শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মহামারীতে মুমিনের ভয় নেই

মুফতি আবু আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

বিশ্বায়নের যুগে পৃথিবী অনেক দূর এগিয়েছে। বিজ্ঞানের আশির্বাদে বিশ্ব আজ ছুটে চলেছে দুর্দমনীয় গতিতে। তাই বলে এটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই যে, মানুষ অসীম শক্তির অধিকারী হয়ে গেছে। মানুষ আল্লাহর এক ক্ষুদ্র সৃষ্টি মাত্র।

মানুষ ঠিক ততটুকুই জানতে পারে, যতটুকু আল্লাহ তাদের জানান। মানুষ ততটুকু শক্তিই প্রয়োগ করতে পারে, যতটুকু শক্তি আল্লাহ দান করেন। এর বাইরে মানুষের বিন্দু পরিমাণ কোনো ক্ষমতা নেই। বর্তমান পৃথিবীর পরিস্থিতি আমাদের সেই জিনিসটিই আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। ‘করোনা’ নামের নতুন একটি ভাইরাস এসে আমাদের সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এই ভাইরাসে এ পর্যন্ত বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এই ভাইরাস প্রথমে চীনে মহামারী আকার ধারণ করার পর এখন বিশ্বের অনেক দেশেই মহামারীরূপে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও ‘করোনা’য় মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, এই রোগের কোনো প্রতিষেধক এখনো তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

কিছুদিন পর পর নতুন নতুন রোগ-ব্যাধি ও ভাইরাস এসে এ বিষয়টি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা যত উন্নতিই করি, মহান আল্লাহর রহমত ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। এ কারণেই আমাদের উচিত, আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করা এবং সব পাপ থেকে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা। কারণ আমাদের পাপের কারণেই আমাদের ওপর বিভিন্ন আজাব নেমে আসে।

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০১৯)।

সার্স বা ইবোলার মতোই প্রাণঘাতী ভাইরাস হলো এই ‘করোনা’ ভাইরাস। তবে বাস্তবতা হলো এটি সার্স বা ইবোলার চেয়েও অনেক বেশি বিপজ্জনক। করোনাভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি শরীরে ছড়ায়।

এই ভাইরাস এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে দেখা যায়নি। তবে ২০০২ সালে চীনে সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামের একটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল, যাতে সংক্রমিত হয়েছিল ৮ হাজার ৯৮ জন। মারা গিয়েছিল ৭৭৪ জন। সেটিও ছিল এক ধরনের ভাইরাস। করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলো হলো কাশি, জ্বর, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, নিউমোনিয়া।

এই মুহূর্তে আমাদের সবার উচিত, মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকা, সর্বদা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকা। কারণ কিয়ামতের নিদর্শনগুলোর একটি হলো মহামারী।

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো। আমার মৃত্যু, অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, অতঃপর তোমাদের মধ্যে ঘটবে মহামারী, বকরির পালের মহামারীর মতো, সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যক্তিকে একশ’ দিনার দেওয়ার পরও সে অসন্তুষ্ট থাকবে। অতঃপর এমন এক ফিতনা আসবে, যা আরবের প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করবে। অতঃপর যুদ্ধবিরতির চুক্তি, যা তোমাদের ও বনি আসফার বা রোমকদের মধ্যে সম্পাদিত হবে। অতঃপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং ৮০টি পতাকা উড়িয়ে তোমাদের বিপক্ষে আসবে; প্রতিটি পতাকার নিচে থাকবে ১২ হাজার সৈন্য। (বুখারি, হাদিস : ৩১৭৬)।

হাদিসের ভাষ্যের সঙ্গে আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি অনেকাংশেই মিলে যায়। বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে প্রাচুর্য বেড়েই চলছে। নতুন নতুন রোগ আত্মপ্রকাশ করছে। এগুলো বন্ধ করার সাধ্য কারো নেই। তবে এই পরিস্থিতিতে আমরা রাসূল (সা.)-এর দেখানো পথ অনুসরণ করতে পারি।

মহামারী মূলত আল্লাহর গজব। মহামারী প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এটি আল্লাহর গজব বা শাস্তি বনি ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর ওপর এসেছিল, তার বাকি অংশই হচ্ছে মহামারী। অতএব, কোথাও মহামারী দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৬৫)।

তাই আমাদের উচিত, যেখানে এ ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা দেবে, সেখানে যাতায়াত থেকে বিরত থাকা। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ সরকারিভাবে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে যাতায়াতে সতর্কতা জারি করেছে। যেহেতু চিকিৎসকদের মতে এ ভাইরাসটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণত ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো তীব্র নিউমোনিয়া সিনড্রোমের মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায়।

মহামারী আল্লাহর গজব হলেও এতে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিকে পাপী-জাহান্নামি মনে করা যাবে না। রাসূল (সা.)-এর ভাষায় মহামারীতে মারা যাওয়া ব্যক্তিও শহীদ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, পাঁচ প্রকার মৃত শহীদ: মহামারীতে মৃত, পেটের পীড়ায় মৃত, পানিতে ডুবে মৃত, ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়ে মৃত এবং যে আল্লাহর পথে শহীদ হলো। (বুখারি, হাদিস : ২৮২৯)।

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, মহামারীতে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত। (বুখারি, হাদিস : ২৮৩০)। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবে ‘বিসমিল্লা-হিল্লাজী লা ইয়াদ্বুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস সামা-ই, ওয়াহুয়াস সামী‘উল আলীম’, অর্থ : ‘আল্লাহর নামে যাঁর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী’; সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮৮)। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব ধরনের মহামারী ও গুনাহ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
Sadik Mehedi ৩১ মার্চ, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 2
আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান।অবশ্যই তিনি আমাদের মাফ করিবেন।
Total Reply(0)
Md Shahin Akon ৩১ মার্চ, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 1
ইনশাআল্লাহ! ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরুন,তওবা করুন, রহমত করার মালিক আল্লাহ
Total Reply(0)
Abir Islam ৩১ মার্চ, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 2
অবশ্যই আল্লাহ মুসলিমদের সাহায্য করবেন
Total Reply(0)
সাজিদ সাজিদ ৩১ মার্চ, ২০২০, ১:২৬ এএম says : 2
আল্লাহ তুমি আমাদের ক্ষমা কর,,এবং এই রোগকে তুমি বিশ্বথেকে তুলে নাও।।
Total Reply(0)
Janvir Mim ৩১ মার্চ, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 1
তওবার এই দোয়াটা সবাই মুখস্ত করে নিবেন যেই দোয়া পড়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাওবা করতেন ও আমাদেরকে পড়তে বলছেনঃ : ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ ﺍﻟﻌَﻈِﻴْﻢَ ﺍﻟَّﺬِﻯْ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺤَﻲُّ ﺍﻟْﻘَﻴُّﻮْﻡُ ﻭَﺃَﺗُﻮﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ উচ্চারণঃ আসতাগফিরুল্লা-হাল আ’যীমাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতুবু ইলাইহি। অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ছাড়া ইবাদতের আর কোন যোগ্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। আমি তাঁর কাছে তাওবা করছি। : রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যেই ব্যক্তি এই দোয়া পড়বে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী হয়”। (অর্থাৎ, সে যদি বড় রকমের গুনাহগার হয়, তবুও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন।) তিরমিযী ৪/৬৯, আবুদাঊদ ২/৮৫, মিশকাত হা/২৩৫৩, [ নিজে আমল করুন এবং অন্যদের সুযোগ করে দিন ]
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ৩১ মার্চ, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 1
আল্লাহুর দরবা‌রে শুক‌রিয়া জানাই আমা‌দের দেশ ক‌রোনার আক্রান্ত দিক দি‌য়ে ভা‌লোআ‌ছি। আ‌রো ভা‌লো থাক‌বো আম‌া‌দের আ‌রো একটু স‌চেতন হ‌তে হ‌বে। নিয়ম কানুন গু‌লো মেনে চলা।
Total Reply(0)
Mirza Hassan ৩১ মার্চ, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 1
একেই বলে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। সারা জীবন পৃথিবীর সব দূর্বল দেশের নিরিহ মানুষ কে হত্যা করার জন্য কতনা মারাত্মক ধরনের সব মানব বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করে সেই সব তাদের উপর কখনো নিজেরাই আবার কখনও অন্য কে দিয়ে প্রয়োগ করেছে। আজকে যখন নিজের দেশের মানুষ কে বাঁচাতে চাচ্ছে তখন একটি কথাই বারবার মনে হচ্ছে যদি এরা এদের সমস্ত মেধা ও সক্ষমতা কে মানব কল্যাণে কাজে লাগাতো, যদি অস্ত্র ব্যবসার মতো নোংরা খেলায় না মেতে তাদের সমস্ত টেকনোলজি এবং অর্থনৈতিক শক্তি কে মানবকল্যাণের কাজে লাগাত তাহলে আজকে নিজেদের এই অসহায় অবস্থার মধ্যে পরতে হতো না। Revenge of nature বলে একটা কথা আছে। এর মুখোমুখি সকল অন্যায়কারিকে একদিন হতেই হবে ,সে যত‌ই শক্তিশালী হ‌উক না কেন , এর থেকে কারও নিস্তার নাই। But they plan, and Allah plans. And Allah is the best of planners. * Sura-Al Imran(3:54). মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর কাছে এই দোয়া করি জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকল মানব সম্প্রদায়কে মাফ করে দিন এবং এই চরম দূর্যোগের হাত থেকে আমাদের সকলকে রক্ষা করুন।
Total Reply(0)
Anwar ৩১ মার্চ, ২০২০, ১১:৩১ এএম says : 0
আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান।অবশ্যই তিনি আমাদের মাফ করিবেন।ﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ ﺍﻟﻌَﻈِﻴْﻢَ ﺍﻟَّﺬِﻯْ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺤَﻲُّ ﺍﻟْﻘَﻴُّﻮْﻡُ ﻭَﺃَﺗُﻮﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ
Total Reply(0)
ahmed hossain khan ৩১ মার্চ, ২০২০, ১:২৭ পিএম says : 0
wama taofiqee illah billah alihi tawakkalto wa ilaihi uneeb
Total Reply(0)
ahmed hossain khan ৩১ মার্চ, ২০২০, ১:২৭ পিএম says : 0
wama taofiqee illah billah alihi tawakkalto wa ilaihi uneeb
Total Reply(0)
MD. HAMIDUZZAMAN ৩১ মার্চ, ২০২০, ২:৪৯ পিএম says : 0
আল্লাহ সর্বশক্তিমান, এবং তাঁর উপরই একমাত্র আমাদের ভরসা।
Total Reply(0)
ইউসুফ ১০ জুলাই, ২০২০, ৫:০২ পিএম says : 0
৩১ মার্চ, ২০২০, ১:২৬ এএম says : 20 আল্লাহ তুমি আমাদের ক্ষমা কর,,এবং এই রোগকে তুমি বিশ্বথেকে তুলে নাও।।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন