বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সিলেটে করোনা সংকটে খাদ্য সহায়তায় ডিজিটাল পদক্ষেপ জরুরী

অরক্ষিত ব্যবস্থায় খাদ্য বিতরণে ঝুঁকির আশংকা !

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২০, ৬:৩৯ পিএম

করোনা তাবৎ বিশে^র জন্য ভাইরাস নামক এক সুনামী তান্ডব। সুনামীা ব্যপ্তির সীমাবদ্ধতা থাকলেও করোনর ভয়াবহতা অনিশ্চিত, এখনো অপ্রতিরোধ্য। সেই অপরিরোধ্য অগ্নিরূপে সর্বগ্রাসী সংকটে আমজনতা। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সংকট জর্জরিত মানুষ। সরকারী বেসরকারী উদ্যোগে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা হয়েছে। করোন ভাইরাসের নতুনত্ব থাকল্ওে এ দূর্যোগে খাদ্য বিতরন হচ্ছে অতীত আদলে ও মানসিকতায়। কেবল মাত্র সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম ১ এপ্রিল জৈন্তাপুর থানা কমপ্লেক্সে সাহায্য প্রার্থীদের চেয়ার বসিয়ে বিতরন করেছেন পুলিশের কল্যান তহবিল থেকে খাদ্য সামগ্রি। তার এ শৃংখলিত ব্যতিক্রমী বন্টন প্রক্রিয়া সময়োপযোগী, সুরক্ষার বার্তা। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমিত জেন্ওে সাহায্যে বিতরনের নামে শুরু হয়েছে আতœঘাতি খেলা । 

সুজন সিলেট এর সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, করোনা থেকে রক্ষার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা জরুরী, প্রয়োজন হট লাইনের, হয়তো প্রয়োজন খাদ্য সংকটে পতিত কোন পরিবারের তরফ থেকে বার্তা প্রদান বা কোন নিশানা, সংকেত উচিয়ে রাখার ব্যবস্থা। সেই সংকেত অনুসরন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রি পৌছে দিবেন সুরক্ষিত কোন দল। যাদের মনিটরিং করবেন দায়িত্বশীল কোন বাহিনী। এর মধ্যে দিয়ে গৃহবন্দি থাকার মানসিকতা চাঙ্গা হবে, বন্টন প্রক্রিয়া হবে নিরপেক্ষ, সুরক্ষিত। অন্যথায় ভিলেজ পলিটিক্স ্ও ভোট রাজনীতির গ্যাড়াকলে পড়ে সরকারী বরাদ্দ অযাচিত ব্যবহার হবে। বঞ্চিত লোকজন করোনার প্রকোপের চেয়ে, পেটের জ¦ালায় হাকাকার করে ঘর থেকে বের হবে, একই সাথে সহায়তা বঞ্চনায় মনের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় জিডিটাল ব্যবস্থা গ্রহন জরুরী। কেননা খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতে ঘর থেকে বের হয়ে, মেম্বার, চেয়ারম্যান সহ স্থানীয় প্রভাবশীলীদের লবিং করছেন ভূক্তভোগীরা। গতানুগতিক এ অবস্থা রুখতেই হবে।
মাঠ চিত্র বিশ্লেষনে দেখা যাচ্ছে, সামাজিক দুরত্ব বা পারস্পিরিক দুরত্ব রক্ষার চেয়ে, নির্লিপ্তভাবে আরোপিত নিয়ম ভাঙ্গার প্রতিযোগিতায় করোনার আশংকা দেখা যাচ্ছে। ফটোসেশন ও দলবদ্ধ বিতরনের পুরাতন রেওয়াজে ছড়িয়ে পড়তে পারে করোনার ভয়াবহতা । ব্যক্তিগত নিসরাপত্তা বুমেরাং করে দিচ্ছেন বিতরণ কাজে জড়িত পদস্থ বা সাধারন উদ্যোক্তরা। সরকারী বরাদ্দ নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড সদস্যরা পুরাতন কায়দায় বিতরন করছেন নিজ নিজ এলাকায়। নির্বাচনী রাজনীতির উর্ধ্বে উঠার মানসিকতাও চাপিয়ে রাখতে পারছেন না তারা। করোনার সংক্রমন সর্তকতায় সমাজের মানুষের মধ্যে কোন বৈষম্য রাখেনি। ধনী-দরিদ্র সবাই এক কাতারে। আইনের লিখিত ভাষায় সকলের সমান অধিকার এতোদিন উপেক্ষিত থাকলেও, এখনকার বাস্তবতায় সকলেই এককাতারে। সীমিত গতিবিধি, নিয়মরক্ষায় সকলে এক ও অভিন্ন। খাদ্য সংকটে মধ্যবিত্ত ্ও নি¤œবৃত্ত মানুষের অবস্থা কাহিল। এদেও মধ্যে আতœমর্যাদাশীল মানুষের সংখ্যা বেহিসাব। তাদেও সেই আতœমর্যাদা রক্ষায় বিশেষ কোন পদ্ধতি নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে না। বিতরন কার্যক্রম নিরাপত্তর মধ্যে দিয়ে নিশ্চিত করার ব্যবস্থ্ওা নেই। নেই ্ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মধ্যে দিয়ে খাদ্য সংকট সমাধানের ব্যবস্থা। জনসমাগম এড়িয়ে চলার চলমান নিয়ম আরোপিত হল্ওে খাদ্য বিতরণে দেখা যাচ্ছে অরিক্ষিত দলবদ্ধতা। বিতরণ কাজে জড়িতদের মধ্যে ব্যবহার হচ্ছে না প্রায়ই মাস্ক বা গ্লাভস । পারস্পরিক দুরত্ব রক্ষার নিয়ম থাকলেও নিয়ম ভঙ্গ করা হচ্ছে সাহায্যে বিতরনের নামে । গ্রাম অঞ্চলে সাহয্যেও জন্য ফান্ড রাইজিং এর নামে দলবেঁধে এ দরজা ও দরজা দৌড়াচ্ছেন সাধারন পরিবেশের মতো উদ্যোক্তরা। তাদের এহেন গতিবিধির কারনে সাধারন মানুষ্ও গৃহবন্দি থাকার মানসিকতার ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটছে। উদ্যোক্তরা সমাজে রাজনীতিক বা প্রভাবশালী হিসেবে বিবেচিত, তারা নিজেই অরিক্ষিত হয়ে পুরানো মন মেজাজে চলাফেরা করছেন । সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য খাদ্য ফান্ড গড়ে তোলেছেন। সেই ফান্ড থেকে খাদ্য বিরতণ চিত্র দেখা গেছে অরিক্ষিত । এছাড়া সহায়তার জন্য স্থাণীয় কাউন্সিলর বা ইউনিয়র চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড সদ্যসরা তালিকা প্রস্তুত করেছেন। সেই তালিকায় তাদের পছন্দের লোকদের স্থান দিয়েছেন। ঘুরে ফিরে অতীতের মতো এবারও তারা সহায়তা গ্রহন করবে, হয়তো বারবার বরাদ্দ হল্ওে প্রকৃত সংকটাপন্নদের নাম উঠবে না তালিকায়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলার লোকজন সিলেট নগর ও বিভিন্ন্ উপজেলায় জীবিকার তাগিদে বসবাস করছে। তারা মুলত দিন মজুর, রিকসা, ভ্যান বা সিএনজি চালায়। করোনার এ পরিস্থিতিতে লোকজন বড় ধরনের সংকটে পড়েছে। কিন্ত বরাদ্দের তালিকায় তারা উপেক্ষিত হচ্ছে এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড সদস্যরা তাদের বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত করে কোন জবাবদিহীতায় পড়েন না। সেকারনে সহায়তা প্রদানে নেই কোন আগ্রহ। অথচ এ লোকগুলোই নিরূপায় হয়ে ঘর থেকে বাইর হচ্ছে অন্নের অভাবে। কারন পেটের ভাত, ঘর ভাড়া, কিস্তির ঋণ সবই তাদেও কাঁধে। সময়ের বিবেচনায় তাদের নাম সংযুক্তি হ্ওয়্ ্এাকান্ত হল্ওে, তারাই এখন বঞ্চিত হচ্ছেন।
সিলেটের উপজেলাগুলোতে ২১ টন চাল, নগর ১ লাখ ৪ হাজার করে অর্থ সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। উপজেলার অধীনে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর মধ্যে চাল ও অর্থ প্রদান করা হয়েছে। ওয়ার্ড সদস্যও চেয়ারম্যানদের মাধ্যমেই সেই বরাদ্দ বিতরন কার্যক্রম চলছে। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার নিবার্হী কর্মকতা মিন্ট চৌধুরী বলেন, বরাদ্দের চাল ্ও নগর অর্থ ইউনিয়নগুলোতে ভাগ করে প্রদান করা হয়েছে। স্থাণীয়ভাবে বন্টন কার্যক্রম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ্ওয়ার্ড সদস্যদের পরিচালিত হবে। গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ফয়ছল বলেন, ২ টন চাল, নগর ৪ হাজার টাকা পেয়েছেন। ১ কেজি কওে চাল প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে, সেই হিসেবে ২০০ টি পরিবারকে এ সহায়তা প্রদান করা যাবে। তবে বরাদ্দের চেয়ে বাস্তবিক চিত্র বেহিসাব। তিনি বলেন, প্রকৃতভাবে বন্টন প্রক্রিয়ায় নতুনত্ব রাখা হচ্ছে না, সেই সাথে নিরাপত্তা সুরক্ষায় কার্যত অনেকে অসচেতন। তিনি বলেন, চলমান দূর্যোগ মোকাবেলার জন্য বন্টন কার্যক্রম সুচারু ও নিরাপত্তা অটুটে উন্নত দুনিয়ার মতো ব্যবস্থঠ গ্রহন দরকার। এদিকে, জেলার প্রতিটি করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে ওসমানীনগরের মানুষ। এ দুর্যোগের সময় খাদ্য সংকটে ভোগছেন ওসমানীনগর উপজেলার ২০ সহস্রাধিক পরিবার। এখনো সরকারি ভাবে কোন খাদ্য সহায়তা না পৌঁছায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও দিনমজুর মানুষ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি ভাবে এলাকার প্রত্যেকটি পরিবারকে খাদ্য নিরাপত্তা প্রদানের সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এদিকে জেলার অন্যান্য উপজেলার মতো, প্রবাসী অধ্যূষিত ওসমানীনগর্ওে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দিনমুজর মানুষের মধ্যে এ পরিস্থিতি প্রকট। চলমান করোনাভাইরাসে প্রবাসীরাও আক্রান্ত হ্ওয়ায় বিদেশীদের প্রদত্ত মানবিক সাহায্যের দরজাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ২০ সহস্রাধিক খেটে খাওয়া মানুষের পরিস্থিতি এখন চরম পর্যায়ে রয়েছে। গোয়ারাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিক বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার দিনমজুরের কাজ করে জীবন নির্বাহ করেন। কিন্তু বর্তমানে ঘরে থাকায় এবং কাজকর্ম না থাকায় তারা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছেন। একই কথা বলেন উমরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া। তাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরান রব্বানী বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় আড়াই হাজার লোক রয়েছেন। দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ খুব কষ্টে আছেন। তারা সরকারের সহযোগিতার দিকে তাকিয়ে আছেন। ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান জানান, সরকারের পক্ষ থেকে হতদরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য ৩০ কেজি হারে চাল, সাথে ডাল এবং নগদ ৫ হাজার টাকা হারে দেওয়া হবে। প্রত্যেক পরিবারের ঘরে ঘরে সরকারি এই বরাদ্দ দ্রুততম সময়ে পৌঁছে দেওয়া হবে। ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে ২/৩ হাজার দিনমজুর পরিবার রয়েছে। মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তা দিতে সরকারের কাছে খাদ্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে প্রতিটি ইউনিয়নে ৪০ টি পরিবারের মধ্যে চাল, ডাল, আলু ও ভোজ্য তৈল বিতরণ করা হচ্ছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন