম says : 0
চাষ ভালো হবে, রফতানি বাড়বে, কৃষকের কান্না থামবেনা।
Total Reply(0)
Md Rezaul Karim ২৯ মার্চ, ২০২০, ১:৩৫ এএম says : 0
রাজশাহীর আলু সম্পর্কে মিডিয়াতে তুলে ধরুন
Total Reply(0)
Jamal Uddiin Babul ২৯ মার্চ, ২০২০, ১:৩৫ এএম says : 0
রপ্তানি কর ঠীক আছে তবে বেজাল আলু রপ্তানি করিসনা।দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট করিসনা।
Total Reply(0)
Abdul Kalam Toropder ২৯ মার্চ, ২০২০, ১:৩৬ এএম says : 0
আলু তো বিভিন্ন রাষ্ট্র যায় ঠিকই কিন্তু কৃষকেরা তারা তো সেই রকম মূল্য পায় না তাহলে অন্য দেশে আর এত পাঠিয়ে এত ফালতু করে আর লাভ কি কৃষকেরা যেরকম করে আলু রোপণ করে তারা সেই রকম কোন দাম পায় না
Total Reply(0)
jack ali ২৯ মার্চ, ২০২০, ৪:৩৬ পিএম says : 0
Allah Please wipe out all these criminal by corona virus from our Beloved Country.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন