শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

এবার কুমিল্লায় জনতাকে পেটালেন এসিল্যান্ড অফিসের পিয়ন!

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০২০, ৩:০৪ পিএম

এবার কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদা আক্তারের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার সময় তার অফিস পিয়ন লোকজনকে কানে ধরিয়ে লাঞ্ছনা ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ধাওয়া করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে ঐ এসিল্যান্ড তার অফিস পিয়ন ও পুলিশ কর্তৃক জনতাকে ধাওয়া করার ঘটনা স্বীকার করেন। যশোরের মনিরামপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বির্তকের রেশ না কাটতেই কুমিল্লায় এমন ঘটনার ছবি ও ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিতর্কের ঝড় ওঠে। এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী, সচেতন মহল ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, জেলার বুড়িচং উপজেলার নিমসার ও কাবিলাসহ বেশ কয়েকটি বাজারে গত কয়েকদিন যাবত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন বুড়িচং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদা আক্তার। এসময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মূল্য তালিকা না থাকায় এবং মাস্ক না পড়ে বাজারে ঘোরাফেরার কারণে আট জনকে জরিমানা এবং অনেককে সতর্ক করেন। একপর্যায়ে হঠাৎ বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে আসা সাধারণ মানুষকে পুলিশ ও এসিল্যান্ড অফিসের পিয়ন সাইফুল ইসলাম লাঠি নিয়ে ধাওয়া করেন। এসময় একাধিক ব্যক্তিকে লাঠি দিয়ে পেটাতে এবং এক ব্যক্তিকে কান ধরাতেও দেখা গেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন বাজারে আসা লোকজন ও ব্যবসায়ীরা। ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সহায়তা করেন বুড়িচং থানার এএসআই দেলোয়ারসহ সঙ্গীয় ফোর্স।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, এলাকার সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য বাজারে এসেছিলেন, কিন্তু বিনা উসকানিতে পুলিশ ও সাদা গেঞ্জি পরিহিত যুবক (অফিস পিয়ন সাইফুল) ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মানুষকে যেভাবে ধাওয়া করেছে এবং পিটিয়েছে তা অমানবিক। এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে ধারণকৃত তিন মিনিটের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ফেসবুক কমেন্টে একজন লিখেছেন, ‘দেশকে লকডাউন করা হয়নি যে বাসার বাইরে বের হলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার হতে হবে।’
এ বিষয়ে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরুল হাসান বলেন, ‘লাঠি হাতে জনতাকে ধাওয়া, পেটানো এবং কানে ধরার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টির খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’ বুড়িচং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিদা আক্তার জানান, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে কানে ধরানো এবং লাঠি হাতে ধাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।’ পরে তিনি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে অফিস পিয়ন সাইফুল কর্তৃক লাঠি ও ধাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং বলেন, ‘সবদিকে তো আমার চোখ রাখা সম্ভব নয়।’ এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লা শাখার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় লাঠি হাতে ধাওয়া করা আইনের ব্যত্যয়। এক্ষেত্রে প্রমাণাদি দেখে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে জনসাধারণ কর্তৃক কোনোভাবে আক্রান্ত কিংবা বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশকে নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু কোনো সিভিল কর্মচারী লাঠি দিয়ে এভাবে পেটাতে কিংবা দৌঁড়াতে অথবা কানে ধরাতে পারেন না, এটা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ। এর দায়ভার এসিল্যান্ড কোনোভাবে এড়াতে পারেন না।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন