‘যার হাতে কিছুই নেই, তার হাতেও সময় আছে। এটাই আসলে সবচেয়ে বড় সম্পদ’ (ব্যালটাজার গার্সিয়ান)। সময় কাজে লাগানোর জন্য স্প্যানিশ দার্শনিকের এই উক্তি প্রণিধানযোগ্য। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে চলছে সরকারি ছুটি। অঘোষিত লকডাউনে রাজধানীবাসী কার্যত গৃহবন্দি। ঝুঁকি এড়াতে উপর তলা-নিচ তলার অনেকেই হোম কোয়ারেন্টাইনে।
এখন আপনি ‘হোম কোয়ারেন্টাইনের সময় অপচয় করবেন, ঘরে বিরক্তিকর জীবন কাটাবেন নাকি ‘সময়’ কাজে লাগিয়ে উপভোগ করবেন? ব্রিটিশ লেখক ফিলিপ স্ট্যানহোপ বলেছেন, ‘সময়ের সত্যিকার মূল্য দাও। প্রতিটি মুহূর্তকে দখল করো, উপভোগ করো। আলস্য করো না। যে কাজ আজ করতে পারো, তা কালকের জন্য ফেলে রেখো না’।
অঘোষিত লকডাউন যেন দেশের মহান, মহৎ ও কর্মব্যস্ত সব শ্রেণির মানুষের জন্য ‘সুবর্ণ সুযোগ’ এনে দিয়েছে। আপনি কিভাবে সময় ব্যয় করবেন সেটাই কথা। রাজধানীর মানুষ কর্মজীবী। চাকরি, ব্যবসা এবং নানান পেশাগত কারণে যারা সন্তানদের সময় দিতে পারেন না, তারা এখন সন্তানদের কোয়ালিটি সময় দিতে পারেন। নিজে বই পড়তে ও লিখতে পারেন।
সন্তানদের চোখ মোবাইল গেম থেকে সরাতে তাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। ফেলে রাখা কাজগুলো করতে পারেন ঘরে বসেই। চাকরি ও ব্যবসার ব্যস্ততার কারণে যারা প্রাণপ্রিয় ছেলেমেয়েদের লেখাপাড়ার খোঁজ-খবর রাখতে পারেন না; তারা ছেলেমেয়েরা অংক, ইংরেজি কেমন বুঝে তার জন্য পড়াতে বাসতে পারেন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ সময় ইংরেজি ঝালাই করে নিতে পারেন।
এই ১০ দিন কম্পিউটারে প্রোগ্রামিংয়ের প্রাথমিক পর্ব শিখতে পারেন। মনিষীরা বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষ ‘সময় কাটানোর’ চেষ্টা করে। অসাধারণ মানুষ সময়কে ‘কাজে লাগানোর’ চেষ্টা করে’। আপনি যে পেশারই হোন নিজেকে অসাধারণ ভাবুন।
ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার চার্লস রিচার্ড বলেছেন, ‘ক্যালেন্ডার দেখে ধোঁকা খেও না। যে দিনগুলোকে তুমি কাজে লাগাও, সেগুলোই শুধু হিসাবে পড়ে। কেউ পুরো এক বছরে মাত্র এক সপ্তাহের কাজ করে। আর কেউবা মাত্র এক সপ্তাহে পুরো এক বছরের সমমূল্যের কাজ করে’।
বিচারপতি এবং নিম্ন আদালতের বিচারকদের কথা চিন্তা করুন। ১৭ কোটি মানুষের দেশে বিচারপতি, বিচারক, এবং আদালত স্বল্পতার কারণে লাখ লাখ মামলা পড়ে রয়েছে। তারা আদালতে ঘোষিত রায়ের পূর্ণাঙ্গ রায় এই সময় বাসায় লিখে নিজেদের ব্যস্ত রাখতে পারেন।
বিচারপতিদের অবসরে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ নিয়ে বিতর্কের কথা মনে আছে? সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল তথা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় ঘোষণা করেন। অতঃপর ১৬ মাস পর ২০১২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন।
আবার ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর আপিল বিভাগের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ১৬৯টি মামলার রায় ও আদেশ বাকি রেখে অবসরে যান। ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ৬৫টি আদেশ ও রায় জমা দেন। এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক উঠে।
করোনাভাইরাসের এই কোয়ারেন্টাইন সময়ে বিচারপতিরা নিজেদের দেয়া মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় লিখতে এই সময় ব্যয় করতে পারেন। যারা আইনজীবী কোটকাছারিতে ব্যস্ত সময় ব্যয় করায় নিজেদের সংগৃহীত লাইব্রেরিতে সাজিয়ে রাখা প্রয়োজনীয় বই পড়ার সময় পান না। তারা অনায়াসে এই সময় আইনের গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো পড়ে নিজেদের পেশাগত কাজে আরো সমৃদ্ধ করে তুলতে পারেন।
আমেরিকান সাবেক প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন বলেছিলেন, ‘সময়কে যদি ঠিকমত ব্যবহার করা যায়, তবে কেউই সময় নিয়ে অভিযোগ করবে না। তুমি যদি সময়কে ঠিকমত ব্যবহার করো, তবে কাজের পরিমাণ দেখে তুমি নিজেই অবাক হয়ে যাবে’। সত্যিই তাই। যারা বিভিন্ন সেক্টরে ব্যবসা করেন, শিল্পপতি ও কর্পোরেট ব্যবসা গড়ে তুলেছেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে অঘোষিত লকডাউনে ঘরবন্দি বিরক্তকর দিন অতিবাহিত না করে সময়কে কাজে লাগান। নিজের পুরনো ফাইলপত্রে চোখ বুলান। সময়কে উপভোগ করুন। বিখ্যাত আইরিশ লেখিকা মারিয়া এজগ্রোথ বলেছেন, ‘আমরা যদি সময়ের যত্ম নিই, তবে সময় আমাদের জীবনের যত্ম নেবে। অতএব সময়কে কাজে লাগানো অবশ্যক। কারণ আমেরিকান দার্শনিক মেসন কোলেই বলেছেন, ‘আগের নষ্ট করা সময়ের জন্য এখন আফসোস করলে, এখনকার সময়ও নষ্ট হবে’।
আর চার্লস ডারউইনের উপদেশ হলো, ‘যে লোক জীবনের একটি ঘণ্টা নষ্ট করার সাহস করে, সে আসলে জীবনের মূল্য এখনও বোঝেনি’। আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষ অবশ্যই জীবনের মূল্য বোঝেন। তাই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এখন কোয়ারেন্টাইনে ঘরে বিরক্তিকর সময় না কাটিয়ে জীবন এগিয়ে নিতে সময়কে কাজে লাগান।
মন্তব্য করুন