কোভিড-১৯ আতংক কি শহর কি গ্রামের মানুষ সবাইকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। কৃষি প্রধান বরেন্দ্র অঞ্চলেও কটাদিন ঘরবন্দী থাকার নির্দেশনা মেনে চলার জন্য চলছে প্রচার প্রচারনা। কোথাও কোথাও এনিয়ে বেশ কড়াকড়ি ভাব। চারিদিকে চলছে ঝকমারী কান্ড। এ অঞ্চলের সম্প্রতি যারা বিদেশ থেকে এসেছেন তেমনি কয়েক হাজার মানুষকে গৃহবন্দী করার তৎপরতা কম নয়। যাদের নাগাল পেয়েছে তাদের গৃহবন্দী বা কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। অন্যদের গরু খোঁজা করে খোজা হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে পাসপোর্ট বাতিলসহ নানা রকম সতর্ক বার্তা। যারা নিয়ম ভেঙ্গে ঘরের বাইরে এসেছেন তাদের কাউকে কাউকে গুনতে হয়েছে জরিমানা। কারো বাড়িতে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে লাল পতাকা। পথ চলতে অনেকে উৎসুক নয়নে দেখছেন। বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছসেবী সংগঠনকে মাক্স, শ্যানিটাইজার বিতরন করতে দেখা যায়। কেউ কেউ পোটলা করে খাদ্য বিতরন করেন। এর সাথে গণমাধ্যমকর্মীদের খবর দেন। কারো কারো আয়োজন শুধুমাত্র ফটো সেসনের মত। আবারো কারো কাজ একদম নীরবে। অনেকে ব্যাক্তিগতভাবে পরিমানে অল্প হলেও অসহায় মানুষের পাশে চুপি চুৃপি খাদ্য সামগ্রী নিয়ে দাড়াচ্ছে।
সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী আর আর্তমানবতার সেবাই সদা নিয়োজিত রেডক্রিসেন্ট দেশজুড়ে কাজ করছে। রাজশাহী, নাটোর, নওগা,চাপাইনবাবগঞ্জ সর্বত্র বিতরন করেছে সাবান, মাক্স, স্যানিটাইজার। তাছাড়া সিটি কর্পোরেশনের সাথে থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে। চারিদিকে লকডাউন অবস্থার মত। রাস্তাঘাট ফাঁকা,কাঁচাবাজার ছাড়া সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। শাকস্বব্জি মাছ মাংশের বাজারে তেমন ক্রেতা নেই। হাট বাজারে লোকজন আসতে পারছেনা। ফলে এসবের চাহিদা কম।
এখন মাঠ ভরা বোরো ধান। রয়েছে গ্রীস্মকালীন শাকস্বব্জির ক্ষেত। রোদ্রের তাপ বাড়ছে ফলে সেচের চাহিদাও বাড়ছে। মাঠের গ্রীস্মকালীন শাকস্বব্জির নিয়ে আবাদকারীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। হাটবাজার পরিবহন সব বন্ধ। তাদের উৎপাদিত পন্য নেবার লোক নেই। মাঠে মাঠে লাউ কুমড়ো, পটল, ঝিঙ্গে, করল্লা,শসাসহ রকমারী গ্রীস্মকালীন শাকস্বব্জি। ক্রেতার অভাবে মাচায় ঝুলছে এসব। অনেক গুলোর কচিভাব নেই। এসব শাকস্বব্জি রাজশাহীর উপকন্ঠে খড়খড়ি বাজারসহ দূর্গাপুর পবা থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে চালান যেত। তা এখন বন্ধ।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় কাঁচামালের বাজার সাহেব বাজার মাষ্টারপাড়া গতকাল রাতে পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় মালামালের আমদানী অনেক কম। নেই চিরচেনা হাক ডাক। আড়তগুলোয় ফাঁকা ফাঁকা ভাব। ভোররাতে আশেপাশের ছোট ছোট বাজারের ব্যবসায়ীরা আসছেন কিছু মাল কিনে চলে যাচ্ছেন। রিক্সাভ্যানে করে বিভিন্ন মহল্লায় শাকস্বব্জি ফেরী করে বিক্রেতারা। তারা মানুষের দৌড়গোড়ায় গিয়ে হাঁক ডাক করছে। মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের ব্যবসা ভাল নয় বলে জানালেন অনেকে।
লকডাউন অবস্থার কারনে সবচেয়ে বেশী বেকায়দায় পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। বিশেষ করে দিন এনে দিন খেটে খাওয়া মানুষ। সবকিছু বন্ধ। কাজ নেই। তারপর কাজের আসায় সাইকেলে চেপে ডালি কোদাল নিয়ে ভীড় করছেন শ্রমবিক্রিরস্থান তালাইমারী রেলগেট আর লক্ষীপুর এলাকায়। কিন্তু কাজ জুটছেনা। আর কাজ না পাওয়া মানে অনাহার অর্দ্ধহার। যারা রাস্তায় অটোরিক্সা ও ব্যাটারী চালিত রিক্সা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন তাদের যাত্রী নেই। সকাল থেকে রাত অবধি ছুটছেন কিন্তু আয় তেমন নেই। যাদের নিজের বাহন তারা কোন রকমে চলছেন। ভাড়া করা অটো গ্যারেজ বন্দী।
এসব শ্রমজীবী মানুষের পেটে টান ধরতে শুরু করেছে। অনেকে আছে যারা না পারে সইতে না বলতে। তাদের খুজে পাশে দাড়ানো এখন সময়ের দাবী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন