শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দুই কোটি দিনমজুর কর্মহীন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০০ এএম

সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে কাজ শেষে উপার্জিত অর্থ দিয়ে পরিবারের নিত্যপ্রয়োজন মেটানো। পরের দিন আবার কাজের সন্ধানে বের হওয়া। এই জীবনচক্রের মধ্যে থাকা শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা দেশে প্রায় দুই কোটি; যাদের নেই কোনো সঞ্চয়। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রথম আঘাত তাদের ওপরই এসেছে। কয়েক দিন ধরে কর্মহীন জীবন পার করছেন নিম্ন আয়ের এসব মানুষ।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি চলছে। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। সবকিছু থমকে থাকায় কাজে বের হতে পারছেন না কুলি-মুটে, নির্মাণ ও আবাসন শ্রমিকসহ সব ধরনের দিনমজুর।

দেশে মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত। এ খাতের বড় অংশই দৈনিক, চুক্তিভিত্তিক মজুরি এবং নিয়োগপত্র ছাড়াই কাজ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শ্রমিক কাজ করছেন মুদি কিংবা বিভিন্ন দোকানে। এর পাশাপাশি পরিবহন, বন্দর, নির্মাণ ও আবাসন এবং হাটবাজার শ্রমিক রয়েছেন। সব মিলিয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কাজ করেন প্রায় দুই কোটি শ্রমিক, যারা এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদ বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। এ অবস্থায় নিম্ন আয় ও খেটে হাওয়া মানুষ যাদের কি না সঞ্চয় নেই, তাদের অবস্থা শোচনীয়। এ অবস্থা কতদিন চলবে কেউ জানে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশে প্রায় ২ কোটি ৪২ লাখ মজুরি ও বেতনভোগী শ্রমিক রয়েছেন। এর মধ্যে দৈনিক ভিত্তিতে মজুরি পান প্রায় ৮৩ লাখ ৩২ হাজার শ্রমিক। এছাড়া সাপ্তাহিক মজুরি পান ১৭ লাখ ৭২ হাজার শ্রমিক। সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি ১ লাখ শ্রমিক দৈনিক কিংবা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে মজুরি নিয়ে থাকেন। তবে এ তালিকায় আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত কিংবা পারিবারিক অর্থায়নে হেলপার হিসেবে যারা আছেন, তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অন্যদিকে কৃষিখাতে প্রায় ৭২ লাখ ৯২ হাজার শ্রমিক রয়েছেন।
এ ছাড়াও বিবিএসের ‘রিপোর্ট অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল স্ট্যাটিসটিকস ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৯২ হাজারের বেশি মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ৮৭ লাখ ৬৫ হাজার ১০৭ জন বা প্রায় ৩৫ দশমিক ৯০ শতাংশই পারিবারিক হেলপার। এছাড়া স্বকর্মসংস্থান হয়েছে ৮১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৭ জনের বা প্রায় ৩৩ দশমিক ৫২ শতাংশের। আর কৃষিশ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন ৭২ লাখ ৯১ হাজার ৮৪০ জন। এছাড়া অন্যান্যভাবে নিয়োজিত রয়েছেন ১ লাখ ৬৮ হাজার শ্রমিক।

নির্মাণ শ্রমিকদের মধ্যে রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, রডমিস্ত্রি, সুপারভাইজার, টেকনিশিয়ান, ইলেকট্রিশিয়ান, মেশিন অপারেটর ও হেলপার কিংবা শাটার মিস্ত্রিরা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে তাদের প্রায় সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ বা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এ খাতে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। বিবিএসের তথ্যমতে, দেশের খুচরা ও পাইকারি পণ্যের দোকান এবং মোটর মেরামত খাতে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ৮৬ লাখ ৫৫ হাজার শ্রমিক। তাদের সিংহভাগই দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কাজ করেন। এর মধ্যে মুদি, চায়ের দোকান ও মোটর শ্রমিক বেশি। ২০১৮ সালে দেশে মুদি দোকানের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৫৮ হাজার ৮১৬টি। এসব দোকানে কাজ করেন প্রায় ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৩৭০ জন মানুষ। এছাড়া প্রায় ৪ লাখ ৯১ হাজার ২৭৯টি চায়ের দোকানে কাজ করছেন প্রায় ১০ লাখ ৭৮ হাজার জন। অন্যদিকে দেশে প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার তালিকাভুক্ত ফার্মেসি রয়েছে। এর বাইরে ছোট ও মাঝারি দোকান সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। গড়ে দু’জন করে ধরলে দুই লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করে থাকেন এসব ফার্মেসিতে। স্বল্প পরিসরে খোলা থাকায় এ খাতের অর্ধেক বেকার হয়েছেন।
২৬ হাজারের বেশি বাস-মিনিবাস, ১ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি ট্র্যাক-পিকআপ ছাড়াও রাইডশেয়ারের মাধ্যমে পরিবহন শ্রমিকরা কাজ করছেন। পাশাপাশি টিকিট কাউন্টার পরিচালনা, রুট পরিচালনাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন তারা। পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের হিসাবে, সারা দেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত পরিবহন শ্রমিকের সংখ্যা ৫২ লাখের বেশি। আবার বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রায় ১২টি স্থলবন্দর চালু রয়েছে। এসব বন্দরে প্রত্যক্ষভাবে ৩০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করছেন। তবে পরোক্ষভাবে কাজ করছেন আরো প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক। পরিবহন ও বন্দরগুলো বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শ্রমিকের জীবন-জীবিকায় নেমে এসেছে অন্ধকার।

জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, সরকার কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষের খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য কাজ করছে। সারা দেশে শহর ও গ্রামে ভিক্ষুক, ভবঘুরে, দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানগাড়ি চালক, পরিবহন শ্রমিক, রেস্তোরাঁ শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদারসহ সংশ্লিষ্টদের তালিকা তৈরি করে সহায়তা করতে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে খাদ্য ও নগদ সহায়তা পাঠানো হয়েছে। খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ডিসিদের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হলে আশা করছি কেউ সহায়তার বাইরে থাকবেন না।

এদিকে গরিব-দুঃখী-অভাবী মানুষকে সহায়তার জন্য সমাজের বৃত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এলডিপির সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস সঙ্কট শ্রমজীবী ও গরিব-দুঃখী মানুষকে অসহায় ফেলে দিয়েছে। গরিব-দুঃখী-অভাবী মানুষের জন্য এ সঙ্কটময় মুহূর্তে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ সঙ্কটে সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষ ও সামাজিক গঠনগুলো গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ান। গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান। ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ এক বিবৃতিতে করোনাভাইরাসের সঙ্কটকালীন মুহূর্তে সমাজের ধনী বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ ও ইসলামী ঐক্যজোট নেতাকর্মীদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে খেটে খাওয়া কর্মহীন দিনমজুর অসহায় মানুষের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানান। ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ গতকাল কোতয়ালী, কামরাঙ্গীরচর, ওয়ারী ও খিলগাঁও থানার বিভিন্ন এলাকায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে। এসময় নেতৃবৃন্দ বলেন, অসহায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ মুহুর্তে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালী ও সাহায্য সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Poverty! ২ এপ্রিল, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
More than 113 million Bangladeshi people have been lifted out of poverty since 2000, living on the equivalent of US$0.90 or less per day. Poor people are becoming more poorer day by day for few reasons.
Total Reply(0)
শওকত আকবর ২ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
এদের জন্য সবাই এগিয়ে আসুন।সত্যি এরা খুব অমানবিক জীবন যাপন করছে।আমি একজন ডেকোরেটরে কাজ করা দিনমজুর গত ১৮ই মার্চ থেকে কাজ বন্ধ।কারন বিয়েসাদিসহ সব ধরনের অনূস্ঠানাদী বন্ধ রয়েছে।এভাবে বন্ধ থাকলে আমাদের হবে মরন দশা।
Total Reply(0)
কামরুল ২ এপ্রিল, ২০২০, ১২:১৫ পিএম says : 0
আমি একজন নির্মান শ্রমিক। আমাদের সংস্থা গত ২৫মার্চ থেকে কাজ বন্ধ রাখছে। সরকারের দেওয়া সাধারণ ছুটি যতদিন চলবে ততদিন বন্ধ থাকবে। ফলে আমি কর্মহীন। দেশের ধনীক শ্রেণির যারা তারা প্রত্যেকেউ খাদ্য মজুত করেছে। করতে পারেন নাই আমার মতো নিম্নবর্গের মানুষেরা।এখন আমাদের কাছে একটা টাকাও নাই যে খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করব। সুতরাং বলা যায় আমরা করোনায় মরবো না,মরবো খাবারের অভাবে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন