নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপদের বেশ ঝুঁকি ও শঙ্কা থাকবে এপ্রিল ও মে মাসজুড়েই। বৈরী হয়ে উঠবে আবহাওয়ার মতিগতি। এ দুই মাসে ঘূর্ণিঝড়, ঘন ঘন কালবৈশাখী ঝড়, তাপদাহ, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। এখন ঢাকাসহ দেশের বেশিরভাগ জেলায় তাপপ্রবাহ বইছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে চৈত্রের খরার দহন। নদ-নদী, খাল-বিল, হাওড়ের পানি দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। ফল-ফসলের আবাদ ও উৎপাদনের জন্য সেচের পানি সঙ্কট দেখা দেবে শিগগিরই। তাছাড়া বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে ভুগবে মানুষ। বাড়বে রোগভোগ।
এপ্রিলের পূর্বাভাস :
করোনাভাইরাস মহামারী সংক্রমণের বৈশি^ক দুর্যোগ পরিস্থিতির মাঝেই চলতি এপ্রিল (চৈত্র-বৈশাখ) মাসজুড়ে বাংলাদেশে কয়েক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। গতকাল বুধবার বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় সতর্ক করা হয়, এপ্রিলে বঙ্গোপসাগরে ১ বা ২টি নি¤œচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হতে পারে।
তাছাড়া এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম এবং ঢাকা বিভাগসহ মধ্যাঞ্চলে ২ থেকে ৩ দিন ঝড়সহ বজ্রপাত, বজ্রবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি এবং মাঝারি থেকে তীব্র কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানতে পারে। দেশের অন্যত্র ৪ থেকে ৬ দিন বজ্রবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে।
চলতি মাসে দেশের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র ও মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তীব্র তাপদাহে পারদ উঠতে পারে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এর সংলগ্ল ভারতীয় অংশে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (সিলেট ও হাওড় এলাকায়) কয়েক স্থানে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা আছে।
এ মাসে সারাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে গেল মার্চ মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৬০ শতাংশ কম বৃষ্টি ঝরে। মার্চে বিভাগওয়ারি বৃষ্টিপাতে ছিল গড়মিল। চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাভাবিকের তুলনায় ৯১ ভাগই কম বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় হয় ৫৬.৬ ভাগ কম। আর রংপুর বিভাগে ৬.৩ ভাগ বেশি বর্ষণ হয়েছে।
এরআগে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সারাদেশে গড়ে বৃষ্টিপাত হয় ৮৩ ভাগ কম। অথচ জানুয়ারিতে ২২০ শতাংশ বেশি বর্ষণ হয়।
দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদানের লক্ষ্যে গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ।
এদিকে গতকালও দেশের অধিকাংশ অঞ্চলের উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে চলে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী, পাবনা, নোয়াখালী, রাঙ্গামাটি, সীতাকু- অঞ্চলে চলমান তাপদাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে স্থানভেদে ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মংলায় ছিল ৩৭.৮ ডিগ্রি সে.। ঢাকায় পারদ ৩৬ সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ ২১.৮ ডিগ্রি সে.। আগামী সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
মে মাসের পূর্বাভাস-
আগামী মে মাসের (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আবহাওয়া দফতর জানায়, মে মাসে সারাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ সময় বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্য থেকে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
মে মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও ঢাকা বিভাগসহ মধ্যাঞ্চলে ২ থেকে ৩ দিন মাঝারি থেকে তীব্র আকাওে বজ্রঝড়, কালবৈশাখী ঝড় সংঘটিত হতে পারে। এ সময় দেশের অন্যত্র ৩ থেকে ৪ দিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় কিংবা কালবৈশাখী ঝড় সংঘটিত হতে পারে। মে মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১ থেকে ২টি তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তখন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সে. এমনকি তারচেয়েও বেশি অতিক্রম করতে পারে। তাছাড়া দেশের অন্যত্র ২ থেকে ৩টি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সে.) থেকে মাঝারী ধরনের (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
এদিকে বঙ্গোপসাগর বর্তমানে শান্ত স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো সতর্ক সঙ্কেতও নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন