শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সিলগালা করা সীমান্ত দিয়ে ফেন্সিডিলসহ মাদক আসছেই

হ্যান্ড স্যানিটাইজারের নামে ফেন্সিডিল বিপণন

মাহফুজুল হক আনার | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০২০, ৩:৫২ পিএম

করোণা ভাইরাসে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় রাস টেনে ধরার সরকারী প্রচেষ্টা অনেকটাই সফল হয়েছে। দিনাজপুর শহর ও শহরতলীর রাস্তাঘাটে শুন-সান অবস্থা বিরাজ করছে। কেবলমাত্র নিত্য প্রয়োজনীয় কেনা-কাটা ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হচ্ছে না। আত্বীয়তা বা সৌজন্যতা সবকিছুকেই বিসর্জন দিয়ে কেউ কারো বাসায় যাতায়াত করছে না। কিন্তু থেমে নেই মাদকসেবী, মাদকবিক্রেতা ও মাদক চোরাকারবারীরা। সীমান্তবর্তী জেলা দিনাজপুরের সীমান্তসমূহ সিল গালা করে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা। তারপরেও আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে পাচার হয়ে আসা ফেন্সিডিল ধরা পড়ছে। সীমান্তের ওপার থেকে আসা এসব ফেন্সিডিল চলে যাচেছ মাদকসেবীদের হাতে। আতংকের বিষয় হচ্ছে করোণা ভাইরাস থেকে সাধারন মানুষকে রক্ষায় প্রশাসনের সাথে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে মাস্ক, হ্যান্ডসেনিটাইজেসন তৈরী ও বিতরণ করা হচেছ। আর সমাজের শক্র মাদক ব্যবসায়ীরা হ্যান্ড সেনিটাইজেশন বিতরণ ও বিপননের সুযোগকে কাজে ফেন্সিডিল সরবরাহ করছে। এক্ষেত্রে সীমান্তে নজরদারী বৃদ্ধি’র পাশাপাশি যত্র-তত্র হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন উৎপাদন এবং বিতরণে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরী হয়ে পড়েছে। অনুৎসাহিত না করে উৎপাদিত স্যানেটাইজেশন সামগ্রী প্রশাসনসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি অথবা ইউনিয়ন কার্যালয়ের মাধ্যমে বিতরণের উদ্যোগ নেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। এছাড়া যত্র-তত্র তৈরী এসব হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন কতটুকু কার্যকর ও মানসম্মত তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

জেলার ১৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এসব সীমান্তের মধ্যে কিছু কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে দুই-দেশের বাড়ী ঘর প্রায় লাগোয়া। এছাড়া দুই দেশের কৃষি জমিতে কাজ করছে বাংলাদেশী ও ভারতীয় কৃষকেরা। দিনাজপুরের প্রায় পূরো সীমান্ত ভারতীয় তার কাঁটা দিয়ে ঘেরা। তবে বাংলাদেশের নিজস্ব তাঁরকাটা ব্যবস্থা নেই। অতএব তাঁর কাটা পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবশ করাটাই মূল বিষয়। বাংলাদেশে প্রবেশের পর অপর্যাপ্ত বিজিবি সদস্যদের ফাঁকি দিয়ে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে প্রবেশ করা খুব একটা দূরহ ব্যাপার নয়। সম্প্রতি করোণা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের লকডাউন ঘোষনার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার দায়িত্ব পালনে বিজিবিসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যস্ত সময় পার করছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাদক চোরাকারবারী তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে কর্মহীন জীবন ব্যবস্থায় মাদকসেবীদের কাছে ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্য সোনার হরিণ এর মত হয়ে গেছে। ফলে একেকটি ফেন্সিডিলের দাম ৬’শ থেকে দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে। আইন শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতার কারনে সকাল ও সন্ধাকে বেছে নিয়েছে মাদক বিক্রেতারা। সকাল বেলা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র ক্রয়ের জন্য ছাড় দেয়া হচ্ছে। সন্ধা বেলাতেও একই অবস্থা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদকসেবী জানালো আরো ভয়ংকর তথ্য। হাতে গ্লোবস, মুখে মাস্ক পড়ে সে ফেন্সিডিল আনতে নির্দিষ্ট স্থানে যাচ্ছিল। তাকে জিঙ্গেস করতেই জানালো হ্যান্ড স্যানেটাইজেশন আনতে যাচ্ছে। পরিচিত সাথে থাকা সঙ্গি জানালো হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন নয় আনতে যাচ্ছে ফেন্সিডিল। হ্যান্ড স্যানিটাইজেশনের কথা বললে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কিছু বলবে। ২৮ মার্চ রাত ৮টায় দিনাজপুরের বাহাদুর মোড় এলাকার ফল দোকানের পার্শ্বে বন্ধ একটি টি ষ্টলের সামনে যেয়ে দেখা গেল মানুষের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা কিভাবে ফায়দা লুটছে। কাগজের (ঔষধ কোম্পানীর) কাটুনে হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন নিয়ে বসে আছে একজন যুবক। ফল দোকানের পাশাপাশি মাস্ক বিক্রয় করা দোকানী অধিক চাহিদার কারনে হ্যান্ড স্যনিটাইজেশন বিক্রির উদ্দেশ্য উক্ত যুবকের শরনাপন্ন হয়। অত্যন্ত উচ্চ স্বরেই যুবকটি জানালো একটি ছোট বোতলের দাম ১৫০ টাকা। সে এও বললো দিনাজপুরে এখন আমি সবচেয়ে বেশী হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন বানাচ্ছি। কিছুক্ষন পর আরেক যুবক এসে বললো জিনিস আছে কিনা। এদিক -ওদিক দেখে বললো ১২’শ লাগবে। দরাদরি হতেই বেঞ্চের নীচ থেকে অপর একটি কার্টুন থেকে কাংখিত ফেন্সিডিল বের করে দিলো। লেবেল আছে কিন্ত কিসের লেবেল তা দেখা সম্ভব হলো না-দ্রুত চলে যাওয়ার কারনে। সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি জানার জন্য বিজিবি দিনাজপুর সেক্টর, ৪২ বিজিবি ব্যটালিয়ান কমান্ডারের সাথে ল্যান্ড ও মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। জানা গেলো, সীমান্ত তদারকিতে ব্যস্ত রয়েছেন।
সীমান্ত সংলগ্ন হাকিমপুর হিলি সংবাদদাতা জানালেন, ব্যস্তবহুল হিলি বন্দরের আমদানী-রফতানী, যাত্রী পারাপার সব বন্ধ রয়েছে। বিজিবি সীমান্ত বন্ধের দাবী করেছে। তবে গত ২১ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত এই সীমান্তে পুলিশ ৩২৬ বোতল ফেন্সিডিল, ৯৫০টি এ্যাম্পুলসহ প্রায় ৫ লক্ষ টাকার মালামাল উদ্ধার করে ১৬ জনকে আটক করেছে। এসময় বিজিবি ৩৫ বোতল ফেন্সিডিল ও ১১৫টি এ্যাম্পুল উদ্ধার করেছে।
বিরামপুর সংবাদদাতা জানান, গত এক মাসে এই সীমান্তে পুলিশের হাতে উদ্ধার হয়েছে ১২’শ বোতল ফেন্সিডিল ও ২৩’শ পিচ এ্যাম্পুল। এই উপজেলার কাটলা, ঘাসুড়িয়া, দাউদপুর, ভাইগড় সীমান্ত দিয়ে অবাধে মাদকদ্রব্য আসছে। করোণা ভাইরাসের কারনে লকডাউনের পর ফেন্সিডিলসহ মাদকের চাহিদা ও দাম দ্বিগুন হওয়ায় মাদক চোরাকারবারীরা আরো বেশী সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
ফুলবাড়ী সংবাদদাতা জানান, সীমান্ত থেকে একটু দূরে এই উপজেলা শহরে মাদকের ছড়াছড়ি অবস্থা। গত ১৪ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত পুলিশ উদ্ধার করেছে ৩২২ বোতল ফেন্সিডিল। ফুলবাড়ী বিজিবি ২৯ ব্যাটেলিয়ান কমান্ডারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে সীমান্ত সীলগালা করার পর থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জোয়ানদের উৎসাহ দেয়ার লক্ষ্যে অধিকাংশ সময় সীমান্তে অবস্থান করছেন। এ চিত্র দিনাজপুরের বিরল, ঠাকুরগাঁও’র বালিয়াডাঙ্গি, পীরগঞ্জ,হরিপুরসহ পার্শ্ববর্তী সকল সীমান্তে।
জাতিকে রক্ষায় বিশ্বের সাথে বাংলাদেশ সরকারও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে তৎপর রয়েছে। মানুষের এই অসহায় অবস্থাকে পুজি করে মাদক ব্যবসায়ীরা তৎপরতা বাড়িয়েছে। করোণা ভাইরাস প্রতিরোধে জনগন সচেতন হয়েছে। এই সচেতনার পরিধিকে বৃদ্ধি করে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের ব্যাপারে পরিবার পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায়ের জন প্রতিনিধি ও সমাজসেবীদের তৎপর হতে হবে। আর তা না হলে করোণা ভাইরাস থেকে মুক্তি পেলেও মরণ মাদক থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন