ঘরে বাইরে মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ চাটগাঁ নগরবাসী। টানা দশ দিনের ছুটিতে স্থবির সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন অভিযান। এতে করোনা মহামারীর সঙ্গে প্রাণঘাতী ডেঙ্গু আতঙ্কে বন্দর নগরীর ৭০ লাখ মানুষ।
অঘোষিত লকডাউনের মধ্যে মানুষ এখন কার্যত ঘরবন্দি। এ বন্দিদশার সাথে দিনে রাতে মশার
যন্ত্রণায় ত্যক্ত বিরক্ত মানুষ। খবর নিয়ে জানা যায় বস্তি থেকে শুরু করে অভিজাত আবাসিক এলাকা, বহুতল অ্যাপাটর্মেন্ট সব খানে মশার উপদ্রব চলছে সমান তালে। জালালাবাদ থেকে পতেঙ্গা, কাট্টলী থেকে বাকলিয়া সব এলাকায় মশার দাপটে অতিষ্ঠ মানুষের জীবন।
কোন কোন এলাকায় দিনের বেলায়ও মশারি টাঙিয়ে রাখতে হচ্ছে। ধূপ ধোঁয়া, কয়েল আর স্প্রে করোও মশার কামড় থেকে রেহাই মিলছে না।
এদিকে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী ওষুধ ‘এডালটিসাইড’ ছিটানো বন্ধ রেখেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ।
তবে নালা-নর্দমায় মশার ডিম বা লার্ভা ধ্বংসকারী ‘লার্ভিসাইড’ ছিটানো অব্যাহত রয়েছে বলেজানান করপোরেশনের
কর্মকর্তরা।
নগরবাসীর অভিযোগ মশক নিধন অভিযান বলতে গেলে বন্ধ। এমনকি খাল নালা পরিস্কার করতেও দেখা যায় না।
এতে নগরজুড়ে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। মশক নিধন কার্যক্রম বন্ধ থাকলে ঘনিয়ে আসা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও শংকা প্রকাশ করছেন অনেকে।
বিভিন্ন নালা-নর্দমায় কিলবিল করছে মশার লার্ভা এবং পূর্ণাঙ্গ মশা। নগরীর পানিবদ্ধতা নিরসনে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে বেশ কয়েকটি খালের মুখ বন্ধ আছে। এতে পানি চলাচল বন্ধ থাকায় স্থির হয়ে আছে। জমে থাকা বা আবদ্ধ পানিতেই জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা। বিভিন্ন ওয়ার্ডেও চলমান নালা-নর্দমার সংস্কার কাজ চলছে ধীরগতিতে। ফলে সেখানেও স্থির পানির কারণে বাড়ছে মশার উপদ্রব।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরাও বলছে ভ্যাপসা গুমোট গরমে এডিস মশার উৎপাদনের সময়। এ সময় ভয়ঙ্কর এ মশার লার্ভা জন্ম নেয়। তাই এখন থেকে মশক নিধন অভিযান জোরদার করা না হলে শহরজুড়ে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।
ড কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মশার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়। এখন শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় নালা-নর্দমায় জমাট হয়ে আছে পানি। সেখানে ডিম ছাড়ছে ‘ফাইলেরিয়া’সহ বিভিন্ন রোগের রোগের বাহক মশা। তাই এসময়টাতে মশার লার্ভা ধ্বংসকারী ওষুধ ছিটানোর উপর জোর দিতে হবে।
করপোরেশনের একটি সূত্র জানায়,
এক মাস আগে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনায় মন্ত্রণালয়ে ২০ কোটি টাকার অর্থ সহায়তা চেয়েছিল চসিক। মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া বরাদ্দের বাইরেও মশক নিধনে চলতি অর্থ বছরে (২০১৯-২০১০) নিজেদের বাজেটে ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মশক নিধনে ‘এডালটিসাইড’ (পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী) এবং ‘লার্ভিসাইড’ (ডিম ধ্বংসকারী) নামে দুই ধরনের ওষুধ ছিটানো হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পর ‘এডালটিসাইড’ ছিটানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় চসিক। এডালটিসাইড ছিটানো হয় ফগার মেশিন দিয়ে। এতে এক ধরনের ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এই ওষুধ ছিটানোর ফলে মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে এবং এতে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এমন ধারণা থেকেই ওষুধটি ছিটানো বন্ধ রাখা হয়েছে।
গতবছর সারাদেশে প্রকোপ বাড়ে ডেঙ্গুর। চট্টগ্রামেও আড়াই হাজারের অধিক ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। মারা গেছেন কয়েকজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন