বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ঝালকাঠিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয় দেখিয়ে চাঁদাদাবি

তিনজনের নামে চাঁদাবাজি মামলা

ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০২০, ৪:৩৪ পিএম

ঝালকাঠিতে করোনা পরিস্থিতিতে মুরগির দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয় দেখিয়ে পাঁচহাজার টাকা চাঁদা দাবি ও জোরপূর্বক আঠারশত টাকা আদায় করার অভিযোগে কথিত তিন সাংবাদিকের নামে ঝালকাঠি থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের হয়েছে। মুরগির দোকানের মালিক কামাল হোসেন বাদি হয়ে মঙ্গলবার রাতে এ মামলা দায়ের করেন। ঝালকাঠি থানার মামলা নং ৩০ তারিখ ৩১/০৩/২০২০ ধারা: ৩৮৫/৩৮৬/৫০৬ দÐবিধি। মামলার আসামীরা হলেন আমাদের বরিশাল পত্রিকার ঝালকাঠি প্রতিনিধি বশির আহম্মেদ খলিফা, মোহনা টিভি ও আলোকিত বাংলাদেশের প্রতিনিধি রুহুল আমিন রুবেল মুহুরী এবং বরিশাল থেকে প্রকাশিত আজকের পরিবর্তন ও দখিনের খবর প্রতিনিধি রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু। মামলার বিবরনে জানা যায়, শহরের কাটপট্রি ট্রলারঘাট এলাকায় পোল্ট্রি মুরগির ব্যবসা করেন মোঃ কামাল হোসেন। তিনি গত ২৭ মার্চ কর্মচারী সুমন ও আরিফকে দোকানে রেখে তার খামার দেখা শোনার জন্য নেছারাবাদ উপজেলার কুড়িয়ানা যান। ওই দিন সকাল ১১টার দিকে সাংবাদিক পরিচয়দিয়ে মোঃ বশির উদ্দিন খলিফা, মোঃ রুহুল আমিন রুবেল ও মোঃ রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু দোকানের কর্মচারী সুমনের কাছে দোকান কেন খোলা রেখেছে জানতে চায় এবং বলে করোনা ভাইরাসের কারনে ছুটিতে দোকান বন্ধরাখার কথা তোমরা দোকান খোলা রেখে মারাত্মক অন্যায় করেছো। এখন আমরা মোবাইল কোট খবর দিয়ে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করাইবো। তখন কর্মচারী সুমন ও আরিফ অনুনয়-বিনয় ও হাত পা ধরলে ১নং আসামী বশির খলিফা বলে যে, আমাদের পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিলে তোমাদের রক্ষা করতে পারি টাকা না দিলে এখনই মোবাইল কোট ও পুলিশ খবর দেব। আসামীদের এরুপ হুমকিতে সুমন ও আরিফ ভয় পাইয়া দোকানের ক্যাশে থাকা ১৮০০ টাকা ১নং আসামী বশির খলিফার হাতে তুলে দেয়। বশির টাকা হাতে পেয়ে ২নং আসামী রুবেলের হাতে দিয়া বলে টাকা গুনিয়া দেখ তখন রুবেলে টাকা গুনিয়া দেখিয়া ৩নং আসামী বাচ্চুকে বলে এই ১৮০০টাকা তোর কাছে জমা রাখ, পরে ভাগ করবো। আসামী বাচ্চু উক্ত টাকা পূনরায় গুনিয়া তার প্যান্টের ডান পকেটে রাখে। তখন ২নং আসামী রুবেল সুমন ও আরিফকে হুমকি দিয়া বলে চাঁদার বাকী ৩২০০ টাকা রেডি রাখবি ২/৩ দিন পর আবার আসিয়া নিয়া যাব। আর এই ঘটনা কাউকে জানাইলে এর পরের বার ম্যাজেস্ট্রেট সাথে নিয়া আসমু। এ ঘটনার দুইদিন পর উল্লিখিত তিন কথিত সাংবাদিক গত ৩০ মার্চ দুপুর বারটার দিকে চাাঁদার অবশিস্ট ৩২শ টাকা আনতে গেলে দোকানের কর্মচারীদের ডাক চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে বশির, রুবেল ও বাচ্চুকে গনপিটুনি ও জুতাপেটা করে। উল্লেখ্য শুধু মুরগীর দোকান নয় এই তিনজনসহ ৬/৭ জনের একটি চাঁদাবাজ গ্রæফ সাংবাদিক এবং মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। গত রোববার বশির, রুবেল, বাচ্চু, বাবুল মিনা, নুরুজ্জামান ও মাসুম এই ছয়জন মিলে বিভিন্ন ইটভাটায় গিয়ে মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করে। আগরবাড়ি এনটিসি ব্রিক ফিল্ড থেকে তারা চারহাজার এবং বাউকাঠি এমএসই ব্রিকফিল্ড থেকে দুইহাজার টাকা আনতে সক্ষম হয়। দেশে করোনাভাইরাস আতংক চলাকালে এরা বিদেশ ফেরত ব্যাক্তিদের বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে বেশ কয়েক জনের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়। মাস দুয়েক আগে রুবেল, বশির ও পিন্টু গ্রæফ সদর চৌমাথার পুস্তক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে ত্রিশ হাজার টাকা নেয়। গত বছর ঝালকাঠি জেলা আইনজীবী সমিতির ক্যান্টিনের মালিক ফিরোজের কাছে মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। ফিরোজ সাতশত টাকা দিয়ে রুবেলের হাত থেকে রক্ষা পায়। ডিসি অফিসের সামনে হোটেলের মালিক আনোয়ার মেম্বর বকেয়া টাকা চাওয়ায় রুবেল তাকে মোবাইল কোর্টের ভয় দেখায়। পনেরদিন আগে ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোস্তফা কামালের স্ত্রী জেসমিন বেগম পোস্ট অফিসে টাকা তুলতে গেলে তার কাছ থেকে পনেরশত টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতিদিন এসব চাদাবাজ প্রতারকরা কাউকে না কাউকে হয়রানী করলেও বেশিরভাগ লোকই মামলা মোকদ্দমা করতে চায় না। গত বছর মার্চ মাসে রুবেল বশিরের নেতৃত্বে চার পাঁচজনের একটি দল ঝালকাঠির বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকদের কাছে চাঁদাদাবি করে। চরভাটারাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমারের কাছ থেকে রুবেল বশির ত্রিশ হাজার টাকা আনে। টাকা আনার সময় স্থানীয় লোকজন ভিডিও করে রাখে। এ ব্যাপারে উত্তম কুমার ঝালকাঠি থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ তদন্ত করে রুবেল এবং বশিরের নামে আদালতে ৩৮৫/৩৮৬ ধারায় চার্জশিট দাখিল করে। চাজশিট দাখিলের পর রাজনৈতিক দলের নেতাদের হস্তক্ষেপে বাদি উত্তম কুমার আপোষ করতে বাধ্য হন। রুবেল বশির উত্তম কুমারের ত্রিশ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে হাজতবাস থেকে রক্ষা পায়। একই সময় ৩/৩৫ জন শিক্ষক পুলিশ সুপার বরাবরে ওদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিলেও তার তদন্তে আর কোন অগ্রগতি হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন