বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তব্য

| প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ নিয়ে সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে এর প্রাদুর্ভাব এখনো অনেক কম। এ অবস্থা বজায় রেখে এই বৈশ্বিক মহামারী মোকাবিলায় সরকারকে তাৎক্ষণিক, স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার দেশের জেলা প্রশাসকদের সাথে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে সম্ভাব্য সবকিছুই উঠে এসেছে। উদ্ভুত পরিস্থিতি, সামগ্রিক বাস্তবতা এবং আগামীর সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সংকট অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতে পারে। তবে যথাযথ ত্বরিৎ পদক্ষেপ এবং মাঠ পর্যায়ে কার্যকর বাস্তবায়নই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। করোনাভাইরাস নিয়ে সারাবিশ্বে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং নানাবিধ ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। করোনাসৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে চরম মানসিক চাপে পড়ে জার্মানির একজন মন্ত্রীর আত্মহত্যার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী ছুটি, লকডাউন এবং দরিদ্র মানুষের নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর চিন্তার কেন্দ্রভূমিতে মানুষের অবস্থান যে শক্ত ও দৃঢ়, তার কারবার যে মূলত মানুষ নিয়ে তা তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। বৈশ্বিক দুর্যোগকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রজ্ঞাপূর্ণ নির্দেশনা এবং অভয় বাণী প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা ও মনোবল দৃঢ় করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে বহুমাত্রিক বিষয় উঠে এসেছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলার প্রয়োজনীয়তা, এর ব্যত্যয়সমূহ, আগামী নববর্ষের অনুষ্ঠানাদি পরিহারের ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা, দরিদ্র মানুষের জীবন-জীবিকা,সর্বোপরি সরকারের গৃহীত খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়নে যে কোনো দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে শাটডাউন ও সোশ্যাল ডিসটেন্সিং পলিসি বিকল্পহীন কার্যকর পন্থা হিসেবে বিশ্বব্যাপী গৃহীত ও প্রমাণিত। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কোনো কোনো দেশে কার্ফিউ, জেল-জরিমানাসহ নানাবিধ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে সব মানুষকে ঘরবন্দি করা প্রায় অসম্ভব। এহেন বাস্তবতায় কিছুটা শিথিল ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষকে অসচেতনভাবে এবং অপ্রয়োজনে বাইরে ঘুরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে। সরকারি হিসাবে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার খুব বিপজ্জনক পর্যায়ে উপনীত না হলেও ইতোমধ্যে সংক্রমণ তৃতীয় ধাপ তথা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন পর্যায়ে উপনীত হওয়ার খবর খুবই উদ্বেগজনক। এর মানে হচ্ছে, অনিদির্ষ্ট উৎস থেকেও করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের বাস্তবতায় স্বাস্থ্যবিধিসহ কয়েক সপ্তাহের লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা মেনে চলার বিকল্প নেই। কিছু মানুষের অসচেতনতা এবং বেপরোয়া মনোভাব সরকারের সব উদ্যোগ ব্যর্থ করে দিতে পারে। কিছু অসচেতন মানুষের কারণে দেশের কোটি কোটি মানুষকে প্রাণঘাতী মহামারীর ঝুঁকিতে ঠেলে দেয়ার আশঙ্কা কঠোরভাবে রোধ করতে হবে।

পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নজরদারীর মধ্যে শহরের অধিকাংশ মানুষ স্বতপ্রণোদিত হয়ে ঘরবন্দি হয়ে আছে। তবে দরিদ্র, দিনমজুর, রিকশাচালক ও ছিন্নমূল মানুষদের একটি অংশের জীবীকার প্রয়োজনে রাস্তায় বেরিয়ে আসা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। তাদেরকে ঘরে রাখতে এবং সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য করতে হলে প্রথমেই তাদের খাদ্যসহ জীবনধারণের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে। ছুটির সময়বৃদ্ধি এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে দেশব্যাপী সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে কাজ করছে তা প্রশংসীয়। পাশাপাশি দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য ও অর্থ সহায়তার সঠিক, স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত বিলি বণ্টনে সম্ভাব্য অস্বচ্ছতা, বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতি রোধ করতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগাতে হবে। আগামী কয়েক সপ্তাহকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে জটিল ও সঙ্কটময় সময় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সেই সাথে বাংলাদেশে মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এ বিষয়েও নির্দেশনা পাওয়া গেছে। করোনাভাইরাসের পাশাপাশি ডেঙ্গু মশা দমনে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে কঠোর ও কার্যকর সমন্বিত পদক্ষেপ এখনই শুরু করতে হবে। করোনাভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিকভাবে শত শত বিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ গ্রহণ করা হচ্ছে। জনবহুল উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য এসব তহবিলের প্রাপ্য অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে শক্ত লবিং এবং কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। তবে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণসহ সম্ভাব্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, সামাজিক দূরত্ব এবং দরিদ্র মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি বিষয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন